২০০ বছর ধরে কলার পাতায় খেয়ে ঈদ উদযাপন
বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ : কলার পাতায় ঈদের খাবার খাওয়ার ২০০ বছরের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে গোপালগঞ্জের সদর উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
ঈদের নামাজ শেষে এক সঙ্গে দল বেঁধে ঈদের খাবার খান তারা। এসব খাবার খান কলার পাতায় করে। ধনী বা দরিদ্র, যেই হোক না কেন সবাই মিশে যান একই স্রোতধারায়। এভাবে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ধরে রেখেছেন বছরের পর বছর।
সদর উপজেলার ভাটিয়াপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভাটিয়াপাড়া গ্রামের দু-চার ঘর বাদে সবাই মুন্সী বংশের। ঈদের দিন সকলে মিলে একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে বৃদ্ধ, যুবক, কিশোর বা শিশুরা দল বেঁধে বিভিন্ন বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে কলার পাতায় করে ঈদের খাবার খায়। একেক বাড়ি একেক ধরণের খাবার রান্না করে। এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত। প্রায় ২০০ বছর ধরে ভাটিয়াপাড়া গ্রামে এই রেওয়াজ চালু রয়েছে।
খাবার খাওয়ার সময় প্লেট, গ্লাস বা চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা থাকে না। মাটিতে বসে কিংবা হাতে হাতে কলার পাতায় সেমাই, মিষ্টি, পোলাও, মাংস খাওয়া হয়। এতে গ্রামের সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ববোধ তৈরি হয়।
এই গ্রামে ছোটখাটো সমস্যা হলে নিজেরা তা মিটিয়ে নেয়। তাই মামলা, মোকদ্দমা তেমন হয় না। আগামীতে এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে বলে জানালেন স্থানীয় মুরব্বিরা। গ্রামের মুন্সী তাইমুর ইসলাম জানান, ভাটিয়াপাড়া গ্রামে তিন শতাধিক পরিবার রয়েছে। তারা তাদের পূর্ব-পুরুষের যে রেওয়াজ, সেটি ধরে রেখেছেন। আগামী প্রজন্মও এই ধারা ধরে রাখবে।
মুন্সী দাউদ আলী জানান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঈদের নামাজ শেষ করে আশপাশের কয়েকটি বাড়ির খাবার একত্রিত করা হয়। এভাবে গ্রামের কয়েকটি স্থানে খাবার জড়ো করে দলে দলে লোকজন গিয়ে সেসব খাবার খেয়ে আসেন।
মুন্সী আইয়ুব আলী বলেন, ‘‘সকলে মিলে এক সঙ্গে খাবার খাওয়ায় সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ, সহনশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে কোনো ঘটনা ঘটুক না কেন, আমরা থানায় না গিয়ে নিজেরা মিটমাট করে ফেলি।’’
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, এটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এ ধরণের ব্যবস্থা যদি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে মানুষে মানুষে বিভেদ কমে আসবে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখায় ভাটিয়াপাড়া গ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/১৬ জুন ২০১৮/বাদল সাহা/বকুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন