ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫১ কোটি টাকা পাচারকারীদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা!

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ৭ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫১ কোটি টাকা পাচারকারীদের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা!

এম এ রহমান মাসুম : বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫১ কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত ৯ ব্যক্তির পরিচয় নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আটজন ব্যবসায়ী ও একজন প্রাক্তন আমলা যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫১ কোটি টাকা পাচার করছেন, এমন অভিযোগে প্রায় এক বছর আগে পৃথকভাবে অনুসন্ধানে নামে রাষ্ট্রীয় ওই দুটি সংস্থা। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এনবিআর ও প্রাক্তন আমলার বিরুদ্ধে দুদক থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

এর মধ্যে এনবিআর থেকে কয়েকজন ব্যবসায়ীদের নাম ও পরিচয় পাওয়া গেলেও সুনির্দিষ্ট করতে পারেনি কতজন প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশি ও আর কতজন যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব পাওয়া বাংলাদেশি। ফলে আসলেই অর্থ পাচার হয়েছে কি না তার সঠিক তথ্য উদঘাটিত হয়নি এখনো।

অন্যদিকে, প্রাক্তন আমলার বিষয়ে দুদক থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হলেও নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এনবিআর থেকেও সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য দিতে পারেনি ওই প্রাক্তন আমলা আসলেই জড়িত কি না। যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দুদককে জানিয়েছে তাদের জানা মতে পাচারকারী হিসেবে কোনো প্রাক্তন আমলার নাম নেই। তবে অনুসন্ধান এখনো চলমান।

এ বিষয়ে দুদক ও এনবিআরের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, দুদক এখনো পাচারকারী হিসেবে প্রাক্তন কোনো আমলার হদিস পায়নি, এমন তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন জমা দিলে কমিশন থেকে অধিকতর যাচাই-বাছাই করার পরামর্শ দেওয়া হয়। অন্যদিকে এনবিআর ব্যবসায়ীদের পরিচয় নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত তথ্য নিয়ে এগিয়ে গেলেও পাচারকৃত অর্থ প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে কি না তার যথাযথ প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। ফলে দুটি সংস্থারই অনুসন্ধানকাজ অনেক স্থবির বলা যায়।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অনুসন্ধানাধীন বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিয়ে রাজি হননি। তবে রাইজিংবিডিকে বলেছেন, অনুসন্ধান শেষে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে জানানো হবে।

দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ৯ ব্যক্তির মধ্যে একজন প্রাক্তন আমলা রয়েছেন, এমন অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক এস এম এম আখতার হামিদ ভূঞার নেতৃত্বে দুই সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। দলের অপর অপর সদস্য হলেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামনুর রশীদ চৌধুরী। আর তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীকে।

অন্যদিকে, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান পরিচালনা করছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)।

অভিযোগের বিষয়ে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং চ্যানেল এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে ৪৫১ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। চিহ্নিত অর্থপাচারকারীদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি ঢাকায়, দুজনের বাড়ি চট্টগ্রামে, একজনের বগুড়ায় এবং একজনের বাগেরহাটে। ওই ব্যক্তিরা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করে থাকেন। তবে বছরের বেশিরভাগ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে থাকেন। একজন বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ব্যবসা করেন। একজনের যুক্তরাষ্ট্রে হোটেলের ব্যবসা আছে। দুজন তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেন। একজন জাহাজ ভাঙার ব্যবসায় জড়িত। দুবাই ও বাংলাদেশে ব্যবসা করছেন তিনজন। অর্থপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত প্রাক্তন আমলা বিভিন্ন সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন। রাজধানীতে তার একাধিক বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে।

এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক এবং স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বিস্তারিত তদন্ত শেষে ওই ৯ ব্যক্তির অর্থপাচারের বিষয়টি নিশ্চিত হয় এনবিআর। ওই অর্থ ফেরত আনতে যে তিনটি মার্কিন ল ফার্মের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, সেগুলো হলো— কাপলান, কেনেগক্স ও কেডিন। চিহ্নিত ৯ জনই পাচারকৃত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে আবাসন খাতে ব্যয় করেছেন বলে তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা। তাদের প্রত্যেকের পরিবারের একাধিক সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। তদন্তকালে দেশে-বিদেশে তাদের সম্পদের উৎস জানতে চাওয়া হলে তারা সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। ওই ৯ ব্যক্তির মধ্যে দুজনের নামে বাংলাদেশেও মামলা রয়েছে বলেও জানা যায়।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জুলাই ২০১৮/এম এ রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়