ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বাকশক্তি হারানো নজরুল

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ৯ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ১৫:৫৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০
বাকশক্তি হারানো নজরুল

শাহ মতিন টিপু: আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাকশক্তি হারিয়েছিলেন প্রয়াণের অনেক আগেই। ফ্যালফ্যাল চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা তার।

১৯৪২ সালের ৯ জুলাই হঠাৎ দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত কবি একেবারেই বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। প্রয়াত হন তারও ৩৪ বছর পর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় কবি নজরুল ইসলামের।

অন্যদিকে বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী নজরুল জন্মের ৪৩ বছর পর বাকশক্তি হারান। ১৮৯৯ সালের ২৪ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তার জন্ম।

বাংলা ভাষার কবিতাপ্রেমিদের প্রেমের কবি, চির যৌবনের কবি, বিদ্রোহী কবি জীবনের দীর্ঘ সময়ই মূক থাকার যন্ত্রণাভার বহন করেছিলেন।

বলা হয়, তিনি পিক্‌স ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।

অসুস্থ হওয়ার পর নজরুল পরিবার ভারতে নিভৃত সময় কাটাতে থাকেন। ১৯৫২ সালে কবি ও কবিপত্নীকে রাঁচির এক মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। কবি চার মাস রাঁচিতে ছিলেন।

১৯৫৩ সালের মে মাসে নজরুল ও প্রমীলা দেবীকে লন্ডন পাঠানো হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। নানা পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণে নিশ্চিত হয় যে, কবি পিক্‌স ডিজিজ নামক একটি নিউরনঘটিত সমস্যায় ভুগছেন। এই রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল ও পার্শ্বীয় লোব সঙ্কুচিত হয়ে যায়। যার আরোগ্য অসম্ভব।

ছেলেবেলায় পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ‘দুখু মিয়া’ নামে। পিতৃহীন কবি একে একে হারিয়েছেন কাছের স্বজনদের। আর্থিক অসচ্ছলতাও তার জীবনকে কঠিন করে তুলেছিল। সব বাধা অতিক্রম করে একসময় তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা হয়ে ওঠেন। সাম্য ও মানবতার চেতনায় সমৃদ্ধ ছিল তার লেখনী। কবিতায় বিদ্রোহী সুরের জন্য হয়ে ওঠেন ‘বিদ্রোহী কবি’।

১৯১৭ সালের শেষ দিকে স্কুল ছেড়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন নজরুল। ১৯২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছর চলে তার সেই সামরিক জীবন।

১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় নজরুলের বিখ্যাত কবিতা 'বিদ্রোহী'। ব্রিটিশ রাজের ভিত কেঁপে উঠেছিল তার অগ্নিগর্ভ কবিতার বজ্রনির্ঘোষে। ব্রিটিশবিরোধী লেখার জন্য বেশ কয়েকবার কারারুদ্ধ হতে হয় তাকে।

সৈনিক জীবনের সমাপ্তির পর নজরুলের সঙ্গে পরিচয় ঘটে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজাফফর আহমদ এর সঙ্গে। সে সময় তিনি সাপ্তাহিক লাঙ্গল, গণবাণী, ধূমকেতু, সওগাত ও সান্ধ্য দৈনিক নবযুগ পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত হন।

নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

স্বাধীনতার পরপরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসুস্থ কবিকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। নজরুল হন বাংলাদেশের জাতীয় কবি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জুলাই ২০১৮/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়