ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সৌরবিদ্যুতে আলোকিত চরের মানুষ

অদিত্য রাসেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সৌরবিদ্যুতে আলোকিত চরের মানুষ

রূপসা গ্রামে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা : সৌরবিদ্যুৎ-মিনিগ্রিড স্থাপনের মাধ্যমে আলোকিত হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ যমুনা নদীর চরাঞ্চলের গ্রাম রূপসা।

সৌরবিদ্যুৎ পেয়ে রূপসা গ্রামের ঘরে ঘরে এখন আনন্দ। প্রত্যেকের ঘরেই রয়েছে টেলিভিশন, ফ্রিজ ও অন্যান্য ইলেক্টনিক্স সামগ্রী। এ গ্রামের মানুষ এক বছর আগেও বিদ্যুতের অভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারতো না। আর এখন প্রত্যেকের হাতে হাতে মোবাইল ফোন।

ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বছরের পর বছর এ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল জেনারেটর। এখন রূপসা গ্রামের মানুষ জেনারেটরের পরিবর্তে স্বল্পখরচে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যবসায় অনেক লাভবান হচ্ছেন।

এলাকাটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হলেও রয়েছে স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রয়েছে পাকা রাস্তাও। তবে সে রাস্তায় ছিল না কোনো বাহন। পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করতে হতো। কিন্তু সৌরবিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার পর সেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে শুরু করেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

গত ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারের মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল) পাঁচ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সৌরবিদ্যুৎ-মিনিগ্রিড চালু করে।

প্রতিদিন এ প্রকল্প থেকে ১৩০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। আর এই বিদ্যুতেই আলোকিত হয়েছে চরের মানুষ। সোলারগাঁও লিমিটেড নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এক একর জায়গার উপর স্থাপন করেছে সোলার মিনিগ্রিড।

এখান থেকে নয় কিলোমিটার সংযোগ লাইনও বসানো হয়েছে। এ লাইন থেকেই এক বছরে ৪৭৪ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ৩১০ জন আবাসিক এবং ১৬৪ জন বাণিজ্যিক গ্রাহক রয়েছে।

রূপসা গ্রামের গৃহবধূ সোনিয়া আক্তার জানান, আগে সন্ধ্যার পরই চরের মানুষ ঘুমিয়ে পড়তো। এখন তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে সব কাজকর্ম শেষ করে টেলিভিশন দেখে সময় কাটিয়ে যখন ইচ্ছে তখন ঘুমাচ্ছেন। ছেলে-মেয়েরাও বিদ্যুতের আলোতে লেখাপড়া করতে পারছে।

বিদ্যুতের কারণে পাল্টে গেছে রূপসা গ্রামের বাজারটিও। হায়দার আলী নামের একজন ব্যবসায়ী জানান, আগে জেনারেটরে কাজ করতে অনেক ঝামেলা হতো। এখন বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে ঝামেলা ছাড়াই দিন রাত কাজ করছেন তিনি। আগের তুলনায় প্রতিমাসে খরচও কম হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সোলারগাঁও লিমিটেডের প্ল্যান্ট প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, প্রতি গ্রাহককে সংযোগ নিতে আড়াই হাজার টাকা করে জমা দিতে হয়। লাইন থেকে ৬৫ ফুট পর্যন্ত সংযোগ তার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২০ টাকা। তবে এটি ১০ টাকা বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হবে।

তিনি আরো জানান, সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্পে ৫০ ভাগ ভর্তুকি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)।

১০ বছর মেয়াদী ছয় পার্সেন্ট সুদে ৩০ ভাগ ঋণ দিয়েছে তারা (ইডকল)। বাকি ২০ ভাগ বিনিয়োগ করেছে সোলারগাঁও।

মেছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ গত এক বছর আগেও বিচ্ছিন্ন এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন বিদ্যুৎ আসায় এ এলাকার মানুষের অনেক উপকার হয়েছে।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ মালিক জানান, তারা দেশের এরকম ২৭টি প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। যার মধ্যে ১৭টি চালু হয়েছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন।



রাইজিংবিডি/সিরাজগঞ্জ/১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮/অদিত্য রাসেল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়