ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘জ্বালানি তেল পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে’

হাসিবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৩, ৯ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘জ্বালানি তেল পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, স্বল্প সময়ে ও ব্যয়সাশ্রয়ী উপায়ে জ্বালানি তেল পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে।

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক শেষে সাংবাদিকদেরকে ব্রিফ করার সময় পরিকল্পনামন্ত্রী এ কথা বলেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম পণ্যের বর্তমান বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫৮ লাখ মেট্রিক টন। দেশে বিদ্যমান গ্যাস সংকটের ফলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। ২০২১ সালের পর দেশের পুরাতন বিভিন্ন গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলন কমতে থাকবে। দেশে আর কোনো নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হলে পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ঢাকা এবং আশপাশের এলাকায় জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। যা ঢাকার গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোগুলোর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। চাঁদপুরে অবস্থিত তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর তিনটি ডিপোতে জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। চট্টগ্রামস্থ প্রধান স্থাপনা থেকে কোস্টাল ট্যাংকার যোগে বর্তমানে গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়। এছাড়া, ঢাকায় অবস্থিত বিপণন কোম্পানিগুলোর গোদনাইল ফতুল্লা ডিপো থেকে শ্যালো ড্রাফট ট্যাংকার যোগে উত্তরবঙ্গে অবস্থিত বাঘাবাড়ি, চিলমারী ও সাচনা বাজার ডিপোতে জ্বালানি তেল পাঠানো যায়।

মন্ত্রী বলেন, এই ডিপোগুলোর বর্তমান বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। বিদ্যমান পরিবহন ব্যবস্থায় ট্যাংকার যোগে এ বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল যথাসময়ে চট্টগ্রাম থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহনে সরকারকে বিপুল পরিবহন খরচ এবং পরিবহন ঘাটতি বহন করতে হবে। পাশাপাশি নদী পথে ট্যাংকার যোগে জ্বালানি তেল পরিবহনে পরিবেশগত প্রভাবও রয়েছে।

ভবিষ্যত চাহিদার কথা বিবেচনা করে আধুনিক পদ্ধতিতে দ্রুততার সঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা, পরিবহন সময় ও পরিবহন ঘাটতি কমানোর জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে তেল সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ শীর্ষক প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে স্বল্প সময়ে ও ব্যয়সাশ্রয়ী উপায়ে জ্বালানি তেল পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। এছাড়া, প্রতিকূল পরিবেশেও চাঁদপুর ঢাকা ও দেশের উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে হবে।

প্রকল্পটিতে খরচ হবে ২ হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)।

মন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমানে জলপথে প্রায় ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয় এবং এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর পরিবহনে বছরে প্রায় ২০০টি কোস্টাল ট্যাংকার নিয়োজিত রয়েছে। ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে কোস্টাল ট্যাংকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, যা চট্টগ্রামস্থ প্রধান স্থাপনায় বিদ্যমান লোডিং-আনলোডিং এবং চাঁদপুর, গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে লোডিং-আনলোডিং অবকাঠামো দ্বারা পরিচালন কার্যক্রম গ্রহণ করা দুরুহ হয়ে পড়বে। অন্যদিকে, দিন দিন নদীগুলোর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। তাই কোস্টাল ট্যাংকার চলাচলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তেল পরিবহন সম্ভবপর হবে না। পাইপলাইনের মাধ্যমে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য পরিবহণ সহজতর, নির্বিঘ্ন, সময়সাশ্রয়ী, কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং পরিবেশবান্ধব হবে। এতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশেও জ্বালানি তেল সরবরাহ সম্ভব হবে। সার্বিকভাবে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

আজকের একনেক সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প, জরুরি সহায়তা প্রকল্প বিআরবি অংশ (কক্সবাজার আশ্রয় গ্রহণকারী বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য বিদ্যুতায়ন) প্রকল্প, রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আরসিআইপি) প্রকল্প, বাংলাদেশ ইমারজেন্সি অ্যাসিসটেন্স (এলইডি অংশ) প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প, কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলায় নির্মিতব্য মিঠামইন সেনা উপস্থাপনার ভূমি সমতল উঁচুকরণ, ওয়েভ প্রটেকশন ও তীর প্রতিরক্ষা কাজ প্রকল্প, চট্টগ্রাম জেলাধীন রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলা এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলায় কর্ণফুলি ও ইছামতি নদী এবং শিলক খালসহ অন্যান্য খালের উভয় তীরের ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প, রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া ও রংপুর সদর উপজেলায় তিস্তা নদীর ডান তীর ভাঙন হতে রক্ষা প্রকল্প, ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট (বাংলাদেশ) প্রকল্প, গোবিন্দগঞ্জ-ঘোড়াঘাট–বিরামপুর-ফুলবাড়ী-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্প, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক (এন-১) উন্নয়ন প্রকল্প, খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্প, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি (সংশোধিত ৪৬টি) উপজেলা সদর স্থানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন প্রকল্প, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, শহীদ এম এনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্প, ১২টি ক্যাডেট কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধাদি সম্প্রসারণ প্রকল্প, পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলা) প্রকল্প খরচ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫ নং গুদারাঘাটের নিকট শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদমরসুল ব্রিজ নির্মাণ প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক কাম বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন প্রকল্প।

আজকের একনেকে মোট ২০টি (নতুন ও সংশোধিত) প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৫২৪ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১১ হাজার ৬৫৬ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ অক্টোবর ২০১৮/হাসিবুল/রফিক  

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়