ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সাতক্ষীরা পৌরসভায় পানির হাহাকার!

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২০ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাতক্ষীরা পৌরসভায় পানির হাহাকার!

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: পানির অপর নাম জীবন। অবশ্যই তা ব্যাবহারযোগ্য ও সুপেয় পানি। সেই পানি সঙ্কটে পড়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার দেড় লক্ষাধিক মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়ায়, আবার সরবরাহকৃত পানি নোংরা হওয়ায় চরম দুর্ভোগে আছেন সাতক্ষীরার এই পৌর বাসিন্দারা। এ পানি পান করে তারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, শহর উপকণ্ঠের বাটকেখালির ওই পানির প্লান্ট চালু হলে স্থায়ীভাবে নিরসন হবে পানি সংকটের। কিন্তু সেই চালুর অপেক্ষা যে আর শেষ হচ্ছেনা।

সাতক্ষীরা শহরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় এসে শহরের বাটকেখালি এলাকায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃহৎ একটি পানির প্রকল্প উদ্বোধন করেন। যা ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অদ্যাবধিও শেষ হয়নি। বরং এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নেও উঠেছে নানা টালবাহানার অভিযোগ।

সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকীন আহম্মেদ চিশতী জানান, ৬হাজার নগরবাসির কাছে পানির বকেয়া বিল আদায়ে রিমান্ডার দেওয়ার পরও সেটি ধীর গতিতে আদায় প্রক্রিয়া অব্যহত আছে। পাশাপাশি বাটকেখালির নতুন পানির প্লান্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও পরীক্ষামূলক পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। ফলে এখন ৮০ ভাগ মানুষ তাদের চাহিদামত পানি পাচ্ছেন।

পৌরসভার পানি বিভাগের কর্মকর্তা সেলিম সারোয়ার জানান, পৌর এলাকায় পানির মোট গ্রাহক ৯ হাজার ৩৬১জন। এরমধ্যে মিটারসহ গ্রাহক ৪ হাজার ২৪জন। মিটার ছাড়াই সরাসরি লাইনের গ্রাহক ৫ হাজার ৩৭৭জন। চাহিদার বিপরিতে পৌর শহরে দৈনিক পানির চাহিদা ১লাখ ৩০ হাজার লিটারের বিপরিতে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ৮৫ হাজার লিটার।

তিনি জানান, বর্তমানে পৌরবাসির কাছে পানির বিল বকেয়া রয়েছে ১কোটি টাকার উর্ধ্বে।

পৌরসভার পানি বিভাগের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম জানান, পানি যাক আর না যাক বাসায় মিটার সংযোগ থাকলে তাকে বিল দেওয়া লাগবে। নইলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। তবে মোট গ্রাহকের ২৫ ভাগ ঠিকমত পানি না পাওয়ার কথা স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা।

শহরের আট পুকুর এলাকার একটি বাসা বাড়ির মালিক আব্দুর রহমান জানান, প্রায় ১০ বছরের অধিক সময় আমি এখানে বাড়ি করেছি। সেখানে পানির মিটার সংযোগ নেওয়া আছে এবং প্রতি মাসে বিল দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু পৌরসভার পানি পাইনা। ফলে নিজস্ব মোটরে পানি তুলতে হয় এতে বিদ্যুত খরচ বেড়েই যাচ্ছে।

শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি এনডিসির নামে ১লাখ ৪১হাজার ৭০০টাকা, সুলতানপুরের আসাদুল হকের বাসায় ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১০ টাকা ও আবু বক্কর সিদ্দিকের বাসায় ৩৫ হাজার ৪৯০ টাকা, ইটাগাছা হাটের মোড় এলাকার আব্দুস সবুরের স্ত্রী হোসনে আরা বেগমের নামে ৪৬ হাজার ৬০০ টাকা, সরকারি কলেজে ১ লাখ টাকা- কয়েকটি বকেয়া বিলের হিসাব দিয়ে পৌরসভার পানি বিভাগের হিসাব সহকারি জহুরুল হক জানান, মাত্র ৫/৬টি পানির মিটারে এই পরিমান বিল বকেয়া থাকলে আরও তো আছে। ফলে নানা কারণে পৌরসভা জনগনের চাহিদামত পানি সরবরাহ করতে কষ্টের মধ্যে পড়ছে, তেমনি আর্থিক সংকটও লেগে আছে।

তবে বর্তমানে জেলা শহরের বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠির পানির চাহিদা মিটছে নানা পন্থায়। বর্তমানে জেলায় ২০টির অধিক জার পানির কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানির মধ্যে বিএসটিআই অনুমোদিত আছে মাত্র ৩টি। বাকিরা চলছে সব হাওয়ার উপরে। সরকার অনুমোদিত ছাড়াই এসব পানির কোম্পানি গুলো কতটা স্বচ্ছ পানি সরবরাহ করছে তা নিয়ে রয়েছে উদ্বেগ।

সাতক্ষীরা জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, পৌরসভার মধ্যে আর্সেনিকমুক্ত টিউবঅয়েল রয়েছে ৬৪৮টি। এর কিছু নষ্ট থাকতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে বসানো টিউবঅয়েল এই হিসাবের বাইরে।

তিনি জানান, বাটকেখালির নতুন পানির প্লান্ট পানি উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে। অতি শিঘ্রই স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন পানির প্লান্টটি উদ্বোধন করবেন। এখান থেকে প্রতি ১০ঘন্টায় সাড়ে ৩৫ লাখ লিটার পানি সরবরাহ সম্ভব হবে। এরপর পৌরবাসির মধ্যে পানির কোন সমস্যা থাকবে না।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/সাতক্ষীরা/২০ অক্টোবর ২০১৮/এম.শাহীন গোলদার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়