ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী অর্জনে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিক্ষাক্ষেত্রে যুগান্তকারী অর্জনে সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ

আবু বকর ইয়ামিন : সরকারের গণমুখী কার্যক্রমের ফলে বিভিন্ন খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনে এখন সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ। স্কুলে ভর্তির হার শতভাগ, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক, ইউনেস্কো, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক দাতা ও গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষার অগ্রগতিকে অন্যদের জন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করছে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। বৃহস্পতিবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা শপথ নিয়েছেন। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে গঠিত হবে সরকারের নতুন মন্ত্রিপরিষদ। এতে কারা স্থান পাচ্ছেন নির্ভর করবে তার অর্জনের ওপর। তাই পুরনোদের মধ্য থেকে বাদ পড়বেন কেউ কেউ। আবার নতুনরা সুযোগ পাবেন বলে জানা গেছে।

সরকারের ভাবমূর্তি দেশের শিক্ষার হালচালের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে গত এক দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে কিছু অর্জন বিশ্বের বহু দেশের কাছে অনুকরণীয়। তাই এবারো মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

শিক্ষায় সরকারের অন্যতম সাফল্য জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন করা। এটির বাস্তবায়ন চলছে। প্রতি বছর কোটি কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে, যা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। প্রতিবছর ১ জানুয়ারিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি স্কুল-মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠ্যবই পৌঁছে যাচ্ছে। পালিত হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস। আগে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের জন্য কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হত। ২/৩ মাসের আগে ক্লাশ শুরু করা সম্ভব হতো না। এখন শিক্ষাব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। ১ জানুয়ারি ক্লাশ শুরু হচ্ছে। বাড়ছে উপস্থিতি, ঝরে পড়ার হার কমে গেছে।

শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কাজ অনলাইনে ঘরে বসেই সম্ভব হচ্ছে। ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষা ফি, পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে হয়ে যাচ্ছে। এতে জনগণের আর্থিক অপচয় ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা রোধ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বোচ্চ।

২০১০ থেকে ২০১৯ এই ১০ বছরে ২৯৬ কোটি ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৭২টি বই বিতরণ করেছে সরকার। এই বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার শিক্ষার্থীর হাতে এবার ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিয়েছে। উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়তে জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিনির্ভর কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার।

সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার উন্নয়নের বড় কারণ কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন। সিঙ্গাপুরে এ শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ ও মালয়েশিয়ায় ৪০ শতাংশ। যুক্তরাজ্য, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ইন্দোনেশিয়ায় কারিগরি শিক্ষার হার ১৭ থেকে ৫৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতের হার ছিল ১ শতাংশেরও কম। গত ১০ বছরে কারিগরি শিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষার হার ২০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার। প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। শিক্ষকদের কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

পিছিয়ে পড়া মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন করেছে বর্তমান সরকার। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাদরাসা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ শিক্ষায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। সাধারণ বিষয়ের মতো তথ্য ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান বিষয় চালু করা হয়েছে। কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। মাদরাসার উন্নয়নের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় এনে বিশ্বমানের শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দেশে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে মাদরাসা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওলামা-একরাম, পীর-মাশায়েখ, এ দেশের ইসলামি চিন্তাবিদ, মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ৮০ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। এসব সম্ভব হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সততা, দক্ষতা, কর্মঠ, একনিষ্ঠতায়।

তথ্য ও প্রযুক্তির যুগে এই বিষয়ে পারদর্শী তরুণ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে বাধ্যতামূলকভাবে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়কে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কয়েক বছর আগেও গ্রামের শিক্ষার্থীরা ল্যাপটপ বা কম্পিউটার সম্পর্কে জানত না। এখন প্রায় প্রতিটি স্কুলে রয়েছে এ যন্ত্র। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশের ২৩ হাজার ৩০০টি স্কুল-কলেজ-মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া উপকরণ বিতরণ শুরু হয়েছে। ‘তথ্য প্রযুক্তি’ নতুন বিষয় হিসেবে মাধ্যমিক পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

উচ্চশিক্ষা প্রসারে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে দেশে ৪৪টি সরকারি ও শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সবার জন্য সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত একসঙ্গে ৩০ হাজার প্রাথমিক স্কুল সরকারিকরণ করা হয়েছে। মানসম্মত মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিতে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে স্কুল ও কলেজ সরকারিকরণ করেছে সরকার। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বর্তমান বেতন স্কেলে বেতন প্রদান ছাড়াও বৈশাখী ভাতা ও ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে নানা অর্জনের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আবারো পেতে পারেন বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমনটাই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জানুয়ারি ২০১৯/ইয়ামিন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়