ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাচ্ছে কৌশলের খেলা ‘কোবাকুবি’

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ৭ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাচ্ছে কৌশলের খেলা ‘কোবাকুবি’

জুনাইদ আল হাবিব : পর্যাপ্ত খেলার মাঠ না থাকায় শহরের বেশিরভাগ শিশু ঘরবন্দি। এসব শিশুরা বড় হচ্ছে স্মার্টফোন, অনলাইন অন্যান্য যন্ত্রনির্ভর খেলা খেলে।

ঠিক এর বিপরীত চিত্র চোখে পড়ে গ্রামের শিশুদের জীবনে। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে হইচই করে খেলার পরিবেশ গ্রামে। এ শিশুরা মুক্ত আঙ্গিনায় খেলাধুলা করে। কুতকুত, কানামাছি, মার্বেল, মরিচ মরিচ, দারিয়াবান্দা, গোল্লাছুট। এ ধরনের খেলায় মেতে ওঠে গ্রামের শিশুরা। বছরজুড়ে কোনো না কোনো খেলা খেলতে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় না ওদের। আমন ধান উঠে গেলে গ্রামের কাদামাখা মাঠে ঠিক ভিন্ন এক খেলা খেলার দৃশ্য চোখে পড়ে। বলছিলাম, ওদের ভাষায় ‘কোবাকুবি’ নামে একটি খেলার কথা।

 



গাছের ডাল কেটে এক কোণকে একটু তীরের মতো চিকন করে ওরা। দুজন হলেই খেলাটি শুরু করা সম্ভব। কখনো কখনো ওদের খেলা বেশ জমে ওঠে। তখন দশজনের ওপরে অংশগ্রহণকারী থাকে। একজনের কাঠিকে আরেকজন আঘাত করে মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে শোয়াতে পারলেই সে বিজয়ী। এর বিনিময়ে বিজয়ীজন পরাজিত জনের কাঠিকে নিজে জিতে নেন। এভাবে খেলা চলে ধুমধাম। যার কাঠি যত মজবুত এবং সূচালো, তার জেতার সম্ভাবনা অনেক নিশ্চিত। অবশ্য এ খেলাকে একটা কৌশলের খেলা বলা চলে। এতে শিশুদের বুদ্ধি ও মেধাশক্তির বিকাশ ঘটে। কিভাবে জিততে হয়, সে কৌশলটা শেখা যায়।

মেঘনাতীরের উপকূলীয় জনপদ লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর মার্টিন। গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটলে মেঠোপথের পাশের ধান ক্ষেতে শিশুদের এমন খেলা চোখে পড়ে। বছরের অন্য সময়ে এসব শিশুরা মার্বেল, টোসটোস কিংবা ভিন্ন কোনো খেলায় মেতে থাকতো। এখন অবশ্য শুষ্ক মৌসুম হওয়াতে কাঁচামাটিতে এ খেলা তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় একটি খেলা হয়ে ওঠেছে।

 



হান্নান, জুয়েল, শাকিব, খুরশিদ, রাসেল, রানা। কোবাকুবি খেলে বেশ আনন্দময় সময় পার করছে ওরা। ওদের খেলা চলছে। এর ফাঁকেই ওদের সঙ্গে গল্পের সখ্যতা শুরু হলো। তারা বললো, ‘প্রত্যেক বছর আমরা কোবাকুবি খেলি। অপেক্ষা করি কখন ক্ষেতের পানি শুকাবে। কখন ধান কাটা শেষ হবে। ধান কাটা, পানি শুকাতে দেরি, আমাদের খেলা শুরু হতে দেরি নাই। কিন্তু সমস্যা হলো এই ক্ষেতগুলোতে চাষাবাদ করবে। তাই বেশি দিন খেলতে পারবো না আমরা। তবে এই খেলাটা খুব ভালো লাগে খেলতে।’

গ্রাম্য পরিবেশে শিশুদের এসব খেলাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। অ আ ক খ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ডা. নাজমুল ইসলাম মনে করেন, প্রকৃতির মাঝে এসব খেলাই আসলে প্রকৃত খেলাধুলা। শহরাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা এসব খেলাধুলা না খেলে বেড়ে ওঠার কারণে তারা বাস্তব জীবনের সঙ্গে নিজেদের খাপখাইয়ে নিতে পারছে না। মানসিক ও শারিরীক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তাদের ভবিষ্যত অনেক ঝুঁকিতে থাকে। শিশুদের বেড়ে ওঠা একেবারে যন্ত্র নির্ভর হলে চলে না। গ্রামের এসব খেলাধুলার আরো প্রসার ঘটিয়ে শিশুদের উন্নয়ন করা সম্ভব।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়