ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রোজাদারদের জন্য স্বাস্থ্য পরামর্শ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৭ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোজাদারদের জন্য স্বাস্থ্য পরামর্শ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : রমজান মাস হলো বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। পৃথিবীর কোনো সম্পদের সঙ্গে এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। রমজানের আগমনে প্রকৃত মুমিনের অন্তরে প্রফুল্লতার ধারা বইতে শুরু করে। পবিত্র এ মাসে মুসলিমরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের দৈর্ঘ্যের মধ্যে সমস্ত রকম পানাহার ও যৌনক্রিয়াদি থেকে বিরত থাকেন। এটাকে বলা হয় সিয়াম বা রোজা পালন। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হলো সিয়াম পালন। কিন্তু সিয়াম সাধনার এ মাসে খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম না মানলে অথবা জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন না আনলে অসুস্থ হওয়া কিংবা ইবাদাতে বিঘ্ন ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ প্রতিবেদনে রমজানের বরকতময় দিনগুলোতে রোজাদারদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো।

* রমজানের একটি প্রচলিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস হলো খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা। প্রথমে দুটো খেজুর খেয়ে এক গ্লাস পানি বা শরবত পান করুন। তারপর কুসুম গরম স্যূপ, সালাদ ও ইফতারের প্রধান আইটেমটি খেয়ে নিন। অবশ্য মনে রাখবেন যে পরিমিত ভোজন হলো স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।

* কুসুম গরম স্যূপ দিয়ে ইফতার শুরু করলে দীর্ঘসময় উপবাসে থাকা পাকস্থলি তৃপ্ত হতে পারে, স্যূপের তরলে শরীর পুনরুজ্জীবিত হয় এবং ইফতারের প্রধান আইটেম খাওয়ার জন্য পরিপাকতন্ত্র প্রস্তুত হয়।

* ইফতারের ভারসাম্যপূর্ণ প্রধান ডিশের মধ্যে ভাত, পাস্তা, আলু বা বুরগুলের মতো কার্বোহাইড্রেট উৎস এবং গরুর মাংস, মুরগির মাংস বা মাছের মতো কিছু প্রোটিন উৎস থাকা উচিত। এছাড়া রান্না করা শাকসবজি তো থাকবেই। ভারসাম্যপূর্ণ পরিমিত ভোজনে স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।

* পবিত্র রমজান মাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে ভুলবেন না। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন।

* অত্যধিক মসলাদার বা লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন এবং বেশি করে তাজা ফল ও শাকসবজি খান।

* কিছু লোক রমজান মাসে অলস হয়ে পড়ে। কিন্তু অতিরিক্ত ক্যালরি পোড়াতে আপনাকে সক্রিয় হতে হবে। প্রতিদিন হাঁটুন, বিশেষ করে ইফতারের পর কিছু সময় হাঁটুন। এ অভ্যাস খাবার হজমে সাহায্য করে।

* কিছু লোক রমজানে অতিভোজন করে থাকে, যা ওজন বাড়াতে পারে। ইফতারের সকল খাবার যেন স্বাস্থ্যকর হয় সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। ভারী খাবার অথবা ইফতারের প্রধান আইটেম খাওয়ার পূর্বে অল্প মিষ্টান্ন (যেমন- খেজুর) ও হালকা খাবার বা স্যূপের মতো তরল জাতীয় খাবার খান। ইফতারের তালিকায় বেশি করে ফল ও শাকসবজি রাখুন। কৃত্রিম মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলুন। প্রতিদিন সক্রিয় থাকুন। এসবকিছু আপনাকে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।

* রমজানে সেহরিতে খাবার খাওয়া অত্যাবশ্যক। এ খাবার দিনে প্রাণশক্তি যোগায় এবং রোজাকে সহজ ও সহনীয় করে। নিশ্চিত হোন যে সেহরির খাবার তালিকায় ধীর শোষণের কার্বোহাইড্রেট রয়েছে, যেমন- হোল গ্রেন ব্রেড, ভাত ও হোল গ্রেন সিরিয়াল। ধীর শোষণের কার্বোহাইড্রেট রক্ত শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

* যেহেতু ভালো স্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ প্রয়োজন, তাই রমজানে প্রচুর পরিমাণে তাজা ফল ও শাকসবজি খান এবং আপনার স্যূপে বিভিন্ন ধরনের সবজি অন্তর্ভুক্ত করুন।

* নিম্ন রক্ত শর্করা মাত্রার কারণে যেসব লোকের মাথাব্যথা করে অথবা মাথা ঘোরে, তাদের ইফতারে ২-৩টি খেজুর খেয়ে উপবাস ভাঙা উচিত। কারণ খেজুর রক্ত শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করতে পারে।

* ইফতারে ধীরে ধীরে স্যূপ ও সালাদ খেলে পেট ভরা অনুভূতি হবে, যার ফলে প্রধান ডিশ খাওয়ার সময় অতিভোজনের প্রবণতা রোধ হবে- যা আপনাকে স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

* রমজানে লোভনীয় সুস্বাদু মিষ্টান্ন খাওয়ার প্রবণতা দমন করা কঠিন। অত্যধিক ক্যালরি ভোজন কমাতে ঘরোয়া খাবারে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করুন এবং এখানেও স্বাস্থ্যের কথা ভেবে সংযম বা পরিমিতিবোধের পরিচয় দিতে হবে।


* রমজানের ডিশকে হালকা রাখুন, অর্থাৎ অতিভোজন করবেন না। স্বাস্থ্যকর রান্না পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হোন, যেমন- গ্রিলিং, বয়েলিং, সিমারিং ও টোস্টিং। খাবারকে সুস্বাদু করতে বৈচিত্র্যময় শাকসবজি, খাবারে স্বাদ আনে এমন উদ্ভিদ ও সিজনিং যোগ করুন।

* ইফতারের পর অবিলম্বে মিষ্টি খাবার ভোজনে পাকস্থলির আকার বৃদ্ধি পায় এবং হজম বিলম্বিত হয়। এটি রক্ত শর্করার মাত্রার হ্রাসবৃদ্ধি করে, যা আপনাকে আরো মিষ্টান্ন খাওয়ার জন্য প্ররোচনা যোগাবে। মিষ্টি খাবার খেতে চাইলে ইফতারের ২-৩ ঘন্টা পর পরিমিত পরিমাণে খেতে পারেন।

* খাবারের পরিকল্পনা ও রমজানের রেসিপি এমনভাবে সুসংগঠিত করুন, যা আপনাকে পুরো মাস জুড়ে জীবনীশক্তি প্রদান করতে পারে। খাবার খেয়ে নিজেকে এবং পরিবারকে তৃপ্ত ও পুষ্ট করতে রমজানের খাবার নির্বাচনে সময় দিন এবং খাবারের তালিকায় বৈচিত্র্যতা আনার চেষ্টা করুন।

* ভারসাম্যপূর্ণ পুষ্টির জন্য কেবলমাত্র ইফতারের খাবারের ওপর নির্ভর করবেন না। আপনি ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অন্যান্য হালকা খাবার খেতে পারেন, যেমন- কম চর্বির দই, হোল-হুইট চিজ স্যান্ডুইচ অথবা কিছু শুষ্ক ফল ও বাদাম। সেহরিতে এক গ্লাস কম চর্বির দুধ, হোল-হুইট ব্রেড ও কিছু ডাল খেতে ভুলবেন না।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মে ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়