ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আইলার ১০ বছর পূর্ণ, এখনো বিপদে মানুষ

এম.শাহীন গোলদার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৫ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইলার ১০ বছর পূর্ণ, এখনো বিপদে মানুষ

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: সর্বনাশা জলোচ্ছাস ও ঘুর্ণিঝড়ে মুহুর্তেই লন্ডভন্ড হয়েছিল শ্যামনগর, আশাশুনি, কয়রা ও দাকোপ উপজেলার উপকুলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা।

১৪-১৫ ফুট উচ্চতায় সমুদ্রের পানি এসে নিমিষেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঘর-বাড়িসহ কয়েক হাজার মানুষকে। প্রাণ হারায় ৬৭ জন। সে দিনটি ছিল ২০০৯ সালের ২৫ মে।

সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ভয়ঙ্কর সে ‘আইলা’ আজো সাতক্ষীরা ও খুলনার মানুষের কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে আছে।

উপকূলীয় এলাকায় আইলা’র ক্ষত এখনো শুকায়নি। সুন্দরবন, কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের জীবন যাপন এখন আরো দূর্বিসহ হয়ে পড়েছে। আইলার পর সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে  কাজের বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পের কাজ হলেও এখন আর কোনো কাজ নেই। ক্রমেই বাড়ছে দরিদ্রের সংখ্যা। নেই সুপেয় খাবার পানির নিজস্ব ব্যবস্থা। উপকুলীয় এলাকা প্রতাপনগর, গাবুরা, পদ্মপুকুর নদীবেস্টিত এলাকা লবনপানিতে এখন বৃক্ষশূন্য।

অন্যদিকে, বেড়িবাঁধগুলো পুরোপুরি সংস্কার না হওয়ায় প্রায়ই আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পানি ঢুকে পড়ছে।

আইলার আঘাতে সেদিন খুলনা ও সাতক্ষীরায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্থ হয়ে লোনা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল খুলনার দাকোপ, কয়রা ও সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন।

সেদিন ২ লাখ একর কৃষিজমি লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। এক লাখ একর আমন ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। কাজ হারায় এলাকার কৃষক ও কৃষি-মজুররা। কাটতে থাকে অনাহারে দিন। আক্রান্ত এলাকাগুলোয় পানীয় জলের উৎস সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। জলোচ্ছাস ও লোনা পানির প্রভাবে, গবাদি পশুর মধ্যে হাজার হাজার গরু ছাগল মারা যায়। ঘূর্ণিঝড়ের কয়েক মাস পর থেকে এলাকাগুলোয় গাছপালা মরতে শুরু করে ও বিরান ভূমিতে পরিণত হয়। আর ২ লাখ ৪৩ হাজার ঘরবাড়ি সম্পুর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে বাস্তুচ্যুত হয় ৩ লাখ পরিবার।

আজো এসব পরিবার ভোগ করে চলেছে আইলায় সৃষ্ট দুর্ভোগ। আইলার আঘাতের পর ১০টি বছর পার হলেও মানুষ আজো সুস্থ ও সুন্দর জীবনে ফিরে আসতে পারেনি। এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙন মেরামত না হওয়ায় এখনো বছরে ২/৩ বার পানিবন্দী হয়ে পড়ছে আশাশুনি ও শ্যামনগর এলাকার বিপুল মানুষ। কোনো কোনো গ্রাম ভেসে যাচ্ছে কপোতাক্ষ আর খোলপেটুয়া নদীর পানিতে।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের ইয়াছিন আলী লস্কর,হাফিজুল ইসলাম, হাসান ঢালী, বাক্কার ঢালী ও মনিরুল ইসলাম জানান, আইলার পর থেকে এপর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় বছরে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ বার বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমি, মৎস্য ঘের এবং বসত বাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্ত আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে তাদের।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, এই ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ড। এরমধ্যে ৬টি ওয়ার্ডই ভাঙ্গণ এলাকায় যা সম্পুর্ণ ঝুকিপূর্ণ। এখানে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই। এছাড়া স্থায়ী কোন বেড়িবাঁধ না থাকায় এমন দূর্ঘটনার স্বীকার হয় এলাকার মানুষ।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো-২) নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, ‘ডিভিশন-১ এবং ডিভিশন-২ এর আওতায় ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ৭০ শতাংশ বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ। তবে ডিভিশন-২ এর ৭ কিলো মিটার বাঁধ অধিক ঝুকিপূর্ণ থাকায় সেখানে কাজ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘স্থায়ী সমাধান আনতে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। যা সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিভিশন ১ এবং ২ এর আওতায় প্রায় ৪৮৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে। যার ব্যয় আসবে ৮ হাজার ৭শ কোটি টাকা। যেটি হাইওয়ে হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ এই কাজ শুরু হতে পারে।’

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আইলার আঘাতে ক্ষতি কাটিয়ে ‍উঠতে সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। শুধু উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বেড়িবাঁধগুলো নিয়ে নতুনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে।’




রাইজিংবিডি/ সাতক্ষীরা/২৫ মে ২০১৯/শাহীন গোলদার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়