ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কফি হাউসের গৌরী প্রসন্ন পাবনার সন্তান

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৪, ২০ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কফি হাউসের গৌরী প্রসন্ন পাবনার সন্তান

এখানেই ছিল গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের জন্মভিটা

পাবনা প্রতিনিধি: অসংখ্য কালজয়ী গানের রচয়িতা গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।

‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি’ অথবা ‘মাগো ভাবনা কেন, শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি’। মহান মুক্তিযুদ্ধে উজ্জীবিত করা এমন গান সহ অনেক কালজয়ী গানের রচয়িতা তিনি।

বিবিসি’র জরিপে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আধুনিক বাংলা গানের তালিকায় ঠাঁই পাওয়া ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ গানটিও তারই লেখা।

১৯২৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পাবনার ফরিদপুরে জন্ম নেয়া বরেণ্য এই গীতিকবি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে (মরনোত্তর) ২০১২ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ জানানো হয়।

পাবনার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগরে এই গীতিকবির পৈতৃক ভিটায় সবটুকু স্মৃতিচিহ্নই ধ্বংস হয়ে গেছে। বরেণ্য এই গীতিকবির স্মৃতি ধরে রাখতে পৈত্রিক ভিটায় সঙ্গীত একাডেমি গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় নাগরিক সমাজ।

গোপালনগরের উদ্ভিদবিদ গিরিজা প্রসাদ মজুমদারের ছেলে গৌরী প্রসন্ন শৈশবে কলকাতায় চলে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ফিরে এসে ভর্তি হন পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে। ১৯৫১ সালে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাশ করেন। পরে আবার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। দেশবিভাগের পর ১৯৬৫ সালে স্বপরিবারে চলে যান ওপার বাংলায়। গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের জন্মভিটায় এখন ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

জানা যায়, ১৯৭২ সালে একবার নিজের পৈত্রিক ভিটা দেখতে এসেছিলেন গৌরি প্রসন্ন। সে সময় ছোটবেলার প্রিয় বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়েছিলেন।

স্বজনদের সন্ধান করে পাওয়া যায় গৌরি প্রসন্ন মজুমদারের দুঃসম্পর্কের ভাগ্নে সমেন্দ্র লাহিড়ী বাবলুকে। তিনি হাসপাতালের আবাসিক কোয়াটারের দু’টি ভবনের মাঝখানের একটি জায়গা দেখিয়ে বললেন, সেখানেই ছিল গৌরি প্রসন্ন মজুমদারের জন্মভিটা।

আক্ষেপের সুরে তিনি বললেন, ‘এত বড় মাপের একজন সঙ্গীতজ্ঞ গৌরি প্রসন্ন মজুমদার, তার বাড়ি ছিল আমাদের ফরিদপুরে, অথচ আমরা তার স্মৃতি রক্ষার্থে কিছুই করতে পারলাম না, এটা কতটা কষ্টের তা বলে বোঝানো যাবে না। সরকারের কাছে দাবি জানাবো, তার স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে একটা সঙ্গীত একাডেমি গড়ে তোলা হোক।’

ফরিদপুরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আশুতোষ কর্মকারও তার স্মরণে ফরিদপুরে স্মৃতি সংগ্রহশালা বা সঙ্গীত একাডেমি গড়ে তোলার দাবি জানান।

ফরিদপুর বনমালী ললিতকলা একাডেমীর সভাপতি আলী আশরাফুল কবির বলেন, ‘আমরা তার নামে ফরিদপুরে একটি সাংস্কৃতিক একাডেমি গড়ে তুলতে চাই। যে সংগঠনের কাজ হবে গৌরি প্রসন্ন মজুমদারকে বাংলাদেশে বাঁচিয়ে রাখা, তার স্মৃতি রক্ষার্থে কাজ করা। সেইসাথে আগামীতে তার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালনের মাধ্যমে তাকে স্মরণ করবো আমরা।’

ফরিদপুর পৌর মেয়র খ ম কামরুজ্জামান মাজেদ বলেন, ‘ফরিদপুর পৌরসভার একটি সড়ক গৌরি প্রসন্ন মজুমদারের নামে করবো। যাতে তার নাম সবার মাঝে ছড়িয়ে যায়।’

ফরিদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাপ হোসেন গোলাম বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সাংস্কৃতিককর্মী, প্রশাসন সবাইকে সাথে নিয়ে আমরা গৌরি প্রসন্ন মজুমদারের স্মরণে একটি ভাস্কর্য, অথবা একটি স্মৃতি পাঠাগার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার রায় বলেন, ‘ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মোট জমির পরিমাণ ২১ একর। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সরকার চাইলে হাসপাতালের অভ্যন্তরে স্মৃতি সংগ্রহশালা বা সঙ্গীত একাডেমি করতে পারে। তেমন জায়গাও আছে।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাবনার জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ বলেন, ‘আমি সদ্য যোগদান করেছি। আপনার মাধ্যমে জানার পর বিষয়টি ফরিদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে খোঁজ নিতে বলেছি। সেখানে সেই অর্থে গৌরি প্রসন্ন মজুমদারের বসতভিটার স্মৃতি চিহ্ন কিছু নেই। আমরা চেষ্টা করবো সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এখানে গৌরি প্রসন্ন মজুমদারের স্মৃতি ধরে রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। তিনি পাবনার গর্ব, ইতিহাসের এই অংশটুকু আমাদের ধরে রাখার দরকার।’

 

রাইজিংবিডি/পাবনা/২০ আগস্ট ২০১৯/শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়