ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

হাসপাতালের বেডে শেফালী; বাড়িতে অনাহারে সন্তানরা

মাহমুদুল হাসান মিলন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হাসপাতালের বেডে শেফালী; বাড়িতে অনাহারে সন্তানরা

ময়মনসিংহ সংবাদদাতা : ভুয়া চিকিৎসকের দ্বারা অপচিকিৎসার শিকার হয়ে নেত্রকোণার খালিয়াজুড়ি উপজেলার শেফালী আক্তার (৩৫) নামে এক নারী ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসা করাতে এসেও হাসপাতালের বেডে থেকে তাকে চিন্তা করতে হচ্ছে বাড়িতে থাকা সন্তানদের আহার নিয়ে। হাসপাতালে তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন ১৪ বছরের তার মেয়ে তৃষা আক্তার ও গ্রাম পুলিশ মিজাজুল মিয়া। বাড়িতে রয়েছেন আরো দুই শিশু সন্তান। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি শেফালী নিজেই।

রোববার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে থাকা শেফালী আক্তারের সাথে কথা হয় রাইজিংবিডির, নিজের অতীত নিয়ে কথা বলা শুরু করেন শেফালী।

শেফালী বলেন, আমার বাবা দিনমজুর ছিল। মাও অন্ধ। কোন রকম করে আমরা তিন বোন একটু বড় হই। বাবা মারা যাওয়ার আগেই দুই বোনের বিয়ে হয়। আমারে বিয়া দেয় কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার বাদলা গ্রামের সাব্বির রহমানের সাথে। সেখানে সুখে-শান্তিতেই ছিলাম। কিন্তু পোড়া কপালে আর সুখ সইলনা। দুইটা সন্তান হওয়ার পর আমার স্বামী (সাব্বীর) মারা যায়।

পরে দুই সন্তান নিয়ে শ্বশুড় বাড়ি ছাড়তে হয়। বাবার ভিটায় তাদের নিয়ে এসে মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতাম। স্বামী না থাকায় এলাকার মানুষ অন্য চোখে আমাকে দেখত। তাই মা’র কথায় আবারো আমার বিয়ে হয় আমাদের গ্রামের বাক্কারের সাথে। সেখানেও আমার ছেলে এবং এক মেয়ের জন্ম হয়। কিন্তু সেই স্বামীও আমাকে ছেড়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে সংসার করছে। আমি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আবারো বাপের বাড়িতে। আমার এই অবস্থায় বাড়িতে থাকা সন্তানরা অনাহারে রয়েছে। আমি তাদের জন্য কিছুই করতে পারছিনা।

কথাগুলো বলতে বলতে ছলছল করে অঝড়ে চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল শেফালী’র। মায়ের কষ্টের কথা শুনে কান্না ধরে রাখতে পারলো না শেফালীর কিশোরী কন্যা তৃষা।

তৃষার সাথে কথা হলে সে জানায়, আমি কোন রকমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে পড়েছিলাম। এখন অভাবের কারণে মায়ের সাথে অন্যের বাড়িতে কাজ করি। আমাদের অন্য ভাইবোনদের স্কুলে ভর্তি করতে পারিনি। চার ভাইবোনকে নিয়ে কোন রকমে আম্মা সংসার চালাচ্ছে। কিন্তু এখন আম্মার এই অবস্থায় আমাদের সংসারের কি হবে বুঝতে পারছি না।

খালিয়াজুড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মতার নির্দেশে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শেফালীর দেখা শুনার দায়িত্বে আছেন গ্রাম পুলিশ মিজাজুল মিয়া।

মিজাজুল মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, শেফালী আমাদের গ্রামেরেই মেয়ে। মাইয়াডা ছোট কাল থেকেই দু:খী। এর কপালে সুখ নাই। এহন তার এই অবস্থায় তার সংসার কেমনে চলব আল্লাই জানে।

শেফালীর কাছে ভুয়া চিকিৎসকের কথা জানতে চাইলে শেফলী বলেন, আমার বুকে একটা গুটি হলে ইকবাল নামে একজনের কাছে সহযোগিতা চাই চিকিৎসা করানোর জন্য। তখন ইকবাল আমাকে ভুয়া ডাক্তার মানিক তালুকদারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার আমাকে দেখে বলেন ক্যানসার হয়েছে। তারাতারি অপারেশন করতে হবে। অপারেশনের জন্য ইকবালের মাধ্যমে ডাক্তারকে ২০ হাজার টাকা দেই ঋণ করে।

অপারেশনের পর ডাক্তার কিছু ওষুধ দিয়ে বলে এগুলো খেলেই সব সেরে যাবে। কিন্তু অপারেশন করার দুইমাস পেরিয়ে গেলেও অসুখ ভালো না হওয়ায় এবং ক্ষত স্থানে পচন ধরায় আমার শরীরে যন্ত্রণা বেড়ে যায়। পরে অন্য ডাক্তারের কাছে গেলে তারা আমারে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ময়মনসিংহ এসে ভর্তি হওয়ার মতো আমার সামর্থ্য ছিলনা। পরে ইউএনও ও ডিসি স্যারের সহযোগিতায় আমি ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি হই। নেত্রকোনা জেলা ও খালিয়াজুড়ি উপজেলা প্রশাসন আমার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। এবং খালিয়াজুড়ি থানা পুলিশ ভুয়া চিকিৎসককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।

 

রাইজিংবিডি/ময়মনসিংহ/১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মাহমুদুল হাসান মিলন/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়