ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মেয়ে হত্যার মামলা নিলেন না ওসি, উল্টো বাবাকে ফাঁসালেন

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেয়ে হত্যার মামলা নিলেন না ওসি, উল্টো বাবাকে ফাঁসালেন

গৃহবধূ আশা হত্যার বিচার দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

মেয়ে আশা খাতুনকে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন বাবা জাহিদুল ইসলাম। কিন্তু মামলা না নিয়ে উল্টো অসহায় ওই বাবাকেই ডাকাতি মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পাবনার ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে এটিকে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ওই ওসি। অপরদিকে, আশার হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও ওসির অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।

নিহত আশার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চার বছর আগে ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের আশা খাতুনের বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী গোলকাটা গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী ছফর আলীর সঙ্গে। সম্প্রতি শ্বশুর বাড়িতে থাকা অবস্থায় আশা খাতুন ননদের স্বামী সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার জা আঙ্গুরি খাতুন ও জাহানারা খাতুনের পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জেনে ফেলেন।

অভিযোগ রয়েছে, এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে পরিকল্পিতভাবে আশা খাতুনকে মারধর করে জোরপূর্বক মুখে বিষ ঢেলে দেয় তারা। খবর পেয়ে আশার বাবার বাড়ির লোকজন ওই বাড়িতে গিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় আশাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আশার মৃত্যু হয়।

ওসি আবুল কাশেম

আশার পরিবারের অভিযোগ, প্রথমে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আশা আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। কিন্তু আশার তিন বছরের শিশু সন্তান আরিকাকে তার নানাবাড়ি আনা হলে সে জানায়- তার মাকে মারধর করে গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা করেছে বড় মা জাহানারা ও আঙ্গুরী। শেষে মুখে বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে উৎকোচের বিনিময়ে উল্টো আশার বাবার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ দুটি মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হয় বলে দাবি করেন আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম। পরে তিনি জামিনে বের হয়ে গত ২৮ নভেম্বর পাবনার আমলি আদালতে পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ বিচারক মো. মুরাদ জাহান মামলা গ্রহণ করে তা তদন্তের জন্য ফরিদপুর থানায় পাঠান। পুলিশ মামলাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

আশার বাবা জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘‘আমার মেয়ে হত্যার পর থানায় মামলা নেয়নি। ডাকাতির মামলা দিয়ে আমাকে জেল খাটিয়েছে। আদালতে মামলা করায় এখন নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মামলা তুলে নিতেও ওসি সাহেব চাপ দিচ্ছেন।’’

এদিকে, গৃহবধূ আশা খাতুন হত্যার বিচারের দাবিতে গত বুধবার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ এবং মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। ঘুষ খেয়ে এই মামলা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ওসি আবুল কাশেমের অপসারণ দাবি করে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। সেই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তেরও দাবি জানান।

 

নিহত গৃহবধূ আশা খাতুন

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফরিদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি উৎকোচ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, আশা নামে কোনো নারী হত্যার শিকার হয়নি। এ বিষয়ে থানায় মামলাও হয়নি।

তিনি বলেন, আপনি ঘটনাস্থলে যান, সেখানে গেলে আসল তথ্য জানতে পারবেন। তার (ওসি) বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনা তদন্তে ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর ওসির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেটি খতিয়ে দেখা হবে।


পাবনা/শাহীন রহমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়