ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে রাতেই গাইবান্ধা ছাড়ে হানাদাররা

গাইবান্ধা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে রাতেই গাইবান্ধা ছাড়ে হানাদাররা

মুক্তিযোদ্ধাদের আসার সংবাদ পেয়েই রাতে গাইবান্ধা শহরের স্টেডিয়াম ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যায় পাক সেনারা।

গাইবান্ধা হানাদার মুক্ত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর। সেদিনে বিজয়ের আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েছিল গাইবান্ধার মুক্তিযোদ্ধারা ও সর্বস্তরের মানুষ।

কোম্পানি কমান্ডার বীর প্রতীক মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের কালাসোনার চর থেকে বালাসী ঘাট হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে। এই খবর পেয়ে আগের রাতেই গাইবান্ধা শহরের স্টেডিয়ামে অবস্থিত ক্যাম্পের পাক সেনারা তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে পালিয়ে যায়। ফলে বর্তমান স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ ও তৎকালীন এসডিও মাঠ মুক্তিযোদ্ধা জনতার মিলন মেলায় পরিণত হয়।

গাইবান্ধায় যুদ্ধগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাদিয়াখালীর যুদ্ধ, হরিপুর অপারেশন, কোদালকাটির যুদ্ধ, রসুলপুর স্লুইস আক্রমণ, নান্দিনার যুদ্ধ ও কালাসোনার যুদ্ধ।

গাইবান্ধা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মাহমুদুল হক শাহজাদা বলেন, ‘১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল বিকালে পাক হানাদার বাহিনী মাদারগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর হয়ে গাইবান্ধা প্রবেশ করে। তারা টিঅ্যান্ডটির ওয়ারলেস দখল করে। পরবর্তীতে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামে (বর্তমান শাহ আব্দুল হামিদ  স্টেডিয়াম) ঘাঁটি করে। এই ঘাঁটি থেকেই তারা শহর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ, নারী নির্যাতন চালাতো। তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে মানুষ ধরে এনে হত্যা করার পর মাটিতে পুঁতে রাখতো। বিভিন্ন রাস্তার পাশেও অসংখ্য লাশ সে সময় পুঁতে রাখা হয়। তাই এই স্থানগুলো পরে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাইবান্ধা স্টেডিয়ামের দক্ষিণ অংশে এবং স্টেডিয়ামের বাইরে অসংখ্য মানুষ হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। প্রতি রাতেই স্টেডিয়ামের পাশে কফিল শাহের গোডাউন নামে পরিচিত প্রাচীর ঘেরা এই এলাকায় দালালদের সহায়তায় অসহায় মানুষদের ধরে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হতো। বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের এখানে ধরে এনে ধর্ষণের পর হত্যা করা হতো। পার্শ্ববর্তী রেল লাইনের ধারেও গর্ত করে লাশ পুঁতে রাখা হতো।’

গাইবান্ধার এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাইবান্ধাতেও মুক্তিযোদ্ধা এবং পাক সেনাদের লড়াই অব্যাহত থাকে। এক পর্যায়ে ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা খবর পায় পাকসেনারা গাইবান্ধা ছেড়ে চলে গেছে। ৬ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি বিমান গাইবান্ধা রেলস্টেশনের পাশে বোমা ফেলে এবং বিকালে ট্যাংক নিয়ে মিত্রবাহিনী প্রবেশ করে শহরে।

অপরদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ৭ ডিসেম্বর সকালে বিজয়ীর বেশে হাজার হাজার মানুষের আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে শহরে প্রবেশ করে।’

গাইবান্ধা হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে শহরে র‌্যালি, দোয়া ও আলোচনা সভা।



গাইবান্ধা/সিদ্দিক আলম দয়াল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়