ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বরিশালে হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, আটক ১

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বরিশালে হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত, আটক ১

ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ

বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যার ঘটনায় এক জনকে আটক করেছে পুলিশ আটককৃত ব্যক্তির নাম মো. জাকির (৩৫)। তিনি গ্রাম্য কবিরাজ হিসেবে পরিচিত।

আজ শনিবার বিকেলে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রকিব। তিনি বলেন, আটক মো.  জাকির নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠী ইউনিয়নের উত্তর রাজপাশা গ্রামের চুন্নু হাওলাদারের ছেলে। তকে ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। 

তিনি বলেন, জাকির কবিরাজি কাজে ওই বাড়িতে প্রায়ই আসতেন। যার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতেও তিনি আসেন। পরে আবার চলে যান। তাই জাকিরকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বানারীপাড়া থানায় আনা হয়েছে। 

এদিকে, এই ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম। বেলা সাড়ে ১১ টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। উদ্ধার হওয়া প্রত্যেকটি মরদেহের নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। এছাড়া শরীরে তেমন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এমনকি হত্যাকারীরা ওই বাড়ি থেকে তেমন কিছুই লুটে নেয়নি। সঙ্গে ওই বাসার ভেতর থেকে সব দরজা-জানালা আটকানো ছিল। এ কারণে বিষয়টিকে তারা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিত হত্যা বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন। 

এর আগে একই পরিবারের তিনটি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা নিশ্চিত করে বানারীপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাফর আহম্মেদ বলেন, বানারীপাড়া পৌর এলাকার ৫নং ওয়ার্ডের সলিয়াবাকপুরের হাওলাদার বাড়ি এলাকার আব্দুর রবের বাড়ি থেকে আজ শনিবার সকালে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশগুলোর সুরাতহাল শেষে বরিশাল মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহতরা হলেন, প্রবাসী ও বাড়ির মালিক আব্দুর রবের মা মরিয়ম বেগম (৭০),  মরিয়ম বেগমের মেজ বোন মমতাজ বেগমের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শফিকুল আলম (৬০) ও রবের খালাতো ভাই মো. ইউসুফ (২২)।

স্বজনদের বরাদ দিয়ে ওসি জাফর আহম্মেদ জানান, শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতের পর যে কোনো সময় তাদের হত্যা করা হয়েছে। সকালে এলাকাবাসী খবর দিলে তারা লাশ উদ্ধার করেন। এর মধ্যে মরিয়ম বেগমের লাশ বাড়ির বেলকনি থেকে, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শফিকুল আলমের লাশ ঘরের মধ্যে এবং মো. ইউসুফের লাশ বাড়ির পাশে পুকুরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ বছর ধরে কুয়েত প্রবাসে থাকা হাফেজ আব্দুর রব সেখানকার একটি মসজিদে ইমামতি করেন। রবের স্ত্রী মিসরাত জাহান মিশু দুই সন্তান ইফাদ জাহান (৯) এবং নূরজাহান ও শাশুড়িকে নিয়ে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন। তার বড় ছেলে ঢাকায় একটি মাদ্রাসায় হাফেজি পড়াশোনা করেন। শুক্রবার দিবাগত রাতে ওই বাসায় ছিলেন মিসরাত ও তার দুই শিশু সন্তান, শাশুড়ি, ভাতিজি চাখার কলেজের এইচএসসির প্রথম বর্ষের ছাত্রী আছিয়া আক্তার, রবের ভগ্নিপতি শফিকুল আলম এবং খালাত ভাই মো. ইউসুফ। ওই রাতে নাতি আছিয়ার সঙ্গে একই কক্ষে একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিলেন বৃদ্ধা মরিয়ম।

শনিবার ভোর ৫টার দিকে আছিয়া ফজরের নামাজ পড়তে ঘুম থেকে উঠে দাদিকে বিছানায় না পেয়ে খুঁজতে গিয়ে বেলকনিতে তার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার ডাক চিৎকারে আশপাশের মানুষ এসে বাসার মধ্যে আরেকটি কক্ষে রবের ভগ্নিপতি শফিকুল আলমের এবং বাড়ির সামনে পুকুরে ভাসমান অবস্থায় ইউসুফের লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়।

গৃহকর্তী মিশরাত জাহান মিশু বলেন, গ্রামের কারোর সঙ্গে তাদের বিরোধ নেই। দুর্বৃত্তরা তার কক্ষের আলমিরা থেকে স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল নিয়ে গেছে দাবি করলেও তিনি কিছুই টের পাননি বলে জানান। এ ঘটনার পর সন্তানসহ পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত মিশু।

প্রবাসী রবের ভায়রা হারুন সিকদার বলেন, নিহত শফিকুলের সঙ্গে তার ছোট ভাই শহীদুল ইসলামের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এ নিয়ে তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে একাধিকবার সংঘাতও হয়। তিন দিন আগে ওই বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে শফিকুল তার কাছে বিষয়টি অবহিত করেন। ওই ঘটনার জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে সন্দেহ করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তিনি।

আব্দুর রবের পাকা ঘরের সকল দরজা-জানালা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। কোনো গ্রিলও কাটা কিংবা ভাঙা নেই। ডাকাতির আলামতও তেমন দেখা যায়নি। বিষয়টি রহস্যে ঘেরা বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

একই বাড়িতে তিনটি লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রাকিব এবং পিবিআই ও সিআইডি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নানা আলামত সংগ্রহ করেন।


বরিশাল/জে. খান স্বপন/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়