ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

অখণ্ড অবসরে হিলির মুচিরা

মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১০, ২৯ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অখণ্ড অবসরে হিলির মুচিরা

করোনার কারণে মানুষ বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে কম। রাস্তা-ঘাট প্রায় ফাঁকা। এতে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরা। দৈনিক উপার্জনে যাদের সংসার চলে এই শ্রেণির মানুষগুলো আছেন সবচেয়ে বিপদে। পেট চালানো দায় হয়ে পড়েছে তাদের। 

দিনাজপুরের হিলিতে এখন অখণ্ড অবসর পার করছেন দৈনিক উপার্জন সৈনিক মুচিরা। আগে যেখানে মাথা তোলার অবসর ছিলো না, কাজের চাপে নুয়ে থাকত। কখনো জুতার গায়ে সুই সুতার নিখুঁত বুনন চলতো। কখনো বা দুলতে দুলতে ব্রাশ চালাতেন জুতার শরীরে। কিছুক্ষণের মধ‌্যেই তা কালো বা খয়েরি রংয়ের কালিতে চকচকে হয়ে যেতো।

যে নুয়ে পড়া মাথায় লজ্জা বা ক্লেশ ছিলো না বরং ছিলো উদরযুদ্ধের জয়ী হওয়ার মন্ত্র। সেই নুয়ে পড়া অবস্থাকেই ফিরে পেতে চান। এই অখণ্ড অবসর চান না তারা।

হিলি শহরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ জন মুচি। বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে দৃশ‌্যমান অবস্থানে তাদের বসার স্থান। লকডাউনে তারা বাড়িতেই ছিলেন। তবে ঈদের পরে ধীরে ধীরে বের হয়ে এসেছেন তারা। পেটের আগল তো খোলা। তাই ঘরের আগল বন্ধ করে আর থাকতে চাইছেন না তারা। ফিরতে শুরু করেছেন নিজ নিজ কর্মস্থলে। তবে আগের মতো আর মানুষই পাচ্ছেন না রাস্তায়।

মানুষ যদি রাস্তায় না নামে, যদি জুতা না ছেঁড়ে তাহলে তাদের পেট চলবে কী করে? জুতার বিবর্ণ চেহারা তাদের জীবনের বর্ণহীনতা ঘোচায়। তাই মানুষের দিকে, মানুষের পায়ের দিকে চেয়ে থাকেন তারা।

হিলি স্থলবন্দরের বাজার-ঘাট রাস্তা ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন স্থানে চট বিছিয়ে, ছোট বাক্সনিয়ে বুটপালিশ আর জুতা সেলাইয়ের সরঞ্জাম সাজিয়ে বসে আছেন মুচিরা। কাজ নেই, নেই কোনো ব‌্যস্ততা।

হিলি চারমাথা মোড়ে হাত-পা গুটিয়ে বসেছিলেন শ্রী লিটন রবিদাস। এ প্রতিবেদককে দেখে নড়ে চড়ে বসেন। একবার মুখের দিকে আরেকবার জুতার দিকে তাকিয়ে নেন চট করে। কথা হয় তার সাথে।

রবিদাস রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘কী করে চলব দাদা? কোনো কাজ-কাম নাই, খালি বসে বসে সময় পার করছি। লোকজন তো হারাইছে। মানুষের এখন আর জুতা পুরাতনও হচ্ছে না, ছিঁড়েও যায় না। সকাল থেকে বসে আছি কেউ জুতা ঠিকঠাক করতে আসে না।

‘কাজে ফিরেছি দুদিন হলো। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫০ থেকে ১০০ টাকা উপার্জন হচ্ছে। এই স্বল্প আয় দিয়ে কী আর সংসার চলে? বাড়িতে বাবা-মা ছোট ভাই-বোন আর আমার স্ত্রীসহ দুই সন্তান নিয়ে বড় কষ্টে দিনাপাত করছি।”

হিলি বাজারের ফলহাটিতে বসেন শ্রী রুবেল রবিদাস তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনার কারণে মানুষ এখন বাজারেই আসা প্রায় বাদ দিয়েছে। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে লোকজন বাজারে কেনাকাটা করতে আসছিল। একটু কাজ-কাম হয়েছিলো তখন। ঈদ শেষ, বাজার ফাঁকা। আমাদের তো আর বাড়তি কোনো আয় নাই, এই জুতা সেলাই করে সংসার চালাই।’

হিলি বোয়ালদাড় ইউনিয়নের বিশাপাড়া (বটতলী) গ্রামের শ্রী দীলিপ বলেন, ‘কাজ না করলে ছেলে-মেয়েদের কী খাওয়াবো? পেটের দায়ে এই দোকানে বসা। করোনা আসার আগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা আয় হতো। এখন মানুষই নাই। তাই কাজও নাই। এখন যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। বোয়ালদাড় ইউনিয়ন থেকে কোনো ত্রাণও পাইনি। আড়াই হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে নাম ঠিকানা নিয়ে গেছে। এখনো কোনো টাকাও পেলাম না।’

২নং বোয়ালদাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেফতাউ জান্নাত মেফতার বলেন, ‘সরকারি আড়াই হাজার টাকা এখনও দেওয়া শুরু হয়নি। যাদের নামের তালিকা করা হয়েছে, তাদের মোবাইল নম্বরে টাকা যাবে। যদি দীলিপ রবিদাসের নাম তালিকায় উঠলে অবশ্যই সে টাকা পাবে।’


হিলি (দিনাজপুর)/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়