ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘মোসাদ্দেক বলল, রিভিউ নেন স্টাম্প মিসও করতে পারে’

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ১৯ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘মোসাদ্দেক বলল, রিভিউ নেন স্টাম্প মিসও করতে পারে’

বাংলাদেশকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক। জয়ের পর তার উল্লাস। অথচ তিনি এর আগেই আউট হয়ে যেতে পারতেন। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন। তবে মোসাদ্দেকের পরামর্শে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান বাংলাদেশ অধিনায়ক। (ছবি: বিসিবি)

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কলম্বো থেকে : নিজেদের শততম টেস্টে জয় সত্যিই বিশেষ কিছু। মুশফিকুর রহিমের হাত ধরে বাংলাদেশ ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাল। টেস্ট খেলুড়ে চারটি দেশ শততম টেস্টে জয় পেয়েছে। সবশেষ তালিকায় যোগ হলো বাংলাদেশের নাম।

মুশফিকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে ভালো ফল পাচ্ছে। গত ছয় মাসে বাংলাদেশ হারিয়েছে টেস্টের অনত্যম দুই পরাশক্তি ইংল্যান্ড ও শ্র্রীলঙ্কাকে। শনিবার কলম্বো টেস্টে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারানোর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মুশফিকুর রহিম। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন টাইগার দলপতি। রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তা দেওয়া হলো:



শততম টেস্টে জয়ের অনুভূতিটা কেমন?
মুশফিকুর রহিম: প্রথমেই বলব যে আলহামদুলিল্লাহ। সত্যিই খুব ভালো লাগছে। কারণ প্রথম টেস্টে হারের পর আমাদের মনে হয়েছিল, আমরা যদি আমাদের সক্ষমতা অনুসারে খেলতে পারি তাহলে এই দলকে হারানো তেমন একটা কঠিন কাজ নয়। যদিও তারা প্রথম টেস্টটা বেশ সহজেই জিতেছে। আমরা জানতাম আমরা যদি মাঠে আমাদের পরিকল্পনা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি, আমরাই জিতব। সব মিলিয়ে এই জয়ের জন্য খুবই খুশি। জয়টা আমরা অনেক কষ্টে অর্জন করেছি। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে যদি আমরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ি, তখন আরো ভালোভাবে খেলতে পারব।

পরবর্তী লক্ষ্য কী?
মুশফিকুর রহিমএই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। কারণ গত কয়েকটি সিরিজে আমরা প্রত্যাশিত ফল পাইনি। এই জন্যই এই ম্যাচটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। দলের সবাই আনন্দিত। অনেকেই ভালো পারফর্ম করেছে। আমাদের আপাতত লক্ষ্য হলো পরের সিরিজটা, বিশেষ করে ওয়ানডে সিরিজটি জেতা। আশা করি কয়েক দিনের বিশ্রামে দলের সবাই প্রস্তুত হয়ে উঠবে।

শ্রীলঙ্কার দলটির বিপক্ষে আপনাদের জয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
মুশফিকুর রহিম: আমার মনে হয় শ্রীলঙ্কা এখনো তাদের মাটিতে দুর্দান্ত দল। তারা অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে। তাদের তাই হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। আমার মনে হয়, গত পাঁচ দিন আমরা তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছি। বিশেষ করে টস হারের পর বোলাররা প্রথম ইনিংসে তাদের কাজটা যথাযথভাবে করেছে। গতকাল সাকিব ও মুস্তাফিজও, ফ্ল্যাট উইকেটে দারুণ বোলিং করেছে। ওদের কয়েক ওভারের স্পেলে শ্রীলঙ্কা ব্যাকফুটে চলে যায়। এরপর আমাদের দরকার ছিল মোমেন্টামটা ধরে রাখা।  আমাদের মনে হয়েছিল লক্ষ্য যা-ই হোক, আমরা চেজ করতে যাব। আমাদের মনে হয়েছে ২০০ বা ২৫০ রান এই উইকেটে তাড়া করা সম্ভব। তাদেরকে অলআউট করার পর আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। বিশেষ করে তামিম ও সাব্বির যেভাবে ব্যাটিং করেছে, এটা দারুণ। সব মিলিয়ে শততম টেস্ট জেতা বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন।



ডিআরএস নিয়ে আপনার মন্তব্য?
মুশফিকুর রহিম: হটস্পট ছিল না, স্নিকোমিটার ছিল না; এই পরিস্থিতিতে আসলে ডিআরএস নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন। এর কারণে আমাদের কিছু সমস্যা হয়েছে। ওদেরও হয়েছে। ভবিষ্যতে ডিআরএস যদি রাখতে হয়, তবে আইসিসিকে আমরা বলব যাতে, সম্ভাব্য সব প্রযুক্তিই তাতে থাকে। হটস্পট এবং স্নিকোমিটার থাকলে থার্ড আম্পায়ারের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায় এবং এতে ক্রিকেটের যথাযথ আবেদনটাও ঠিক থাকে।

লক্ষ্য তাড়া করার ক্ষেত্রে আপনাদের পরিকল্পনা কী ছিল?
মুশফিকুর রহিম:  টেস্ট ক্রিকেটে এ রকম পরিস্থিতিতে আমি কখনো পড়িনি। পঞ্চম দিনের উইকেটে এভাবে চেজ করা; আমাদের জন্য নতুন। আমাদের লক্ষ্য ছিল শুরুর দিকে ৫০-এর বেশি রানের জুটি করা। আল্লাহর রহমতে তামিমের দারুণ ব্যাটিং, সাব্বিরের সঙ্গে একশর বেশি রানের জুটি, এক সময় মনে হয়েছিল সহজেই আমরা জিততে পারব। শেষ দিকে দুঃখজনকভাবে সাকিব আউট হয়ে যাওয়ার পরও আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা পারব। কারণ মোসাদ্দেক ও মিরাজ ছিল। তাই মনে হয়েছিল এক এক করে নিলেও আমরা ম্যাচটা জিততে পারব।

আপনাকে তো একবার আউট দিয়ে দেওয়া হয়েছিল?
মুশফিকুর রহিম: আমার আউটটা দেওয়ার পর (রিভিউয়ে ওভারটার্নড হয়েছে), কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। রিভিউ নিতেও ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের হয়তো সেটা কাজে লাগবে। একটু চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। এই জন্য আমি রিভিউ নিতে চাচ্ছিলাম না। মোসাদ্দেক এসে বলল, ভাই রিভিউ নেন, স্টাম্প মিসও করতে পারে। শেষ মুহূর্তে ভাবলাম, আচ্ছা নিই। যদি মিস করে যায় তাহলে হয়তো বেঁচে যেতে পারি। অনেক শার্প টার্ন আর বাউন্সও ছিল। স্টাম্পে না লাগায় বেঁচে গেছি। খুবই টেনশনে ছিলাম। তবে বিশ্বাস ছিল, আমি আউট হলেও জিততে পারব। ইচ্ছে ছিল নিজে নট আউট থেকে ম্যাচটা জিতিয়ে আনব। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।



টেস্ট জয় কাদেরকে উৎসর্গ করতে চাইবেন?
মুশফিকুর রহিম: অবশ্যই এটা অনেক বড় একটা অর্জন। যদি ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেন, এই জয় আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের উৎসর্গ করতে চাই। এটা খুব সহজ ছিল না। খেলা ভালো না হলে অনেক সময় তারাও সমালোচনা করেন। তবে তাদের সমর্থন এখানেও ছিল। সব সময় সমর্থন করেছেন। আমার মনে হয়, আমরা কিছুটা হলেও প্রতিদান দিতে পেরেছি। এই জন্য ভালো লাগছে। আমরা সব সময়ই ভালো কিছু করার চেষ্টা করি, ভবিষ্যতে আরো ভালো করার চেষ্টা করব।

দেশের ভেতরে হলে কী ভিন্ন অনুভূতি থাকত?
মুশফিকুর রহিম: দেশে হলে অন্যরকম একটা অনুভূতি তো থাকেই। বিদেশে ওই হারের পর এমনভাবে ঘুরে দাঁড়ানো আমাদের মতো দলের জন্য এর চেয়ে বড় শক্তি আর হয় না। বিদেশের মাটিতে অমন হারের পর ঘুরে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা আমাদের খুব কম আছে। ওরা অস্ট্রেলিয়াকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে। এটা অনেক বড় একটা পদক্ষেপ। এখানে অনেক তরুণ খেলোয়াড় ছিল, যারা খুব ভালো পারফর্ম করেছে এই টেস্টে। এটা অনেক বড় সেলফ বিলিফ, টিম বিলিফ, বলব সবার কাছে এই জন্য কৃতজ্ঞ।



রাইজিংবিডি/কলম্বো (শ্রীলঙ্কা)/১৯ মার্চ ২০১৭/ইয়াসিন/পরাগ/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়