ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মাহবুব মোর্শেদ-এর নিবন্ধ

হে ফেস্টিভ্যাল ও বড়লোকের সাহিত্য

মাহবুব মোর্শেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ১৮ নভেম্বর ২০১২   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হে ফেস্টিভ্যাল ও বড়লোকের সাহিত্য

রাইজিংবিডি২৪.কম:

বাংলা একাডেমিতে ‘হে ফেস্টিভ্যালে’র আয়োজন নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সবার মনোভাব এক নয়, বক্তব্যও এক হবার প্রশ্ন ওঠে না। একথা সত্য, কেউ কেউ বাংলা একাডেমির শুদ্ধতার প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের কথা হলো বাংলা নামাঙ্কিত একাডেমি কীভাবে ইংরেজি সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা করে এমন একটি ফেস্টিভালের সহ-আয়োজক হয়? আমার মতে, প্রশ্নটা শুদ্ধতার নয় আর এ প্রশ্ন নতুনও নয়। প্রসঙ্গটি কর্পোরেট স্পন্সরশিপের। বাংলা একাডেমি একুশে বইমেলায় চত্বরে যখন কর্পোরেট স্পন্সর নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখনও এ প্রশ্ন উঠেছিল। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে একাডেমি জনগণের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। স্বাধীন চিন্তা ও তৎপরতার স্বার্থেই এ রীতি অব্যাহত থাকা উচিত। একাডেমির স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো আনুগত্য বা স্পন্সরশিপের লোভ একাডেমির কার্যক্রমে প্রশ্রয় পাওয়া উচিত নয়। আমরা এখনও ভাবতে পারি না, ফ্রেঞ্চ একাডেমি বা সুইডিশ একাডেমি কর্পোরেট স্পন্সরের সহায়তায় কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করছে। বাংলা একাডেমি করছে। শুধু কর্পোরেট স্পন্সরই নয়, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের তাঁবেদারি করে প্রতিষ্ঠানটি মর্যাদা ও স্বাধীনতা বিপন্ন করে তুলেছে।

বাংলা একাডেমি নিজ উদ্যোগে বাংলা সাহিত্য নিয়ে নানা উৎসবের পাশাপাশি ইংরেজি সহ বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য নিয়ে আন্তর্জাতিক উৎসবের আয়োজন করতে পারে। তাতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু ‘হে উৎসবে’ বাংলা একাডেমির অবস্থান কী? অনুষ্ঠানের আয়োজন একটি ইংরেজি দৈনিক। একাডেমি সহ-আয়োজক মাত্র। সহ-আয়োজকের তকমা কেন একাডেমি বহন করবে? হে উৎসবের মান কী তা সবার জানা। এমন একটি অনুষ্ঠান ইংরেজি কোনো দৈনিক ও ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজন করলেই ভাল দেখায়। তবে, এ প্রশ্নও উত্থাপিত হওয়া দরকার, বাংলাদেশের একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান কেন ব্রিটিশ একটি অনুষ্ঠানের বাংলাদেশ সংস্করণ করতে যাবে? নিজেদের নামে করলে অসুবিধা কোথায়? ভারতে জয়পুর সাহিত্য উৎসব, মুম্বাই সাহিত্য উৎসব, কোভালাম সাহিত্য উৎসব হচ্ছে। বাংলাদেশে নিজস্ব ধরনের তেমন উৎসব হতে বাধা কোথায়? আর নিজস্ব ধরনের উৎসব করতে হলে আমাদের সাহিত্যের মুখ্যচিত্রটি তাতে তুলে ধরা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের সাহিত্যের কোনো প্রতিনিধিত্ব সেখানে সেভাবে দেখা গেল না। হে উৎসবের যে হাল দেখলাম তাতে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে বসে ইংরেজি ভাষায় লেখেন এমন লেখকদের লেখা সেখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিস্ময়কর হলেও সত্য, তুলে ধরা লেখকদের গ্রহণযোগ্যতা দেশে যেমন, দেশের বাইরেও তেমনি স্বীকৃত নয়। আর ঘটনাক্রমে এদের সঙ্গে আয়োজক ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলো আত্মীয়তার সম্পর্কে সম্পর্কিত। তবে কি সৃজনশীলতার ক্ষমতা নয়, স্পন্সর করার ক্ষমতাই তাদের সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দেবে?

আমরা সবাই জানি, ধনবলে বড়লোকরাই রাষ্ট্র-সমাজের মুরুব্বী ও পরিচালক। অবশ্য, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অনেকে মনে করে রাষ্ট্র ও সমাজের হর্তাকর্তা হওয়ার অধিকার বড়লোকের নাই। বিশেষত, এদের অনেকেই যখন লুটেরা শ্রেণী থেকে আসা এবং মানুষকে ঠকিয়ে, বঞ্চিত করে, জবরদখল কায়েম করে, ব্যবসায় এসপার-ওসপার করে, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা ঋণ নেবার পর ফেরত না দিয়ে অনেকেই যখন এদেশে বড়লোক হয়েছে। অর্থাৎ তারা কুপথে টাকা কামাই করেছে। মধ্যবিত্ত সমাজ নৈতিকতার পূজারি, তারা নৈতিক মানদণ্ড খাড়া করে বড়লোকদের ক্ষমতা-বঞ্চিত করতে চায়। রাজনীতি দখলে রাখতে চায়। মধ্যবিত্ত চরিত্রের গণমাধ্যম ও সাহিত্য সর্বদাই বড়লোকের দোষ খোঁজে। গণমাধ্যম অবশ্য ইতিমধ্যেই বড়লোকের কুক্ষিগত। গণমাধ্যমগুলো মধ্যবিত্তীয় নৈতিকতার ব্যবসা করে  শুধু মধ্যবিত্ত পাঠককে ভজানোর জন্য। অনেক সময় ছদ্মনৈতিকতা নির্মাণও করে। বস্তুত, বাজার অর্থনীতিতে সবকিছুই ক্রয়যোগ্য, নৈতিকতাও। নৈতিকতা এমনকি প্রয়োজনে ম্যানুফ্যাকচারও করা যায়। এতকিছুর পরও শিল্প-সংস্কৃতি জিনিশটা কীভাবে মধ্যবিত্তের দখলে থেকে যাচ্ছে তা গবেষণার বিষয়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিও মধ্যবিত্তের দখলছাড়া হওয়া উচিত। বাংলাদেশের চিত্রকলা ইতিমধ্যে বড়লোকের দখলে চলে গেছে বলে সে শিল্পে বিপুল অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধেরও একই পরিণতি হওয়া উচিত। তাতে এসবের গরিবিপনা কেটে গিয়ে সাহিত্যের জগতে একটা খোলা হাওয়া ও রোশনাই তৈরি হবে। সাহিত্যিকরা ক্ষমতাশালী ও অর্থশালীও হতে পারবেন। এরকম সম্ভাবনার লক্ষণ ইতিমধ্যে দেখা দিতে শুরুও করেছে। বড়লোকদের স্পন্সরশিপে নানা সাহিত্য পুরস্কারের মাধ্যমে এর শুভারম্ভ ঘটেছে।

বছর ছয় আগে আশির দশকের এক প্রখ্যাত কবির সাথে আমি গুলশানের কোনো এক সভাকেন্দ্রে গিয়েছিলাম। সেখানে এক বড়লোকের বই প্রকাশনার উৎসব। বড়লোকটি রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী। বয়সের হিসাবে তার আশির দশকের কবি হওয়ার কথা। তার বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে গিয়ে দেখলাম শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির মহাসম্মিলন। শুভ্রকেশ, শুভ্র পাঞ্জাবি বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপকরা, সব্যসাচী লেখকেরা তার কবিতা নিয়ে আলোচনা করছেন। ঢাকার প্রখ্যাত আবৃত্তিকাররা তার কবিতা থেকে পাঠ করছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীরা গান করছেন। এমনকি তার কবিতা অবলম্বনে একটি নৃত্যও পরিবেশিত হলো। কবির কবিতা নিম্নমানের। টাকা দিয়া তিনি এক সন্ধ্যার সাহিত্যিক হওয়ার বাসনা করেছেন। টাকার বিনিময়ে ঢাকা শহরের লোভী শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিসেবীরা তার সে বাসনায় ঘি ঢালছেন।
বড়লোকের সাহিত্য বাসনার এই এক রূপ।
অন্যরূপও দেখার ভাগ্য আমার হয়েছে। বছর চারেক আগে অমিতাভ ঘোষ ঢাকায় এসেছিলেন। তাকে কেন্দ্র করে একটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির অনুষ্ঠানে গিয়ে অবাক হয়েছিলাম। একথা সত্য যে, ইউনিভার্সিটির অনুষ্ঠানে বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন যাদের পেশাগত কারণে ইংরেজি পড়তে বা পড়াতে হয়। তারা অমিতাভের বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে আলোচনা করছিলেন। আবার ছাত্র-শিক্ষকদের বাইরের অনেকেও আলোচনায় অংশ নিচ্ছিলেন। বড়লোকদের এই সাহিত্যপ্রীতিতে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। টাকা কামাই করার পাশাপাশি, বড়লোকরা যে সাহিত্যপাঠ, সঙ্গীত শ্রবণে আনন্দ পান তা আমরা পুরনো বইপত্রে পেড়েছি। ব্যাপারটা বনেদী সামন্তীয় সংস্কৃতির অংশ ছিল। কিন্তু নব্য ধনিকদের মধ্যে এমন প্রবণতা সাধারণত দেখা যায় না। আমরা দেশে এ যাবত লুম্পেন পুঁজিপতিদের হঠাৎ সাহিত্য বাসনা দেখেছি। কিন্তু বড়লোকরা যে পড়ালেখা করে সাহিত্যের রস পানও করতে পারে তা দেখে প্রথমবারের মতো অবাক মেনেছিলাম।

আশার কথা, দেশে একটা বুর্জোয়া বিকাশ ঘটছে। লুটেরা বা ভাল পুঁজিপতিদের পরের প্রজন্ম মার্কেটে এসেছে। তারা উচ্চশিক্ষা লাভ করছে। বিদেশে পড়ে, বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে, বিদেশের জ্ঞানীগুণীদের সঙ্গে মিশে তাদের মধ্যে সাহিত্য-শিল্প সম্পর্কেও নানা আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। দেশের সাহিত্যের জন্য এটা ইতিবাচক। তবে, বড়লোকদের নাতি-পুতিরা বাংলা সাহিত্যে বিশেষ আগ্রহী হচ্ছেন না। তারা বরং ইংরেজি সাহিত্যের দিকেই বেশি উৎসাহী। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে শ্রেণী বিভাজন কায়েম হয়েছে স্বাধীনতার পর তাতে ইংরেজি ভাষা মোটামুটিভাবে বড়লোকের দখলে চলে গেছে। মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় থেকে ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে, এ ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে একমাত্র বড়লোকরাই ব্যয়বহুল পদ্ধতিতে ছেলেমেয়েদের ইংরেজি শেখানোর ব্যবস্থা করতে পেরেছে। প্রয়োজনে বিদেশে পাঠিয়ে ইংরেজির ওপর দখলটা তারা প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত চাইলেও সেটা পারছে না। দেখা যায়, মধ্যবিত্ত শ্রেণী হতে আসা ইংরেজি ভাষার অধ্যাপকও সন্তোষজনক ইংরেজি জানেন না। ভাষাগত এই শ্রেণী বিভাজন বড়লোকের সাহিত্যপ্রেমী সন্তানদের একটা সুবিধা দিয়েছে, তারা ইংরেজি ভাষায়  সাহিত্য করলেও মধ্যবিত্তের মধ্য থেকে কেউ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। ফলে, বাংলাদেশে ইংরেজি সাহিত্য প্রকারান্তরে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তারাই লেখে, তারাই পড়ে, তারাই সমালোচনা করে। এটি কি বিস্ময়কর নয় যে,  কোনো দেশের ইংরেজি ভাষার অধিকাংশ সাহিত্যিকই কোটিপতি বা কোটিপতির সন্তান? প্রত্যেক কালেই বড় লোকদের আলাদা সাবকালচার থাকে। যেমন, পুরনো রাশিয়ায় উচ্চবিত্তরা নিজেদের ভিন্নতা প্রতিষ্ঠা করতে ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলতো। ইংরেজি সাহিত্যের মাধ্যমে দেশে তেমন সাবকালচারের দেখা মিলছে।

বড়লোকের সাহিত্য নিয়ে মধ্যবিত্ত সাহিত্যিকদের প্রতিক্রিয়া বড়ই জটিল। সাহিত্যের দু’একজন মিডিয়েটর বড়লোকের সাহিত্য সম্পর্কে উদার মনোভাব পোষণ করলেও হরেদরে একটা প্রত্যাখ্যানই কাজ করে মধ্যবিত্তের মধ্যে। মধ্যবিত্ত মনে করে বড়লোকের সাহিত্যে দহন নাই, দুঃখবেদনাও নাই। ইত্যাদি ইত্যাদি। বড়লোকদের অর্থ প্রতিপত্তি ক্ষমতা নিয়ে হীনম্মন্যতা কাজ তো করেই। সেই বড়লোক যদি মধ্যবিত্তের দখলে থাকা সাহিত্যজগতে এসে ভাগ বসাতে চায় তবে ভীষণ দুঃখের কথা। ছোটলোকের সাহিত্যের ব্যাপারে মধ্যবিত্ত বরং অনেক উদার। শ্রমিক-মেহনতি-প্রান্তিক মানুষ সাহিত্য করলে মধ্যবিত্ত পিঠ চাপড়িয়ে দেয়। তাদের উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। কিন্তু বড়লোকরা সাহিত্য করলেই তারা ব্যথা অনুভব করে।
 
ফেস্টিভালের সীমাবদ্ধতা নিয়ে আগেই বলেছি। এ ফেস্টিভালের মধ্য দিয়ে আরও অনেক বিষয় সামনে চলে আসছে। সেগুলোর দিকেও নজর দেওয়া দরকার। যেমন-


১. বাংলাদেশে বড়লোকদের দ্বিতীয় প্রজন্ম তৈরি হয়েছে। তাদের একাংশ সাহিত্য মনস্ক, বিস্ময়কর হলেও এদের কারো কারো সাহিত্যিক হওয়ার বাসনাও আছে। এদের স্বাগত জানানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে, অর্থবলে তারা বড় সাহিত্যিক হতে চাইলে তাতে আপত্তি তো থাকবেই।


২. বড়লোকেরা বুঝতে পেরেছে নিজেদের মধ্যে ইংরেজি সাহিত্য চর্চা করে ব্রিটিশ কাউন্সিলে হে ফেস্টিভ্যালের উপসংস্কৃতি তৈরি করে লাভ নাই। মধ্যবিত্তের দখলে থাকা এলাকাগুলোই মূলত দখল করতে হবে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মিডিয়েটরদের সঙ্গে নিতে হবে। কিন্তু এর মাধ্যমে তারা বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর মাতবরি করতে তা যেন না হয়।


৩. একই সঙ্গে এটি সত্য, বাংলা একাডেমিতে হে ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করে তারা গরিবের এ প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিল। বড়লোকরা চাইলে তো হোটেল শেরাটনের ছাদে বা রেডিসনের পুকুরেও ফেস্টিভ্যাল করতে পারে। তা না করে তারা বাংলা একাডেমিকে বেছে নিয়েছে। কারণ তারা চায় গরিব সাহিত্যিক নির্ভয়ে তাদের সঙ্গে মিশুক। তাদের সঙ্গে কথা বলুক। ইংরেজি না জানলেও সমস্যা নাই।


৪. ইংরেজি সাহিত্যিক ও বাংলা সাহিত্যিকদের মিশ্রণ হয়েছে এমন একটা ভাব ডেইলি স্টার-প্রথম আলো সাহিত্যিকদের মধ্যে জাগাতে চেষ্টা করছে। এতে দেশের বড় সাহিত্যিকরা পর্যন্ত গোলামের মতো আচরণ করতে শুরু করেছেন। এই যে আন্তর্জাতিক একটা ভাব তারা দিতে পারলেন এটা আমাদের গরিব ও বয়স্ক সাহিত্যিকদের জন্য অত্যন্ত ভাল। অবশ্য এমন ভান করলেও শেষ পর্যন্ত আয়োজকরা নানা পর্যায়ে ইংরেজি ভাষার উচ্চম্মন্যতাই তুলে ধরেছেন। বাংলা ভাষার লেখকদের দেশীয় আর ইংরেজি ভাষার লেখকদের আন্তর্জাতিক বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।


৫. গুরুত্বপূর্ণ বলে আবারও একটি কথার পুনরুক্তি করছি, পাশের দেশ ইন্ডিয়ায় ওরা নানা ফেস্টিভ্যাল করে- জয়পুর লিটারারি ফেস্টিভ্যাল, হিন্দু লিটারারি ফেস্টিভাল। নিজেদের টাকা দিয়া নিজেরা করে। বিদেশিরা এসে দেখে যায়। হের মতো অপ্রধান ব্রিটিশ অনুষ্ঠান সেখানে পাত্তা পায় না। আমরা এক বোকার জাতি, এতদিন পর এসে কলোনিয়াল স্যাটেলাইট জ্বালাচ্ছি। বড়লোকরা টাকা খরচ করছে কিন্তু সেই তুলনায় বুদ্ধি কেন খরচ করছে না বুঝতে পারছি না।


৬. পরিশেষে হে উৎসবের সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনাটির উল্লেখ না করলেই নয়। ভারতীয় বাঙালি পরিচালক বেদাব্রত পাইনকে হে উৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তার পূর্বপুরুষ ঢাকা ও ফরিদপুরের। বেদাব্রত নির্মিত ‘চিটাগাং’ মুভিটি দেখানোর কথাও ছিল উৎসবে। চিটাগাং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা সূর্য সেনকে নিয়ে তৈরি। বিপুল প্রশংসিত এই মুভি হিন্দি ভাষায় নির্মিত। দুঃখজনক হলেও সত্য, হিন্দি ভাষার অপরাধেই নাকি আয়োজকরা মুভির প্রদর্শনী বন্ধ করে দিয়েছেন। হিন্দি কি অচ্ছুৎ ভাষা? নাকি হে উৎসবের মতো কলোনিয়াল ব্রিটিশ উৎসবে সূর্য সেনই অচ্ছুৎ হয়ে গেলেন?

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়