ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সেই চিঠি আর আসে না

নাবিল হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ৩০ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সেই চিঠি আর আসে না

প্রাণে প্রাণ মেলাতে আর হৃদয়ের গভীরতম কথাগুলো প্রিয়জনের কানে সঙ্গোপনে শুনিয়ে দেয়াই চিঠির দায়িত্ব ছিল। অবাধ ইন্টারনেট আর প্রযুক্তির এই যুগে চিঠিপত্রের আবেদন যেন আর টিকছে না।

যুগের পর যুগ মানুষের আবেগ-ভালোবাসার কথাগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ানোর মতো চিঠির খামে খামে পৌঁছে যেত আপনজনের হাতে। তীব্র আবেগে সেই চিঠি ঘরের কোণে মিটিমিটি আলোতে বসে বারংবার পড়তো প্রিয়জন। সেই মহানন্দের কাহিনী আজকাল শুধুই দাদা-দাদির মুখে মুখেই প্রচলিত।

মাঝে মাঝে আমার মাকে দেখা যায়, সেই পুরনো খাম থেকে আমার বাবার এবং তার বিনিময় করা চিঠিগুলো পড়তে। কখনো কেঁদে কেঁদে সাড়া, আবার কখনো কখনো খুশিতে পাগলপারা। এসব আবেগের রসদ কিন্তু চিঠিই জোগান দিয়েছে।

আবেদনময় সেই চিঠি এখন কেবল পরীক্ষার খাতায় মার্কস তোলার ক্ষেত্রেই চিঠি লিখতে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে কারিকুলামে যা শেখানো হয়, তা শুধুই পরীক্ষার খাতায় বন্দি। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করতে হবে।’ বাস্তবে আসলেই আমরা চিঠির ব্যবহার করছি কি?

চিঠির বিপরীতে এসেছে উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম। যেমন- ফেসবুক, ভাইবার, ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি। চোখের পলক পড়তে না পড়তেই নিজের মনের কথা কিংবা বার্তা পৌঁছে দেয়া যায় পৃথিবীর সকল প্রান্তে। তথ্যপ্রযুক্তির এই অবাধ প্রবাহ বিশ্বটাকে খুবই সংকুচিত করে দিয়েছে, যাকে প্রচলিত ভাষায় বলা হয় ‘বিশ্বগ্রাম’। এর সুফলের পাশাপাশি কুফলগুলোও খুবই গুরু ধরনের। তাই বলে কি চিঠির কোনো গুরুত্বই রইলো না?

আমরা খুব সহজেই যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। খুব কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া বার্তাগুলো খুব কম সময়ই মনের স্টোরেজে থাকে, অথচ চিঠিতে পাওয়া প্রত্যেকটা শব্দই যেন কতটা আবেগজড়িত, কতটা স্নিগ্ধ। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান তার স্ত্রীকে যেই চিঠি পাঠিয়েছিলেন, সেটা কে না পড়েছে! আব্রাহাম লিংকনের তার পুত্রের শিক্ষকের প্রতি চিঠির কথাও অবিস্মরণীয়। চিঠিকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে কতশত গান আর কবিতা।

দু’তিন যুগ আগেও ভালোবাসার প্রথম আবেদন পাঠানোর একমাত্র মাধ্যম ছিল চিঠিপত্র। সেই ভালোবাসাও যেমন আজ বিলীন, তেমনি চিঠির আদান-প্রদানও নেই। সময় এসেছে চিঠির ব্যবহার বাড়ানোর। চিঠিই পারে মনের মনিকোঠায় এঁকে দিতে ভালোবাসা পরম অনুভূতি।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


ঢাবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়