ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মূলধন ঘাটতি পূরণে শর্ত পালন না করলে ব্যবস্থা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মূলধন ঘাটতি পূরণে শর্ত পালন না করলে ব্যবস্থা

কেএমএ হাসনাত : রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে যে শর্ত দেওয়া হয়েছিল সেগুলো যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। চিঠিতে শর্ত পূরণের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানাতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো তথ্যে কোনো ব্যাংক মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকার প্রদত্ত শর্ত পূরণে ব্যর্থ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, ঋণ বিতরণে বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে পর্যাপ্ত মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সরকারও প্রতিবছর শর্তসাপেক্ষে মূলধন ঘাটতি পূরণে টাকা দিচ্ছে। তারপরও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। এ অবস্থায় মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকার প্রদত্ত সহায়তা সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এতে সরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন সংকটে পড়ছে। রাজনৈতিক চাপ ও ব্যাংকে অব্যবস্থাপনার কারণে মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। আর এর খেসারত দিতে জনগণের ঘাড়ে করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর বাদে ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে প্রতি অর্থবছরই সরকারি ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে ৫ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দফায় দফায় পূরণ করা হয়েছে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি। তবে মূলধন ঘাটতি পূরণে অর্থ বিভাগ থেকে চারটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। এগুলো হলো- অর্থ ব্যয়ে প্রচলিত সব আর্থিক বিধি-বিধান এবং অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। মূলধন পুনর্ভরণ ছাড়া এ অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না। ব্যাংকটির অটোমেশন এবং বিজনেস প্ল্যান বাস্তবায়নের অগ্রগতি, বিশেষ করে, পুঞ্জিভূত খেলাপি ঋণের বৃদ্ধি/হ্রাস ত্রৈমাসিকভিত্তিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে জানাতে হবে। সর্বশেষ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পর্যালোচনা সভা আয়োজন এবং সভার কার্যবিবরণী অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, মূলধন পুনর্ভরণ বাবদ অর্থ পাওয়ার পর ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধনের চেয়ে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ বেশি হলে মেমোরেনডাম অব অ্যাসোসিয়েশন সংশোধন করতে হবে বলে শর্ত দেওয়া হয়। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির পরিমাণ না কমায় এসব শর্ত পূরণ হচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখতে চাইছে সরকার। বিশেষ করে মূলধন ঘাটতির টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা জানতে চাইছে সরকার।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। মূলত অর্থ বিভাগের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এসব তথ্য জানতে চেয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো তথ্যে কোন ব্যাংক যদি শর্ত পূরণে ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয় তাহলে সে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে মূলধন ঘাটতি পূরণে কোনো ব্যাংক টাকা চাইলে শর্ত পূরণের দিকগুলো বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি চলতি অর্থবছরের বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও বছর শেষে ১ হাজার ৮০০ কোটি দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধু বেসিক ব্যাংককেই দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে মূলধন ঘাটতি মেটাতে দুই ধাপে ব্যাংকগুলোকে ৪ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা দেয় সরকার।

বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সরকারি ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি বেড়ে চলেছে। যা ব্যাংক খাতের জন্য মোটেও ভালো খবর নয়। গত সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি সাত ব্যাংকই ঘাটতিতে পড়েছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।

মূলধন ঘাটতির তালিকার শীর্ষে রয়েছে সোনালী, বেসিক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এ তালিকায় থাকা অন্য পাঁচ ব্যাংক হলো জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুনে সরকারি খাতের সাত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ১৪ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। আর মার্চে মূলধন ঘাটতি ছিল ৫ ব্যাংকে। এই ব্যাংকগুলোর ঘাটতি ছিল ১৩ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে মূলধনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ৬ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, জুনে যা ছিল ৭ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪২৩ কোটি টাকার ঘাটতি বেসিক ব্যাংকের, জুনে যা ছিল ২ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এরপরে সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, জুনে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা।

এ ছাড়া সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। জুনে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ঘাটতি ৭৭১ কোটি টাকা, জুন শেষে মূলধন ঘাটতি ছিল ৬৬৪ কোটি টাকা। তবে সেপ্টেম্বরে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২০০ কোটি টাকা থেকে কমে ১১২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭২৬ কোটি টাকা, জুনে এর পরিমাণ ছিল ৬৯৯ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর আর্থিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার অন্যতম পরিমাপক হচ্ছে মূলধন পর্যাপ্ততা। আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং নীতিমালা ব্যাসেল-৩-এর আলোকে ব্যাংকগুলোর মূলধন রাখতে হচ্ছে। এর আগে ব্যাসেল-২ নীতিমালার আলোকে ন্যূনতম ৪০০ কোটি টাকা অথবা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ, এর মধ্যে যেটি বেশি সে হারে মূলধন রাখতে হতো। এখনো একই হারে মূলধন রাখতে হচ্ছে। তবে পরিবর্তনটা এসেছে উদ্যোক্তা মূলধন রাখার বেলায়। এখন ১০ শতাংশের মধ্যে উদ্যোক্তা মূলধন রাখতে হচ্ছে ন্যূনতম সাড়ে ৪ শতাংশ। এ ছাড়া ব্যাংকিং পরিভাষায় টিআর-১ ও টিআর-২ নামে পরিচিত ঘরে আলাদাভাবে মূলধনের হিসাব করা হচ্ছে। নতুন এ নীতিমালা বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো ২০১৯ সাল পর্যন্ত সময় পাবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়