ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পাঁচ সন্তানই যার বাক প্রতিবন্ধী

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাঁচ সন্তানই যার বাক প্রতিবন্ধী

প্রতিবন্ধী তিন মেয়ের সঙ্গে বাবা-মা

মাগুরা প্রতিনিধি: মাগুরার হতদরিদ্র বেলায়েত বিশ্বাসের পাঁচ সন্তানই বাক প্রতিবন্ধী। এদেরই দুজন আবার দৃষ্টি-প্রতিবন্ধিও।এই পাঁচটি প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বেলায়েত বিশ্বাস এখন জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত ।

মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলাধীন শ্রকোল ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের এই অশীতিপর বৃদ্ধের বসবাস।ভূমিহীন, দারিদ্র-পীড়িত বেলায়েত বিশ্বাস আট ছেলেমেয়ের বাবা। চার মেয়ে আর চার ছেলে।  চারটি মেয়েই প্রতিবন্ধী, এদের একজন দু’বছর হলো মারা গেছেন ।বাকী  চার ছেলের মধ্যেও একজন প্রতিবন্ধী।

হতভাগ্য বাবা বেলায়েত বিশ্বাসের দু’টি ছেলেই তার দারিদ্র-পীড়িত জীবন থেকে সরে গেছে। তারা আলাদা সংসার গড়েছে। যে ছেলেটি প্রতিবন্ধী ভাইবোনসহ বৃদ্ধ বাবা ও মাকে নিয়ে দিন মজুরি করে জীবন সংগ্রামে নিয়োজিত তিনি ও দুই সন্তানের বাবা। নাম ইব্রাহিম বিশ্বাস।

বেলায়েত বিশ্বাসের বাড়িতে ঢুকতেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাদের চরম আর্থিক দৈন্যতার দিকটি। ঘরের বারান্দায় বসা ছিল প্রতিবন্ধী মেয়েগুলো। পাওয়া গেল ইব্রাহিমকেও।

এক প্রশ্নের উত্তরে ইব্রাহিম বললেন, ‘আমার বড় দু’ভাই এই অভাবের জ্বালা সহ্য করতে চায়নি। তাই তারা প্রতিবন্ধী ভাইবোন এবং বুড়ো বাবা ও মাকে ফেলে আলাদা সংসার করছেন। কিন্তু আমি ওদেরকে ফেলে যেতে পারিনি। তাই অপরের জমিসহ বিভিন্ন বাড়িতে দিন মজুর হিসেবে কাজ করে যা আয় করি তাই দিয়েই ৯ জন লোকের এতো বড় সংসারের খরচ চালাই। কাজেই কোনদিন একবেলা আবার  কোনদিন দুইবেলা খাবার খাই। এভাবেই কাটে আমাদের দিন।’

তিনি আরও জানালেন, প্রতিমাসে বয়স্ক ভাতা হিসাবে বাবা ৩০০ টাকা আর প্রতিবন্ধী হিসাবে শুধুমাত্র বড়বোনটাই ৩০০ টাকা পান।দু’জনের এই ৬০০ টাকাই তাদের পরিবারের স্থায়ী উপার্জন। তবে, এসব ভাতা আবার পাওয়া যায় তিনমাস পর পর ।

জরাজীর্ণ ঘরের বারান্দায় বসে থাকা বেলায়েত বিশ্বাসের বৃদ্ধা স্ত্রীর আঁকুতি  ‘বাবারে এই বুড়া বয়সে না খেয়ে থাকার কষ্ট তো আছেই। তার সাথে সাথে এই অবুঝ বোবা-কানাদের ব্যাথা যে আর সহ্য হয় না। তোমরা কি এমন একটা ব্যবস্থা করতে পার যাতে আমরা প্রতিদিন দু’বেলা ভাত অন্তত:পক্ষে পাই।’

অশীতিপর বেলায়েতও যেন বলতে চান অনেক কথাই। কিন্তু তার কোন কথাই এখন আর বোঝা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়  তার করুণ অভিব্যক্তি।

এ গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র রেজাউল করীম এই পরিবারের অসহায় অবস্থা প্রসঙ্গে বললেন, ‘এই অস্বাভাবিক পরিবারটির আর্থিক অনটন আর অসহনীয় কষ্ট প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের জন্যও  পীড়াদায়ক।’

বেলায়েত বিশ্বাসের পরিবারের অসহায় অবস্থা প্রসঙ্গে শ্রীকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুসতাসিমবিল্লাহ সংগ্রাম বললেন, ‘দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত এ পরিবারের প্রতিবন্ধী সদস্যসহ অন্যান্য সদস্যদের দুরাবস্থা সম্পর্কে আমি জানি এবং সে কারণে তাদের দু‘জন সদস্যের জন্য বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি।’ এসময়  এ পরিবারের আর একজন প্রতিবন্ধীর জন্য ভাতা বরাদ্দেরও আশ্বাস দেন তিনি।

বেলায়েত বিশ্বাসের পরিবারের দুরাবস্থা সম্পর্কে আলাপকালে শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ঝুমুর সরকার বলেন, ‘আমি এখানে যোগ দিয়েছি বেশিদিন হয়নি। তবে, আমি নিজে এই পরিবারের অবস্থা পরিদর্শনে যাব অচিরেই এবং এই পরিবারের কল্যাণে সম্ভব সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’




রাইজিংবিডি /মাগুরা/ ৩ এপ্রিল ২০১৭/ মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়