ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তাঁতপল্লিতে ব্যস্ততা : ২ কোটি শাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৯ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তাঁতপল্লিতে ব্যস্ততা : ২ কোটি শাড়ি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

শাহরিয়ার সিফাত, টাঙ্গাইল : উৎসব কিংবা পার্বণ, যেকোনো বাঙালি অনুষ্ঠানেই নারীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে থাকে শাড়ি। আর যদি উৎসবটি হয় বৈশাখ। তাহলে তো কথাই থাকে না।

বাঙালির নিজস্ব উৎসব পয়লা বৈশাখে নতুন শাড়ি না হলে ললনাদের বৈশাখী আনন্দ যেন পরিপূর্ণ হয় না।

আসন্ন বাংলা নববর্ষের শাড়ির চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতের শাড়ির রাজধানী হিসেবে খ্যাত টাঙ্গাইলের পাথরাইলের তাঁত শ্রমিকেরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আসন্ন বৈশাখে দেশের শাড়ির বাজারে দুই কোটি পিস শাড়ি বিক্রির আশা করছেন তারা।

অপরদিকে কারিগরেরা বলছেন, শাড়ি তৈরি করলেও কাঙ্খিত মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

শনিবার সরেজমিনে পাথরাইলের তাঁতপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, আলো আঁধারির তাঁতশাড়ির ছোট্ট কারখানায় অবিরাম তাঁত বুনে যাচ্ছেন কারিগরেরা। ভোর হতে তাদের তাঁতের খটখট শব্দে মুখর হচ্ছে পুরো তাঁতপল্লি। এই পেশার সঙ্গে কেউ জড়িয়ে আছেন ১০ বছর, আবার কেউ বা পৈত্রিক সূত্রে জন্মের পর থেকেই। কিন্তু রঙিন শাড়ি বুনলেও জীবনের রঙ খুব একটা বদলাতে পারেননি এই পেশার সঙ্গে জড়িতরা।

পাথরাইল তাঁতপল্লির কয়েকশ’ কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ১০ হাজার কারিগর। বৈশাখ সামনে রেখে তাদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে দিনে-রাতে অন্তত ১২ ঘণ্টা। বৈশাখ উপলক্ষে লাল-সাদা রঙের তাঁত শাড়িই তৈরি হচ্ছে বেশি। তার সঙ্গে গতানুগতিক তসর, এন্ডি, ডেনু সিল্ক, জামদানির ওপর চুমকির কাজসহ বাহারি ডিজাইনের শাড়ি তো রয়েছেই।

শ্রমিকেরা বলছেন, দৈনিক ১২ ঘণ্টা করে তাঁত বুনলেও তাতে মজুরি মিলছে মাসে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। আর তাতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে সংসার চালানোই কষ্টকর। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে অন্যের নতুন শাড়ি বুনলেও অর্থাভাবে পরিবারের সদস্যদের নতুন পোশাক দিতে পারেন না তারা।

তাঁত কারখানার শ্রমিকদের জীবনের চিত্রটা বিষাদে ভরা থাকলেও তাঁতপল্লির শো-রুমগুলোর দৃশ্য বেশ জমকালো। বৈশাখ সামনে, তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শাড়ি কিনতে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকার ও সাধারণ ক্রেতারা।

রাজধানী থেকে আসা আনিসুল নামে এক পাইকার বলেন, দেশের অন্যান্য তাঁতপল্লি থেকে এখানকার শাড়িগুলো সুতা আর রঙে ভালো। পাশাপাশি টেকসইও। তাই বৈশাখ আর অন্যান্য উৎসবে এখান থেকেই শাড়ি নিয়ে যাই।

তবে খুচরা ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরগুলোর তুলনায় এবার বৈশাখী শাড়ির দামটা সামান্য চড়া। গেল বছর যে শাড়িগুলো ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবার সেই শাড়িগুলোই ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের এমন অভিযোগ স্বীকার করে তাঁত শাড়ির ডিজাইনাররা বলেন, সুতার মূল্যবৃদ্ধি আর শ্রমিক সংকটের কারণে গত বছরগুলোর তুলনায় এবার দাম বেড়েছে বৈশাখী শাড়ির।

পাথরাইলের পাইকারি তাঁত শাড়ি বিক্রেতা যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানির স্বত্ত্বাধিকারী খোকন বসাক বলেন, দেশের প্রায় ৪৬ শতাংশ নারী টাঙ্গাইলের শাড়ি পরে। আর বিভিন্ন উৎসবে এই শাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। পয়লা বৈশাখ বাঙালির মনের-প্রাণের উৎসব। এই উৎসব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি একসঙ্গে উপভোগ করে। বৈশাখী শাড়িগুলো এখন আর লাল-সাদাতেই সীমাবদ্ধ নয়। লাল-সাদার পাশাপাশি এবার অন্যান্য রঙের শাড়িও বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে শাড়ির ডিজাইনে আনা হয়েছে নতুনত্ব। এই বৈশাখী শাড়িগুলো দামেও হয় কম। তাই কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় শাড়ির দাম বাড়ানোর পরও আমাদের লাভ হচ্ছে খুব সামান্য। মজুরি নিয়ে শ্রমিকদের অসন্তোষ ছাড়াও আছে আনুষঙ্গিক সমস্যা। তারপরও বৈশাখকে সামনে রেখে আমরা পাথরাইলের ব্যবসায়ীরা দেশের বাজারে প্রায় ২ কোটি শাড়ি বিক্রির আশা নিয়েছি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা।




রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/৯ এপ্রিল ২০১৭/রুহুল/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়