ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘ইপিজেডে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার’

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২০ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ইপিজেডে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার’

সচিবালয় প্রতিবেদক : দেশের ইপিজেডে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনে সরকার বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

মন্ত্রী বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশে সফররত জার্মানির ফ্রেডরিখ ইবার্ট স্টিফাঙ্গের (এফইএস) ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাইকেল সোমারের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের জার্মানির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও কর্মবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে শ্রম আইন সংশোধন করে সময়োপযোগী করা হয়েছে। ইপিজেডে শ্রমিক ইউনিয়নের আদলে ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন গঠনের অধিকার দেওয়া হয়েছে। শ্রমিকরা সেখানে মালিক পক্ষের সঙ্গে দরকষাকষি করতে পারছেন, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে। শ্রম আইন মেনেই এ অ্যাসোসিয়েশন গঠনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে শ্রমিক ও বিনিয়োগকারী উভয়পক্ষই সন্তুষ্ট।

‘এককথায় শ্রমিকরা কারখানায় নিরাপদে কাজ করছে। তারপরও ইপিজেডে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে সরকার বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে’ বলেও জানান তিনি।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশে সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। দেশটি বাংলাদেশের বড় রপ্তানি বাজার। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাংলাদেশকে এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ)-এর আওতায় জিএসপি সুবিধা প্রদান করছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৫৫ ভাগ আসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে। একক দেশ হিসেবে জার্মানি বাংলাদেশে দ্বিতীয় বড় রপ্তানি বাজার। অপ্রত্যাশিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর সরকার এবং কারখানার মালিকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং গৃহীত পদক্ষেপের কারণে আর কোনো এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার শ্রমিকদের বিষয়ে খুবই আন্তরিক। অপ্রত্যাশিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে নিরাপদ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ক্রেতা গোষ্ঠীর অনুরোধে  অ্যাকোর্ড, অ্যালায়েন্স এবং ন্যাশনাল ইনিসিয়েটিভ দেশের তিন হাজার ৮০০ তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে তিন হাজার ৭৮০টি কারখানা পরিদর্শন শেষ করেছে।

সরকারি পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, এর মধ্যে ৩৯টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং ৪৭টি কারখানা আংশিক ত্রুটি থাকায় সেগুলো সংস্কার করা হয়েছে। অযোগ্য কারখানার সংখ্যা দুই শতাংশের নিচে। আন্তর্জাতিকভাবে দুই শতাংশের ওপরে গ্রহণযোগ্য।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন গ্রিন ফ্যাক্টরি গড়ে উঠছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড স্টেট গ্রিন কাউন্সিল পৃথিবীর যে ১০ তৈরি পোশাক কারখানাকে এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইডি) সার্টিফিকেশন দিয়েছে তার মধ্যে সাতটিই বাংলাদেশের। গ্রিন ফ্যাক্টরি নির্মাণে বিপুল বিনিয়োগ হলেও ক্রেতারা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করছে না, বরং মূল্য কমছে।

তিনি বলেন, দেশের আটটি ইপিজেডে প্রায় ৪ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। বাইরের শ্রমিকদের চেয়েও তারা বেশি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। এখানকার শ্রমিকরা চান নিজেদের মধ্যে শ্রমিক সংগঠন তৈরি করতে। বাইরের কাউকে তারা নিজেদের নেতা নির্বাচন করতে চান না।

বৈঠক শেষে জার্মানির প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল সোমার বলেন, জার্মানি বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং ভলো বন্ধু। জার্মানি বাংলাদেশের সঙ্গে আরো বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ শ্রমিকদের জন্য যা কিছু করেছে, তা প্রশংসার যোগ্য। বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বাংলাদেশে শ্রমিকরা নিরাপদ। জার্মানি চায় আইএলও নির্ধারিত শ্রম আইন চালু থাকুক।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিঞ্জ,  এফইএসর এশিয়া অ্যান্ড দি প্যাসিফিকের প্রধান জুর্জেন স্টেটিটেন, বাংলাদেশের রেসিডেন্ট রিপ্রেজেনটেটিভ ফ্রানজিসকা কর্ন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সী শফিউল হক, অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মো. শফিকুল ইসলাম, ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক মুনির চৌধুরী প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৭/নঈমুদ্দীন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়