ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

'প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৪৫০ কোটি টাকা দেওয়ার তথ্য মিথ্যা'

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ১৮ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
'প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৪৫০ কোটি টাকা দেওয়ার তথ্য মিথ্যা'

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ইসলামী ব্যাংকের ৪৫০ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আরাস্তু খান।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মতিঝিলে ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের পঞ্চম তলায় মোহাম্মদ ইউনুস অডিটোরিয়ামে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আরাস্তু খান।

তিনি বলেছেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের যাকাত ফান্ডে টাকা আছে ২৮ কোটি। তাহলে আমরা কীভাবে ৪৫০ কোটি টাকা দেব প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে? এটা যে বলেছে তা তার নিজস্ব বক্তব্য। এটা সম্পূর্ণ অসত্য। এ বিষয়টা সবার সামনে স্পষ্ট করা প্রয়োজন বলেই এই আয়োজন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিগত ৩৪ বছরে ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ডে জমা হয়েছে ৩৪৭ কোটি টাকা। এর থেকে ১৭৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ট্যাক্সের জন্য কিছু টাকা রাখা আছে। সেটা বাদ দিলে থাকে মাত্র ২৮ কোটি টাকা। কিন্তু কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদনে এসেছে যে আমরা ৪৫০ কোটি টাকা প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে প্রদান করব। আসলে এ ধরনের কোনো কথাই হয়নি।’

‘গতকাল আমাকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ডাকা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আমার ৪০ মিনিট কথা হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আমাকে প্রশ্ন করেছেন যে, আমরা এটা কীভাবে বললাম? এটার মানে কী? তিনি মনে করেছিলেন, এ কথা বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আমি তাকে বুঝিয়েছি যে, এটা আমাদের বোর্ডের কোনো সিদ্ধান্ত বা বক্তব্য নয়। এটা যে বলেছে, আসলে তার তো ধারণাই নাই যে, জাকাত ফান্ডে ৪৫০ কোটি টাকা নাই। আর এই ৪৫০ কোটি টাকা আমাদের নিট প্রফিট,’ বলেন আরাস্তু খান।

ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আবার বলাও হয়েছে যে, বোর্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট দিচ্ছে না। বোর্ডের সিদ্ধান্ত কী ম্যানেজমেন্ট ফেলতে পারে? জাকাত নিয়ে আমাদের মাঝে যে আলোচনা হয়েছিল, সেটা হলো তিন মাসের একটা পরিসংখ্যান হয়, জাকাত কত আছে? এই জাকাতের ট্যাক্স কী জাকাতের টাকা থেকে দেওয়া হবে কি না? নাকি আমাদের প্রফিট থেকে দেওয়া হবে? তখন সিদ্ধান্ত হয় প্রফিট থেকে দেওয়া হয় জাকাতের ট্যাক্স। কিন্তু তিনি (সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ) জানিয়েছেন, ৪৫০ কোটি টাকা দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে। তিনি ব্যাংকের গোপনীয়তা রক্ষা করা থেকে সরে গিয়ে এই কাজটি করেছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে, গত বোর্ড সভায় সিএসআর সুবিধাভোগীদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। কেন আমি এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাব? তারা কি চোর? এ কথাও তিনি বলেছেন। এ ছাড়া সকল নিয়ম-নীতি মেনে ব্যাংকের ১৯ কোটি টাকা শিক্ষাবৃত্তি বিতরণ হয়ে থাকে। শিক্ষাবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খতিয়ে দেখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি ( সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ)। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বোর্ড সভায়।’ 

এর আগে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ জানিয়েছিলেন, এখন থেকে ইসলামী ব্যাংকের জাকাতের অর্থ সরাসরি বণ্টন না করে তা প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পরিষদ মনে করছে, ব্যাংকটির করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর), জাকাত এবং ইফতার খাতে ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থ যাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিদের লালনে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ লিখেন, 'অশুভ শক্তির ইশারায় আমার শত চেষ্টার পরেও রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি পুনর্বাসিত হয়েছে এবং জাতির পিতার খুনিদের সাথে সংশ্লিষ্টরা ফিরে আসছেন নেতৃত্বে। আগামী বৎসর এই ব্যাংকটিকে রাষ্ট্রবিরোধী কাজে ব্যবহার করার নীলনকশা সম্পাদন হচ্ছে।'

সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজের ফেসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে আরাস্তু খান আরো বলেন, ‘এই স্ট্যাটাস দেওয়ার পরে আমি তাকে ফোন করেছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম, আপনি একটু ওয়েট করতে পারতেন। আমি ৫ ঘণ্টা পরে দেশে ফিরব। পরে যখন তাকে বোর্ড মিটিংয়ে ডাকা হলো, তখন তিনি বলেছেন, তাকে পদত্যাগ করতে ফোর্স করা হচ্ছে। কে বলেছে, সেটা আমাকে বলেননি। এ বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছি।’

‘আমরা এখানে ভালো কিছু করতে এসেছি। সবাই কিন্তু অনেক সৎ। এমনটি তিনিও (ভাইস চেয়ারম্যান)। কিন্তু, আমি জানি না, তিনি কেন এগুলো করেছেন। সরকার, ব্যাংক, বোর্ড এবং ম্যানেজমেন্টের ভাবমূর্তি নষ্ট করার কোনো অধিকার তার নাই।’

ভাইস চেয়ারম্যানের পদত্যাগের প্রসঙ্গে ইসলামী ব্যাংক চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বাধীন পরিচালক হিসেবে যদি উনি নিজে পদত্যাগ করেন, সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই। এটা আমার ব্যাপার না। তার থাকা বা পদত্যাগ নিয়ে ব্যাংকের ভেতর থেকে কোনো চাপ নেই।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মে ২০১৭/নাসির/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়