ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রমজান ও ঈদের কেনাকাটায় ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি সম্পন্ন

শায়েখ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৯ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রমজান ও ঈদের কেনাকাটায় ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি সম্পন্ন

শায়েখ হাসান : ক’দিন পরেই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। তার এক মাস পরেই ঈদুল ফিতর।

রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে এরই মধ্যে ব্যস্ততা বেড়েছে অভ্যন্তরীণ বস্ত্র উৎপাদক প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী রমজান ও ঈদের কেনাকাটার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

বসে নেই দেশের নামিদামি শপিং মল, ফ্যাশন হাউস ও পাড়া-মহল্লার বুটিক-বাটিক দোকানগুলোও। দেশীয় পোশাকে হরেক রঙ আর ঢংয়ে সাজাতে ব্যস্ত এই শ্রেণির উদ্যোক্তারা। শবেবরাতের পর থেকেই এ সব উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ও পাইকারদের ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসার জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ঢাকায় ভিড় বেড়েছে রাজধানীর বাইরের (জেলা ও উপজেলা পর্যায়) ব্যবসায়ীদের। তবে অধিকাংশ পাইকারি মার্কেট জমে উঠলেও খুচরা পর্যায়ের সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এখনো জমে উঠেনি।

এবার ঈদকে কেন্দ্র করে ৩০ হাজার কোটি টাকার পণ্য বিক্রির টার্গেট করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ব্যবসায়ীদের শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আসন্ন বাজেট। রমজানের শুরুতেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। বাজেটে যদি সম্পূরক শিল্প ও মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা হয়, তাহলে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তি থাকতে পারে। এতে বেচাকেনায় প্রভাব পড়তে পারে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা।

রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির নেতাদের দাবি, সারা বছরের ব্যবসায়ের জন্য রমজান মাস তাদের টার্নিং পয়েন্ট। এ সময়টিকে কোনো ব্যবসায়ীই হেলায় নষ্ট করতে চান না। তাই পাইকারি ব্যবসায়ী, আমদানিরকারক ও অভ্যন্তরীণ উদ্যোক্তারা ব্যাংকের সঞ্চিত অর্থ, ঘরের জমানো টাকা ব্যয় করা ছাড়াও ঋণ করে, ধার করে কিংবা জমি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধক রেখে ঈদকেন্দ্রিক বিনিয়োগে খাটাচ্ছেন।

রাজধানীর ইসলামপুর, নবাবপুর, চকবাজার, উর্দুরোড, সদরঘাট, গুলিস্তান, বঙ্গবাজার এলাকার পাইকারি মার্কেটসসহ বিদেশি পণ্যের আমদানিকারক মার্কেট হিসেবে পরিচিত পলওয়েল, বসুন্ধরা, গাজী ভবন এবং অন্যান্য শপিং মল ও মার্কেটে ঈদকেন্দ্রিক পাইকারি বিনিয়োগের পরিমাণ কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্যস্ততা চরম আকার ধারণ করেছে উর্দুরোডে পাইকারি মার্কেট, দেশি-বিদেশি থান কাপড়ের সর্ববৃহৎ পাইকারি মার্কেট ইসলামপুরে, পাঞ্জাবির বৃহত্তর পাইকারি মার্কেট সদরঘাটসহ পলওয়েল সুপার মার্কেট, গুলিস্তান হকার্স মার্কেট, নাজিরাবাজার, রাজধানী সুপার মার্কেট, গ্রেটওয়াল সুপার মার্কেট ও চকবাজারের মতো পাইকারি মার্কেটে।

ইতিমধ্যে ঢাকার পাইকারি মার্কেটে সারা দেশের ক্রেতাদের বিচরণ শুরু হয়েছে। সব ধরনের পাইকারি ব্যবসায়ী কম-বেশি অর্ডার সরবরাহ দিচ্ছেন। একই সঙ্গে ক্রেতাদের কাছ থেকে পাইকারি পর্যায়ের বিপুল অর্ডারও নিচ্ছেন। এ সব বিনিয়োগকৃত অর্থের বেশিরভাগই ব্যবসায়ীরা নিজস্ব গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে খাটিয়েছেন। অনেকে আবার আমদানির জন্য এলসি খুলেছেন। ফলে পাইকারি পোশাকের বাজার আর নামিদামি শপিং মলগুলোতে রমজান শুরু হওয়ার আগেই ঈদের বাতাস বইতে শুরু করেছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকার ওইসব পাইকারি মার্কেটে শবেবরাতের পর থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে পোশাক ক্রয় করছেন। আর ক’দিন পরেই এ সব মার্কেট থেকে সরবরাহ করা তৈরি পোশাক সারা দেশের মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোতে শোভা পাবে।

রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোতে অবস্থিত বিদেশি ব্র্যান্ড ও আউটলেটগুলোতেও ঈদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। প্রস্তুতি চলছে অনলাইনভিত্তিক পোশাক ও গিফট আইটেম বিক্রির প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদেরও। এমনকি যারা বুটিকসের কাজ করেন বা স্বল্প পরিসরে পোশাক নিয়ে কাজ করেন তারাও ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর ডিজাইনার এবং ফ্যাশন হাউজগুলোর প্রচারণার জন্য মিডিয়াকেন্দ্রিক যোগাযোগ এবং কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেছে।

ফ্যাশন ডিজাইনার এবং উদ্যোক্তা রিজুয়ানা আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে এখন সবাই পণ্যের গুণগত মানের পাশাপাশি প্রচারণায়ও জোর দেন। এজন্য বিভিন্ন ফ্যাশন ম্যাগাজিন, টেলিভিশনের বিভিন্ন শো’তে কিংবা ফ্যাশন কার্নিভালগুলোতে নিজেদের অংশগ্রহণ বাড়াচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি ব্যবসায়িক একটি ইমেজও সৃষ্টি হয়।’

এদিকে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বঙ্গবাজার ও ফুটপাতেও ঈদের জন্য বিশেষ আয়োজন চলছে। পুরান ঢাকার বংশাল, নাজিরাবাজার এলাকায় শত শত জুতার দোকানে দিন-রাত কাজ চলছে জুতা সরবরাহের জন্য।

ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব বলেন, ‘ঈদের প্রস্তুতি ভালো। ব্যবসায়ীরা প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন। শহরের যানজট ও দোকান খোলা রাখার সময় নিয়ে বরাবরই কিছুটা সমস্যা হয়। এ ছাড়া  বাজেটে সম্পূরক শিল্প ও মূল্য সংযোজন করারোপ নিয়ে একটি শঙ্কা রয়েছে।’ তবুও একটি কাঙ্খিত ব্যবসা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ মে ২০১৭/শায়েখ/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়