ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুখের ১৬ উপায়

মোহাম্মদ আসিফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৪ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুখের ১৬ উপায়

প্রতীকী ছবি

মোহাম্মদ আসিফ: বলা হয়ে থাকে, সুখ এবং কাজ- সব সময় হাতে হাত রেখে এগিয়ে চলে না। ২০১৩ সালে ১৮ মিলিয়ন লোকের ওপর পরিচালিত এক  গবেষণা থেকে জানা যায়, এই বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ হাসিখুশিভাবে তাদের কাজ করছে।

গবেষণায় এটিও জানা যায় যে, যারা কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রফুল্ল রাখে বা হাসিখুশি থাকে তারা অসুখী সহকর্মীদের তুলনায় ৩৬ শতাংশ বেশি অনুপ্রাণিত থাকে, ছয়গুণ বেশি সক্রিয় থাকে এবং তারা অন্যদের তুলনায় দ্বিগুণ উৎপাদনশীল।

জিনগতভাবে একজন মানুষের মধ্যে প্রফুল্লতার হার ৫০ শতাংশ। বাকিটা নিজের ইচ্ছা এবং চেষ্টার ওপর নির্ভর করে। অর্থাৎ প্রফুল্ল থাকার বিষয়টি যখন নিজের ওপর নির্ভর করে তখন আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে কোন কাজটি আপনাকে আনন্দ দেয়। আর একবার যখন আপনি সুখে থাকার পথ খুঁজে পাবেন তখন অন্য সব কিছু নিয়ে ভাবনার দরকার পড়বে না। নিজেকে সুখী রাখা শুধু কর্মক্ষমতাকেই বৃদ্ধি করবে না বরং এটি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

সুখী মানুষদের মধ্যে যে গুণ কাজ করে সেটি হলো তাদের আবেগজনিত বুদ্ধিমত্তা। ট্যালেন্ট স্মার্টে প্রায় ১ মিলিয়নের অধিক মানুষের মানসিক বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায় উচ্চ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এই টেস্টে টিকে থেকেছে।

মানসিকভাবে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ কর্মক্ষেত্রে কিভাবে নিজেকে সুখী করে তার ১৬টি দুর্দান্ত উপায় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হাফিংটন পোস্ট। দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্বে জেনে নিন ৮টি উপায়।

সুখের নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে: কর্মক্ষেত্রে আপনার দুটি রাস্তা খোলা থাকে। এক, হয় আপনাকে মনের মতো আরেকটা চাকরি খুঁজে নিতে হবে অথবা যেখানে কাজ করছেন সেখানেই আপনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। যেভাবেই হোক আপনার আনন্দ নির্ভর করবে আপনার হাতেই। আর কেউ সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তাই যখন মনে করবেন, কাজে আটকে গেছেন তখন নিজের নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবুন। কাজ ও জীবন সহজ হয়ে যাবে।

নিয়ন্ত্রণহীন বিষয় উপেক্ষা করুন: গ্রিসের অর্থনৈতিক সমস্যা কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার প্রভাবিত করবে কিংবা আপনার কোম্পানি কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কিভাবে কাজ করবে এ বিষয়ে জ্ঞান থাকা ভালো। তবে এই বিষয় সম্পর্কে জানা আর তা নিয়ে মাথা ঘামানো দুই মেরুর জিনিস। সুখী মানুষ অনেক কিছু জানে ও খোঁজ রাখে। কিন্তু তারা কখনোই তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিষয়ে গুরুত্ব দেয় না।

অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা : যখন আপনি অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করবেন তখন আপনার পক্ষে নিজেকে সুখী রাখার উপায়গুলো আর সাহায্য করবে না। কোনো কাজের জন্য যদি আপনি শান্তি অনুভব করেন কিংবা বাহবা পান তাহলে সেটিকে যথাসম্ভব অন্যের মন্তব্য ও মতামত থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
অন্যের মতামতের কারণে নিজের আবেগ বা ক্ষোভ ধরে রাখতে না পারলেও অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা করবেন না। কারো কথায় কান না দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। একটি কথা মনে রাখা দরকার, অন্যের কথার ভিত্তিতে আপনি আপনার ভালো মন্দের বিচার করবেন না। তাহলেই সুখী থাকা সম্ভব।

নিজেকে পুরস্কৃত করুন: কঠোর পরিশ্রম সাফল্যের জন্য আবশ্যক। কিন্তু কাজের ফাঁকে সামান্য বিরতি না নিলে তা হিতে বিপরীত হবে। রেডিওলজিস্টদের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা রোগীর চার্ট পর্যবেক্ষণের আগে ছোট পুরস্কার পেয়েছেন তারা আরো নির্ভুল নির্ণয় করেছেন। ছোট ছোট পুরস্কার মানুষকে আরো উদার, বন্ধুত্বপূর্ণ ও সুখী করে। সেই সঙ্গে এই পুরস্কার একজন ব্যক্তিকে তার কাজ আরো উন্নয়নশীল ও নির্ভুল করে। পুরস্কার মস্তিষ্কের মধ্যে আনন্দের বার্তা পাঠায়।

কাজের মধ্যেও ব্যায়াম করুন : ১০ মিনিটের জন্য হলেও যদি একজন ব্যক্তি তার শরীর নাড়াচাড়া করেন তাহলে তার শরীর থেকে গামা-অ্যামিনোবায়োটিক অ্যাসিড নামক শুষ্ক নিউরোট্রান্সমিটার রিলিজ হয়। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা যায় যে, কাজের মধ্যেও যারা ব্যায়াম করে তাদের সময়ানুবর্তিতা, মানসিক অবস্থা এবং কাজের গতি উভয়ই বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থির থাকে।

কাউকে বিচার করা থেকে বিরত থাকুন: কাউকে বিচার করা এবং তার সম্পর্কে খুবই বাজে কথা বলা বা তাকে হেয় করে কথা বলা ভালো নয়। কথা বলার সময় ভালো লাগলেও কিছুক্ষণ পরে নিজে থেকেই আপনার মধ্যে অনুশোচনাবোধ জেগে উঠবে। যদি কখনো কারো সম্পর্কে আপনি নেতিবাচক কোনো কথা বলতে চান তাহলে এর আগে ভেবে নিন যে, আপনি কি চান অন্য কেউ আপনার সম্পর্কে এমন কথা বলুক?

যুদ্ধক্ষেত্র বাছাই করুন: মানসিকভাবে বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ জানেন আগামী দিন যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার উপায়। নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ যুদ্ধে আপনার চলার পথে বাঁধার সৃষ্টি করবে। ফলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। যখন আপনি আপনার অনুভূতিগুলো জানার চেষ্টা করবেন তখন আপনাকে আপনার যুদ্ধের পথ বেছে নিতে হবে। আর সেটাই আপনাকে যুদ্ধে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করবে।

নৈতিক মূল্যবোধ: সাফল্যের নামে নৈতিক মূল্যবোধের সীমা অতিক্রম করা অসুখী হওয়ার একটি নিশ্চিত পথ। ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও বিবেকবোধ লঙ্ঘন করলে পরবর্তীতে অনুতাপ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হবে, যা আপনাকে কাজ থেকে বিরত রাখবে। যে কাজ আপনার কাছে নেতিবাচক মনে হবে, সে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। অন্যের কথায় কিংবা পরামর্শে নিজের মতাদর্শ থেকে সরে আসবেন না। কাজ করতে গিয়ে যদি কখনো মনে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তাহলে সময় নিন। আপনার মতাদর্শকে প্রাধান্য দিন। সেটির সঙ্গে আপনার কাজের মতাদর্শকে মিলিয়ে দেখুন। এটি আপনার নৈতিক অবস্থান শণাক্ত করতে সাহায্য করবে।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)
 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুলাই ২০১৭/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়