ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শেয়ার ছাড়ায় সরকারি কোম্পানিগুলোর অনীহা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ২৫ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শেয়ার ছাড়ায় সরকারি কোম্পানিগুলোর অনীহা

কেএমএ হাসনাত : আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং কোম্পানিগুলোর অসহযোগিতার কারণে সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে সরকারি ২৬টি কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিষয়ে বর্তমান সরকারের সময়েও একাধিক বার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনকি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত কয়েক বার সংশ্লিষ্টদের সময় বেঁধে দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি। তবে দু-একটি কোম্পানি যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটিও ভীষণ ধীর গতিতে এগোচ্ছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বুধবার আবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য কোম্পানিগুলো তাদের নেওয়া পদক্ষেপ উপস্থাপন করবে। এ বিষয়ে একটি কার্যপত্রও তৈরি হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকারি ২৬ কোম্পানির মধ্যে শেয়ার অফলোডের জন্য তালিকায় নয়টি কোম্পানি রয়েছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের। এই নয় কোম্পানির মধ্যে এ মুহূর্তে একটিও পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোডে আগ্রহী নয়। কোম্পানিগুলোকে নিয়ে সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সভা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তখন পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোডের বিষয়ে তাদের মতামত দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোড করতে পারেনি।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের কোম্পানিগুলোর মধ্যে  বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি জানিয়েছে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) মাধ্যমে কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউশন মার্জিন হ্রাস করায় আয় অনেক কমেছে। গ্যাসের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় সিএনজি, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক সংযোগ প্রদান বন্ধ রয়েছে। পরিচালনা বা কোম্পানির যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থের সংস্থান করা সম্ভব নয়। তবে গ্যাসের নতুন রিজার্ভ আবিষ্কার ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোড করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিকে ২০০৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনবার সময় দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ সময় ছিল ২০১০ সাল। কিন্ত ২০১৭ সালে এসে কোম্পানিটি জানিয়েছে, কোম্পানির চলমান প্রকল্পসমূহের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নিজস্ব তহবিল, পেট্রোবাংলার অধীনস্থ কোম্পানিগুলো থেকে গৃহীত ঋণ ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানের নিশ্চয়তা থাকায় পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজন নেই।

সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি বন্ড ইস্যুর অগ্রগতি সম্পর্কে জানিয়েছে, বন্ড ইস্যু করতে হলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদেয় বিদ্যমান সুদের হারের সমান বা তার চেয়ে বেশি হারে ইস্যু করতে হবে। উচ্চ সুদে বন্ডের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে দেশ ও জাতীয় স্বার্থে এ ধরনের ব্যয়বহুল অনিশ্চয়তামূলক প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হলে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ক্রমশ আরো দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা আছে। এজন্য গ্যাসের নতুন রিজার্ভ আবিষ্কার ও উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে ভবিষ্যতে শেয়ার অফলোড করা বন্ড ইস্যুর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পরে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল), জালালাবাদ গ্যাস টিঅ্যান্ডটি সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড।

বিদ্যুৎ বিভাগের পাঁচটি কোম্পানিও শেয়ার অফলোডের বিষয়ে ইতিবাচক কোনো মতামত দেয়নি। এর মধ্যে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি শেয়ার অফলোডের বিষয়ে কোনো তথ্য-উপাত্তই দেয়নি। একই অবস্থা ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড ও আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের। তবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানির আরো ১৫ শতাংশ সরকারি শেয়ার পুঁজিবাজারে অফলোডে সুপারিশ পাঠানোর জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বিএসইসি এবং আইসিবির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি কোম্পানি শেয়ার অফলোডের বিষয়ে ইতিবাচক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কোম্পানিগুলো হলো- প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগাং ড্রাইডক, কর্ণফুলী পেপার মিলস, বাংলাদেশ ইন্স্যুলেটর অ্যান্ড সেনিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি ও ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লিমিটেড।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তিনটি কোম্পানি মধ্যে শেরাটন হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে হোটেলটিতে রিনোভেশনের কাজ চলছে, তা ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে শেষ হবে। রিনোভেশনের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর রি-ব্র্যান্ডিং করে শেয়ার অফলোডের ব্যবস্থা করা হবে। সোনারগাঁও হোটেল পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোডের বিষয়ে জানিয়েছে, বর্তমানে সংস্থার সংস্কার ও সম্প্রসাণের কার্যক্রম চলছে, যার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। উক্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর শেয়ার অফলোডের উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব হবে।

এ ছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সরকারি অংশের শেয়ার পুঁজিবাজারে অফলোডের বিষয়ে জানিয়েছে, সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী শেয়ার অফলোডর জন্য পর পর তিন বছর লাভ থাকার বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বিমান ২৭২ কোটি ২২ লাখ টাকা মুনাফা করেছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরেও মুনাফা অর্জিত হয়েছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে লাভজনক অবস্থায় থাকলে শেয়ার অফলোডের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন চারটি কোম্পানির মধ্যে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড শেয়ার পুঁজিবাজারে অফলোডের বিষয়ে জানিয়েছে, পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোডের জন্য ইতিমধ্যে আইসিবির সঙ্গে সভা হয়েছে। আইসিবির পরামর্শ ও মতামত অনুযায়ী কোম্পানিকে লাভজনক করার পরিকল্পনা চলমান রয়েছে। বিটিসিএল জানিয়েছে, শেয়ার অফলোডের লক্ষ্যে বিটিসিএলের গত চার বছরের ব্যালেন্সশিট আইসিবি পর্যবেক্ষণ করছে। আইসিবির মতামত ইতিবাচক হলে শেয়ার অফলোডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড জানিয়েছে, তাদের এখন মূলধনের কোনো ঘাটতি নেই। ফলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের প্রয়োজন হচ্ছে না। একইভাবে টেলিফোন শিল্প সংস্থা জানিয়েছে, তাদের আর্থিক অবস্থা শেয়ার অফলোডের উপযোগী নয়।

স্বাস্থ্য বিভাগের আওতাধীন এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি জানিয়েছে, কোম্পানির পর্ষদ পুঁজিবাজারে শেয়ার অফলোড সংক্রান্ত কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখেছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ জুলাই ২০১৭/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়