চোখের জলে চিরবিদায়
রাহাত সাইফুল : জীবনের দীর্ঘ সময় পার করেছেন রুপালি ভুবনে। ঝলমলে তার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার। রঙ্গিন ভুবনের মানুষগুলো অনেকবারই তার জন্য সাজিয়েছে বিএফডিসি। আজও তার জন্য সেজেছিল প্রিয় কর্মস্থল। তবে এবার রঙ্গিন আলোয় নয়, শুধু কালো কাপড় আর শোক-শ্রদ্ধালিপিতে।
প্রতিদিনের মতো ছিল না আজকের বিএফডিসির চিত্র। সকাল থেকেই অসংখ্য মানুষ গেটে ভিড় জমিয়েছিল। সবার চোখে-মুখে বেদনার ছাপ। তাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। এ সময় বিএফডিসিতে শুধু চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্টদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। তাতেই পুরোটা লোকে লোকারণ্য। নায়করাজ রাজ্জাককে চির বিদায় দিতেই এ আয়োজন।
বিএফডিসির জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনে নায়করাজের জন্য কালো কাপড়ে মোড়ানো একটি মঞ্চ তৈরি হয়। দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা তাকে এক নজর দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। চিত্রনায়ক আলমগীর সকাল থেকেই ছিলেন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রাজ্জাক ভাই আজ আমাদের মাঝে নেই। কোনো পরিবারের অভিভাবক মারা গেলে তার পরিবারের অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা থাকে না। আজ আমাদের সবার এই রকমই অবস্থা হয়েছে। আমরা আমাদের অভিভাবক হারিয়েছি। তার জন্য দোয়া করা ছাড়া আর কিছু বলার ভাষা নেই।’
কিছুক্ষণ পরই আসেন খল অভিনেতা আহমেদ শারীফ। নায়করাজকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এরপর এক এক করে গাজী মাজহারুল আনোয়ার, হাসান ইমাম, আলমগীর, সুচন্দা, ববিতা, চম্পা, ফেরদৌস, শিমলা, ওমর সানি, কেয়া, আমিন খান, জায়েদ খানসহ এ প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীরা উপস্থিত হন। কিছুক্ষণ পর আসেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
বেলা ১১টার দিকে হুইসেল বাজিয়ে বিএফডিসিতে প্রবেশ করে লাশবাহী গাড়ি। রাজ্জাকের মরদেহ ঢাকার গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘর থেকে আনা হয়। এরপরই শোকের মাতম শুরু হয়ে যায়। প্রিয় নায়ককে এক নজর দেখতে হুমরি খেয়ে পরেন সহকর্মীরা। নায়করাজের নিথর দেহ সামনে রেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন সুচরিতাসহ অন্যান্য সহকর্মীরা।
এরপর হয় জানাজা। এ সময় নায়কপুত্র বাপ্পারাজ সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি জানি আপনারা বাবাকে সম্মান করেন, ভালোবাসেন। তবুও আপনাদের কাছে বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের পক্ষ থেকে বাবার জন্য দোয়া চাইলাম, বাবা যেন বেহেশত লাভ করেন। বাবার ওপর আপনারা কোনো কষ্ট, অভিমান রাখবেন না। তিনি জীবনের পুরোটা সময় আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। অনেক ভুলভ্রান্তি হতে পারে। ক্ষমা করে দেবেন।’তিনি আরও বলেন, ‘যদি কারো সঙ্গে কোনো লেনদেন থেকে থাকে, তাহলে আমার বা আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমরা তা অবশ্যই পরিশোধ করে দেবো।’
এরপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। মুহুর্তের মধ্যে বিএফডিসি শূন্য হয়ে পরে। সবাই আবার ছুটে চলে যান শহীদ মিনাপরে। পুরো চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রিয় সহকর্মীকে অশ্রুজলে চিরবিদায় জানায় চলচ্চিত্র অঙ্গন।
নায়করাজের মৃত্যুতে চলচ্চিত্র পরিবার তিনদিনের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি এই তিনদিন এফডিসিতে কোরআন পাঠ করা হবে বলে জানানো হয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ আগস্ট ২০১৭/রাহাত/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন