ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সৌদি আরবের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলকে বিনিয়োগের আহ্বান

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৬, ৬ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সৌদি আরবের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলকে বিনিয়োগের আহ্বান

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : সৌদি আরবের সফররত বাণিজ্য প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশের ইকনোমিক জোনে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার যে ১০০ ইকনোমিক জোন স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছে তার যে কোনটিতে সৌদি আরবের ব্যবসায়ীরা 'বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল' প্রতিষ্ঠা করে সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন।

বুধবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত 'বাংলাদেশ-সৌদি আরব বিজনেস মিটিং' এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন)। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজি এম. আমিনুল ইসলাম, এফবিসিসিআই প্রথম সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহ-সভাপতি মোঃ মুনতাকিম আশরাফ এবং পরিচালকবৃন্দরা।

এছাড়া সৌদি আরবের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং এন্ড ইনভেস্টমেন্ট গ্রুপ লিমিটেডের সভাপতি মোসাবাব আব্দুল্লাহ আলকাহতানির নেতৃত্বে সেদেশের ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল সভায় অংশ নেয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা গ্রহণ করে সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীরা 'বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে' সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে বিনিয়োগে আসতে পারেন। 'এমডিজি' সফলভাবে অর্জনের পর বাংলাদেশ 'এসডিজি' অর্জনের পথে অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশ 'শিল্প ও সেবা নির্ভর' অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে স্থানান্তর হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৮তম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে। দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সৌদি আরবের অনুকূলে রয়েছে। আমাদের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের বহুমূখীকরণ এবং রপ্তানির পরিমাণ বাড়িয়ে আমরা এ বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারি।’

এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল এবং আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচকে অত্যন্ত ইতিবাচক অগ্রগতি ঘটছে। সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। বিশেষ করে সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় দেশটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘সৌদি আরব বাংলাদেশের অন্যতম অর্থনৈতিক সহযোগিতাকারী দেশ এবং বিগত বছরগুলোতে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে সৌদি আরবের বৃহৎ বিনিয়োগ হয়েছে, যা সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের অন্যান্য সম্ভাবনাময় খাতেও সম্প্রসারিত করতে পারে।’

সভার উদ্বোধনী পর্ব শেষে দুদেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ 'বিজনেস টু বিজনেস' সভায় মিলিত হন। সৌদি আরব এবং বাংলাদেশ থেকে অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি তেল ও গ্যাস,  বস্ত্র ও অ্যাপারেল,  ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স,  তথ্য প্রযুক্তি,  চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও ঔষধ খাত, হিমায়িত খাদ্য, পাট, পর্যটন, কৃষি এবং খাদ্য ও পানীয় খাতের উদ্যোক্তারা 'বিজনেস টু বিজনেস' সভায় সম্ভাব্য ব্যবসা স্থাপনে আলোচনা করেন।

এ সময় সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় প্রস্তুতকারক ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আলফানার এনার্জির সঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের মধ্যে একটি 'সমঝোতা স্মারক' স্বাক্ষরিত হয়। এই স্মারক অনুযায়ী আলফানার এনার্জি বাংলাদেশে ৪০-১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করবে এবং তা বাস্তবায়নে এফবিসিসিআই প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।

এফবিসিসিআইয়ের পক্ষে সংগঠনের মহাসচিব (ভারপ্রাপ্ত) হোসাইন জামিল এবং আলফানার এনার্জির পক্ষে প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার মুহাম্মদ ইরফান স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

পরে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের সম্ভাবনাময় বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এফবিসিসিআই প্রথম সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ সেশনে বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিনিয়োগ আকর্ষণ করে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার তথ্য পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ১৮৫ দশমিক ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য সৌদি আরবে রপ্তানি করে এবং সৌদি আরব থেকে ৬০৫ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। সৌদি আরবে বাংলাদেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যগুলো হচ্ছে কৃষি পণ্য, নীটওয়্যার, ওভেন গার্মেন্টস, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং হিমায়িত খাবার। আর সৌদি আরব থেকে মুলত প্লাস্টিক এবং রাবার সামগ্রী, খণিজ পণ্য, রাসায়নিক সামগ্রী এবং বেস মেটাল সামগ্রী আমদানি করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ ডিসেম্বের ২০১৭/নাসির/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়