ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ইয়ার্ন উৎপাদনে সফল চট্টগ্রামের ‘এমইবি পয়’

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ১০ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইয়ার্ন উৎপাদনে সফল চট্টগ্রামের ‘এমইবি পয়’

চট্টগ্রাম এমইবি পয় কারখানায় উৎপাদন প্রক্রিয়া

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : প্রি ওরিয়েন্টেড ইয়ার্ন সংক্ষেপে পয় (ঢ়ড়ু)। এই পয় থেকে তৈরি হয় ড্র টেক্সারাইজ ইয়ার্ন (ডিটিওয়াই)। এই সূতার চাহিদা রয়েছে সারাদেশে সম্প্রসারমান নিটিং শিল্পে।

একসময় শুধু বিদেশ থেকে এই ইয়ার্ন আমদানি করে বিপুল পরিমাণ সূতার চাহিদা পূরণ করা হতো। বর্তমানে দেশীয় ৬টি কারখানা পয় ও ডিটিআই উৎপাদন করে দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে। এর মধ্যে সর্বপ্রথম যে কারখানাটি প্রি ওরিয়েন্টেড ইয়ার্ন উৎপাদনে সফলতা দেখায় সেটি হলো মোহাম্মদ ইলিয়াছ ব্রাদার্স পয় ম্যানুফ্যাকচার প্ল্যান্ট লিমিটেড (এমইবি পয়)। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কালুরঘাট ভারি শিল্প এলাকায় ১৯৮৮ সালে দেশের প্রথম প্রি ওরিয়েন্টেড ইয়ার্ন কারখানা হিসেবে এমইবি পয় সফলভাবে যাত্রা শুরু করে।

এরপর থেকে কারখানাটিকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। লাভজনক ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমইবি পয় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় পয় ইউনিটের সাথে যুক্ত হয়েছে ড্র টেক্সারাইজ ইয়ার্ন ইউনিট। এ বছরই কারখানাটিতে যুক্ত হতে যাচ্ছে ফুললি ড্র ইয়ার্ন (এফডিওয়াই) ইউনিট। শিগগিরই এই প্রতিষ্ঠানটি আসছে দেশের পুঁজিবাজারেও।

 

                                     এমইবি পয়-এর চেয়ারম্যান সাইদুল করিম

এমইবি পয়- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে জানান, দেশে অগ্রসরমান নিটিং শিল্পে পয়- এর চাহিদা ব্যাপক। এই চাহিদা ছিলো আরও ৩০/৪০ বছর আগে থেকেই। কিন্তু ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত দেশে কোন পয় কারখানা গড়ে উঠেনি। সম্পূর্ণ বিদেশ থেকে আমদানি করে এর চাহিদা পূরণ করা হতো। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের স্বনামধন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইলিয়াছ ব্রাদার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মোহাম্মদ ইলিয়াছ চট্টগ্রাম নগরীর কালুরঘাট ভারি শিল্প এলাকায় প্রথম প্রি ওরিয়েন্টেড ইয়ার্ন কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকেই পয় আমদানিতে বৈদেশিক নির্ভরতা কমতে থাকে। ব্যতিক্রমী পণ্যের একমাত্র দেশীয় কারখানা হওয়ায় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই কারখানাটি সফল এবং লাভজনকভাবে ধারাবাহিক উৎপাদনে চলমান থাকে। বর্তমানে ইলিয়াছ ব্রাদার্সের অন্যান্য শিল্পের বাইরে সম্পূর্ণ আলাদা বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর মাধ্যমে এমইবি পয় একটি লাভজনক সফল উৎপাদনমুখী কারখানা হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে।

 

                                 চট্টগ্রাম এমইবি পয় কারখানায় ফিনিশড প্রোডাক্ট

এমইবি পয়- এর পরিচালক আবরার হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১৯৮৮ সালে কারখানার প্রথম ইউনিট স্থাপনের পর ১৯৯২ সালে জাপান থেকে সম্পূর্ণ নতুন যন্ত্র এনে টেক্সটাইল ইউনিট-২ স্থাপন করা হয়। ২০০৬ সালে জার্মান থেকে আরও আধুনিক মেশিনারিজ আমদানি করে কারখানাটি আরও আধুনিকায়ন করা হয়। সফল পরিচালনা এবং মুনাফা অর্জনের ধারাবাহিকতা থাকায় এমইবি পয়-এর ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসেবে ড্র টেক্সারাইজ ইয়ার্ন (ডিটিওয়াই) উৎপাদন করে দেশের নিটিং কারখানাগুলোতে সফলভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে এই কারখানায় যুক্ত হতে যাচ্ছে ফুললি ড্র ইয়ার্ন (এফডিওয়াই) ইউনিট।’

 

চট্টগ্রাম এমইবি পয় কারখানা


আবরার হোসেন জানান, কারখানায় বর্তমানে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তা কর্মরত। ২৪ ঘণ্টা চালু এই কারখানায় কখনো শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেনি। কারখানায় মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯শ’ মেট্রিক টন। ২০১৮ সালে নতুন বিনিয়োগে কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাইদুল করিম রাইজিংবিডি’র সাথে আলাপকালে জানান, দেশে ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন প্রি ওরিয়েন্টেড ইয়ার্ন ছিলো সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর একটি পণ্য। এক সময় চীন, ইন্দোনেশিয়া ও তাইওয়ান থেকে এই ইয়ার্ন আমদানি করা হতো। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে প্রথম এমইবি পয় কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে এই পণ্যের বিদেশ নির্ভরতা কমতে থাকে। বর্তমানে দেশে এমন কারখানা রয়েছে ৬টি। এই ৬টি কারখানা থেকে উৎপাদিত ইয়ার্ন দেশের চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পূরণ করছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের এমইবি পয় লাভজনক ও সফল শিল্প হিসেবে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে আসছে। মোহাম্মদ ইলিয়াছ ব্রাদার্স এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাদার কোম্পানি হলেও এমইবি পয় স্বতন্ত্র বোর্ড অব ডিরেক্টরস- এর মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ায় এটি সম্পূর্ণ সফল ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

 

                                  চট্টগ্রাম এমইবি পয় কারখানায় উৎপাদন  যন্ত্র

দেশের ক্রমবর্ধমান শিল্প বিকাশে এমইবি পয়-এর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে উল্লেখ করে এর চেয়ারম্যান সাইদুল করিম বলেন, ‘এমইবি পয় আরও সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন এবং নতুন ইউনিট সংযোজন করতে ২০১৮ সালের মধ্যেই এতে বড় অংকের নতুন বিনিয়োগ যুক্ত হবে। চলতি বছর এটি দেশের পুঁজিবাজারেও সফলভাবে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।’ এর ফলে এই কারখানা দ্বিগুণ উৎপাদন, দ্বিগুণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন সাইদুল করিম।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ মার্চ ২০১৮/রেজাউল/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়