ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

শুল্ক বাড়িয়ে মোবাইল ফোন আমদানি নিরুৎসাহিত করার দাবি

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫১, ১১ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শুল্ক বাড়িয়ে মোবাইল ফোন আমদানি নিরুৎসাহিত করার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ভ্যাট ও সারচার্জ অব্যাহতিকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষক, অর্থনীতিবিদ এবং এ খাতের উদ্যেক্তারা। তাদের মতে, প্রস্তাবিত ভ্যাট ও শুল্ক কাঠামো বজায় রেখে মোবাইল ফোন আমদানির ওপর আরো শুল্ক বাড়িয়ে অ্যাসেমব্লিংকে কিছুটা উৎসাহ এবং আমদানিকে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন।

গত বৃহস্পতিবার (৭ জুন, ২০১৮) অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তার বাজেট বক্তৃতায় দেশীয় মোবাইল ফোন উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে বেশকিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এতে মোবাইল ফোন উৎপাদনের ওপর সারচার্জ অব্যাহতি দেওয়া এবং দেশে মোবাইল ফোনসেট উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে একটি আলাদা প্রজ্ঞাপন জারির কথা বলা হয়েছে। যাতে দেশে হ্যান্ডসেটের প্রকৃত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

প্রস্তাবিত বাজেটের সঙ্গে জারিকৃত মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন-১৬৮ এ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা মিলবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ন্যূনতম যন্ত্রাংশ, যেমন : পিসিবি, হাউজিং অ্যান্ড কেসিং, ব্যাটারি, চার্জার ইত্যাদি উৎপাদনের সক্ষমতা থাকতে হবে এবং কারখানায় এসব যন্ত্রাংশ উৎপাদনের নিজস্ব মেশিনারিজ থাকতে হবে। সব মিলিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করতে হবে।

কম্পিউটার অ্যান্ড মোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (প্রস্তাবিত) মহাসচিব মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন (এসিএস) বলেন, বাংলাদেশেই এখন মানসম্পন্ন মোবাইল ফোন তৈরি হচ্ছে। তাই উৎপাদনকারী বা ম্যানুফ্যাকচারারদের সুবিধা দেওয়া সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, অ্যাসেমব্লিং এবং সম্পূর্ণ তৈরি ফোন আমদানির মধ্যে একটা পার্থক্য থাকা প্রয়োজন। এজন্য আমদানির ওপর শুল্ক আরো বাড়ালে অ্যাসেমব্লাররাও উপকৃত হবেন। দেশীয় বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। আমদানি কমে যাবে। সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. আকবর আলী খান বলেন, অনুৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ বাড়ালে দেশের উন্নতি সাধিত হয় না। অনুৎপাদনশীল খাত থেকে কর আদায় করে বরং উৎপাদনশীল খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে, সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। প্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার এখন সময়ের দাবি। প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর কিছু বিষয় মোবাইল উৎপাদনে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। ফলে দেশে মোবাইল ফোনসেট উৎপাদন বাড়তে পারে।
 


তিনি আরো বলেন, যেকোনো শিল্পের বিকাশই দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। শিল্পের বিকাশে বেকারত্ব কমে। এটিও আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট দেশীয় প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের জন্য সহায়ক। দেশে এরইমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোন উৎপাদনে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব সুবিধার কথা বলা হয়েছে, তাতে দেশীয় তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি এ খাতে বিনিয়োগ বাড়বে।

তিনি আরো বলেন, দেশেই তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য তৈরি হলে ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। আরো বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমাদের জিডিপিতেও এটি ভালো অবদান রাখতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তিপণ্যের উৎপাদক ও আমদানিকারকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকা প্রয়োজন। আমদানিতে তুলনামূলক বেশি হারে কর আরোপ করা হলে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পায়।

এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দিনের পর দিন যারা ট্রেড নির্ভর; বিদেশ থেকে আমদানি করে মুনাফা করছে, তারা সরকারের এই ভালো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। যা মোটেও কাম্য নয়। এখন সময় এসেছে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পণ্য তৈরি করে দেশ-বিদেশের বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করার।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ জুন ২০১৮/মিলটন আহমেদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়