ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সরকার নয়, লাভবান হবে তামাক কোম্পানি

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ৪ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকার নয়, লাভবান হবে তামাক কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : শেষ পর্যন্ত ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা সম্প্রসারণের অভাবনীয় সুযোগ দিয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট। প্রস্তাবিত বাজেটে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে করারোপের ক্ষেত্রে প্রচলিত এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস প্রথা বাতিল করে খুচরা মূল্যের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হলেও চূড়ান্ত বাজেটে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন অর্থমন্ত্রী। ফলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আর তামাক কোম্পানিগুলোর আয় বৃদ্ধি পাবে দ্বিগুণেরও বেশি। এমন তথ্যই উঠে এসেছে তামাকবিরোধী সংগঠনের বিশ্লেষণে।

প্রজ্ঞা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা এবং গুলের খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এর ফলে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেত ১৬৮ শতাংশ। অথচ চূড়ান্ত বাজেটে খুচরা মূল্যের ওপর কর আরোপের আধুনিক এবং সহজতম পদ্ধতি থেকে সরে এসে প্রতি ১০ গ্রাম জর্দা ও গুলের জন্য যথাক্রমে ১২ টাকা এবং ৬ টাকা ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ করে এর ওপর ১০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে, ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় প্রায় ৫৪ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং একই পরিমাণ তামাক বিক্রি করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১১৮ শতাংশ বেশি আয় করবে।

উদাহরণ টেনে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, ২৫ টাকা খুচরা মূল্যে ১০ গ্রাম জর্দা বিক্রয় করে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো পেত ৫.২৪ টাকা। অথচ চূড়ান্ত বাজেট অনুযায়ী, একই পরিমাণ জর্দা বিক্রি করে কোম্পানিগুলো এখন পাবে ১২ টাকা। এই আয়বৃদ্ধি দ্বিগুণেরও বেশি। নিজেদের এই অস্বাভাবিক আয়বৃদ্ধির হার কিছুটা কমিয়ে হলেও তামাক কোম্পানিগুলো সস্তায় ভোক্তাদের হাতে তামাকপণ্য তুলে দিতে মরিয়া হবে। কারণ, চূড়ান্ত বাজেটে সর্বনিম্ন খুচরা বিক্রয়মূল্য শর্ত প্রত্যাহার করায় তামাক কোম্পানিগুলো তাদের সুবিধা অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করতে পারবে। ফলে বাজারে জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্য প্রত্যাশিত হারে নাও বাড়তে পারে। এতে ভোক্তা পর্যায়ে জর্দা ও গুলের ব্যবহার প্রত্যাশিত হারে হ্রাস পাবে না। ফলে জনস্বাস্থ্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সুরক্ষা পাবে না।

এভাবেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চূড়ান্ত বাজেটে জনস্বাস্থ্য উপেক্ষা করে তামাকপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভবান করা হয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এসব পণ্যের ক্ষেত্রে রাজস্ব আদায় ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। দেশে এখনো অসংখ্য রেজিস্ট্রেশনবিহীন জর্দা ও গুল কারখানা থাকায় এসব কারখানা থেকে কর সংগ্রহ করা কঠিন হচ্ছে। সুতরাং জর্দা ও গুলের ওপর প্রযোজ্য কর আহরণের ক্ষেত্রেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। এক্ষেত্রে কর আরোপে ট্যারিফ ভ্যালু পদ্ধতির পরিবর্তে বিড়ি-সিগারেটের ন্যায় খুচরা মূল্য নির্ধারণ হবে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারীদের মাঝে এই পণ্য ব্যবহারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে জর্দা-গুল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে এবং পাশাপাশি ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ দেওয়া থেকে দেশের নীতিনির্ধারকদের সরে আসতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জুলাই ২০১৮/সাওন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়