ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ভারতীয় ট্রাক চালকেরা আটকে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৪, ৪ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভারতীয় ট্রাক চালকেরা আটকে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীয়ারি থানার জোড়দীঘি গ্রামের ট্রাক চালক ইদ্রজিৎ ঘোষ গত জুন মাসে বাংলাদেশে এসেছেন চাল নিয়ে। বাংলাদেশ সরকার বাজেটে শুল্কহার বাড়িয়ে দেওয়ায় ট্রাক থেকে চাল খালাস করা বন্ধ করে দেন আমদানিকারকরা। তখন থেকে তিনি তার সহকারীসহ বাংলাদেশে রয়েছেন। বাড়িতে দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। গত এক মাস তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। হাতের টাকা প্রায় শেষ। ট্রাকে রান্না করার চুলা রয়েছে। তাতে তেল দিয়ে রান্না করে এক বেলা খাচ্ছেন।

বুধবার দুপুরে হিলি স্থলবন্দরে কথা হয় ইদ্রজিৎ ঘোষের সঙ্গে।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানালেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে বাড়িতে যেতে পারছেন না। স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না। রান্না করে খাবেন, সেই উপায়ও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ দেশে কেরোসিন তেল কেনার উপায় নেই। তাদের কাছে বাংলাদেশিরা তেল বিক্রি করছে না। বাধ্য হয়ে ট্রাকে থাকা তেল দিয়ে চুলায় এক বেলা রান্না করে দুই বেলা খাচ্ছেন। কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন এর নিশ্চয়তা নেই। 

কথা হয় আরেক ট্রাক চালক আনারুল সরকারের সঙ্গে। তার বাড়িও দক্ষিণ দিনাজপুরের রামপুর এলাকায়। তিনি বলেন, বাড়িতে একমাত্র ছেলে রোহান (১৭) এর পরীক্ষা চলছে। অনেক আশা ছিল ছেলের পরীক্ষার সময় পাশে থাকবেন। কিন্তু এখানে চাল খালাস না হওয়ায় বাড়ি যেতে পারছেন না।

তিনি বলেন, ‘‘ট্রাকের চাল খালাস না হওয়া পর্যন্ত আমরা ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে দেব না। আবার এ দেশ থেকে ভারতে যেতে দেব না।’’ 

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমাদের বাড়ি যেতে বাধা দিচ্ছে ভারতীয় কিছু পরিবহন নেতা। বিজিবি ও বিএসএফ বাধা না দিলেও ওই সব নেতারা ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। তাই আমরা দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আন্দোলনে নেমেছি।’’

ইদ্রজিৎ, আনারুল, বিমল সরকারের মতো কয়েকশত ট্রাক চালক ও সহকারী গত এক মাস থেকে বাংলাদেশের হিলিস্থল বন্দরে আটকে রয়েছেন। গত ৬ জুন শুল্ক জটিলতায় চাল খালাস বন্ধ থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

হিলি স্থলবন্দর ও আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, ৭ জুন নতুন বাজেট ঘোষণার আগে ৬ জুন যে সব চালের এলসি ওপেন করা হয়েছিল, সেসব চাল বন্দরে ঢোকানো হয়। আমদানিকারকরা সেই সব চালের শুল্ক পরিশোধ করে পণ্য ছাড় করণের জন্য কাস্টমসে বিল অব এন্ট্রি সাবমিট করতে গিয়ে জানতে পারেন- কাস্টমসের সার্ভার আউট হয়ে গেছে। এতে করে আমদানিকারকদের ২ শতাংশ শুল্কে আমদানি করা প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টন চাল বন্দরে আটকা পড়ে যায়। ফলে দীর্ঘ দিন ধরে বন্দরে আটকে থাকা আমদানিকৃত চালগুলো দ্রুত খালাসের দাবিতে মঙ্গলবার থেকে ভারতীয় ৫০০ শতাধিক ট্রাক চালক ও সহকারীদের বাধার মুখে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।

বুধবার দ্বিতীয় দিনেও শূন্য রেখার পাশে বন্দরের প্রধান সড়কে ভারতীয় ট্রাক চালক ও সহকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। ফলে বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় ভারত থেকে আনা পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচসহ পণ্যবাহী কয়েকশ ট্রাক আটকে আছে।  তবে বন্দরের অভ্যন্তরের কার্যক্রম চালু রয়েছে।

হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক হারুন উর রশীদ হারুন জানান, ৭ জুন বাজেটের পর যেসব চাল আমদানি করা হবে, সেই সব চাল তারা ২৮ ভাগ শুল্কে ছাড় করতে রাজি আছেন। তবে বাজেটের আগে যে সব চাল আমদানি করেছেন, সেগুলো কেন ২৮ ভাগ শুল্কে ছাড় করবেন।

‘‘তাই আমরা পণ্য ছাড়করণ বন্ধ রেখে কাস্টমস এবং এনবিআরের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু এক মাসের বেশি সময় হতে চললেও কেউ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। তাই আমরা গত রোববার হাইকোর্টে রিট করেছি। হাইকোর্ট ইতোমধ্যে ১০ দিনের রুল জারি করেছেন। এনবিআর ও কাস্টমস হিলিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। ১০ দিন পরে রিটের যে ফলাফল আসবে, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’’

এ ব্যাপারে হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, শুল্ক জটিলতার কারণে প্রায় এক মাস ধরে ২০৯টি ট্রাকে প্রায় ৮ হাজার টন চাল আটকা পড়ে আছে। দীর্ঘ দিন ধরে এসব পণ্য খালাস না হওয়ায় বন্দরে পণ্যজট সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে ভারতীয় ট্রাক চালক ও সহকারী, আমদানিকারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিষয়টি দ্রুত মীমাংসার চেষ্টা চলছে।



রাইজিংবিডি/রংপুর/৪ জুলাই ২০১৮/নজরুল মৃধা/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়