ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ডাক বিভাগের ইএমটিএস ফি কমানোর প্রস্তাব

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০১, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ডাক বিভাগের ইএমটিএস ফি কমানোর প্রস্তাব

কেএমএ হাসনাত : ব্যবসায় মন্দাভাব পোস্ট অফিসের ‘ইলেকট্রনিক মানি টান্সফার সার্ভিসের (ইএমটিএস)। গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে ইএমটিএস-এর  মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পরিমান কমেছে  ৯৫ শতাংশ। অতিরিক্ত ফি’র কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করছে পোস্টাল বিভাগ। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে ফি কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছে তারা।

সূত্র জানায়, ইএমটিএস-এর মাধ্যমে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বিভিন্ন জায়গা থেকে সেবা গ্রহীতাদের পাঠানো অর্থের পরিমান ছিলো মোট দুই হাজার ১৬১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। যেখানে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে মাত্র ১১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে ইএমটিএস-এর মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর পরিমান কমেছে দুই হাজার ৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

জানা গেছে, টাকা পাঠানোর অতিরিক্ত ফি এবং বেসরকারি মোবাইল ব্যাংকিং-এর আগ্রাসী ব্যবসার কারণে পোস্ট অফিসের এই সার্ভিসের এই অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের ফি কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে এএমটিএস-এর ফি কমানোর বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

অর্থ বিভাগে পাঠানো ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের ফি’র একটি বিবরণী পাঠিয়ে তা হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে ইএমটিএস-এর মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠাতে গেলে একজন গ্রাহককে ফি হিসেবে দিতে হয় ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। অন্যদিকে, ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে ফি দিতে হয় ৯২৫ টাকা। যেখানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে খরচ অনেক কম। যেমন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ পরে মাত্র ৫ টাকা। আর ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে খরচ পরে একশ’ টাকারও কম।

প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ইএমটিএস-এর মাধ্যমে বর্তমানে যেখানে এক হাজার টাকা পাঠাতে সাড়ে ১৮ টাকা প্রেরককে দিতে হয় সেখানে এই ফি কমিয়ে ১০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে ডাক অধিদপ্তর। একইভাবে ৪ হাজার টাকা পাঠানোর ফি বিদ্যমান ৭৪ টাকা কমিয়ে ২০ টাকা। ৫ হাজার টাকা পাঠানোর ফি সাড়ে ৯২ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা। ১০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি ১৮৫ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা। ২০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি ৩৭০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা। ৩০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি ৫৫৫ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা। এবং ৫০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি বিদ্যমান ৯২৫ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে।

এ বিষয়ে ডাক অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১০ সালের ২৬ মার্চ এই সেবা চালু করা হয়। প্রথম দিকে মানুষজন এই সেবার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ তাদের নিকটজনের কাছে পাঠান। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আমরা এক অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছি। এর কারণ, এই সেবার ফি বর্তমান বাজার অনুযায়ী অত্যাধিক। এখন আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী ইএমটিএস-এর ফি কমানো না হলে এক সময় ডাক বিভাগের এই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্ত আমরা দুই হাজার ৭৫০টি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এতে সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে। কিন্তু অত্যধিক ফি’র কারণে এখন এই সেবা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

ডাক বিভাগের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবছরই ধারবাহিকভাবে ইএমটিএস-এর মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের পরিমান ব্যাপক হারে কমেছে। ২০১৩-২০১৪ সালে এই মাধ্যমে প্রেরকরা পাঠিয়েছিল এক হাজার ৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২০১৪-২০১৫ সালে তা প্রায় অর্ধেক কমে দাঁড়ায় ৫৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০১৫-২০১৬ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এবং সর্বশেষ ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে তা অর্ধেকেরও বেশি কমে হয়েছে ১১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়