ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘দেশকে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পৌঁছে দিচ্ছে ওয়ালটন’

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দেশকে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পৌঁছে দিচ্ছে ওয়ালটন’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বাংলাদেশকে শিল্পোন্নত দেশের কাতারে নিতে এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পৌঁছে দিতে দক্ষ জনসম্পদ গড়তে নিরলসভাবে কাজ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপ।

এজন‌্য বছরজুড়ে দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শত শত ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের অধীনে ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এর অংশ হিসেবে বুধবার ২২ জনের হাতে দক্ষতার সনদপত্র তুলে দেন ওয়ালটনের কর্মকর্তারা।                              

সকাল ১১টায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ওয়ালটন গ্রুপের করপোরেট অফিসে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট সার্টিফিকেট ডিস্ট্রিবিউশন সিরিমনি’র আয়োজন করে তাদের হাতে এ সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়। ওয়ালটন গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডব্লিউএসএমএস হিসেবে পরিচিত ‘ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

শিক্ষার্থীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেওয়ার আগে ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (পলিসি, এইচআরএম অ্যান্ড অ্যাডমিন) এস এম জাহিদ হাসান তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব‌্য দেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন কৃষিপ্রধান দেশ থেকে শিল্পে প্রবেশ করছে। কৃষিকাজেও এখন শিল্প উপকরণের ব্যবহার বা ছোঁয়া লেগেছে। শিল্প কৃষির মধ্যে ঢুকে গেছে। দেশ এখন ধাপে ধাপে শিল্পোন্নত দেশের কাতারে যাচ্ছে। আগে অভাব, মঙ্গা, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকলেও আজকে সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটেছে। ফসলি জমি কমলেও শিল্পের কারণে ফসল উৎপাদন বাড়ছে। সবই হচ্ছে শিল্পায়নের কারণে। অর্থাৎ কৃষিকে আমরা শিল্পের দিকে নিয়ে এসেছি।’



‘আশার কথা হচ্ছে, এখন দেশে ওয়ালটন এবং এ ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে এবং সেখানে কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন লোক কাজ করছে। তবে এখনো দেশে দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। যার ফলে এই ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে পারছে না’, বলেন তিনি।

ওয়ালটন শিক্ষার্থীদের যন্ত্রের সঙ্গে বাস্তবে পরিচিতি ঘটানোর সুযোগ দিচ্ছে, জানিয়ে ওয়ালটনের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা হচ্ছে, এই দেশকে শিল্পে উন্নত করা। কারণ, যেসব দেশ উন্নত তারা শিল্পেও উন্নত। শিল্পে উন্নত না হলে কৃষি নিয়ে বেশি দূর এগোনো যাবে না। আমাদের অবশ্যই শিল্পের দিকে যেতেই হবে। সময় এসেছে শিল্পে উন্নত হয়ে আমাদের পণ্য বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার। ওয়ালটন সে লক্ষ্যে কাজ করছে। এজন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ভর্তুকি দিয়ে ইন্টার্নি করার সুযোগ দিয়ে দক্ষ শ্রমিক গড়তে কাজ করে যাচ্ছে ওয়ালটন।’

দেশকে প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পৌঁছে দিতে ওয়ালটন নিরলসভাবে কাজ করছে, উল্লেখ করে এস এম জাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার সুযোগ আছে। সেটি সম্ভব হবে আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে। ৩০ লক্ষ মানুষ এ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়। আমাদের ওপর দায়িত্ব এ দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করা। কারণ, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না আসলে সেই দেশের কোনো মূল্য থাকে না।’

অনুষ্ঠানে অন‌্যদের মধ‌্যে ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক নজরুল ইসলাম সরকার, ওয়ালটন সার্ভিস ম‌্যানেজমেন্ট বিভাগের হেড অব সার্ভিস মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, রেফ্রিজারেটর অ্যান্ড এসি সার্ভিস ডেভেলপমেন্ট প্রধান (ডব্লিইএসএমএস) আনিস মল্লিক, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড হোম অ‌্যাপ্লায়েন্স ডেভেলপমেন্টের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ আল ইমরান, এস এম নাসির উদ্দিন (এইচআরএম বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান, করপোরেট, ডব্লিইএসএমএস), শিবলী সাদিক (বিভাগীয় প্রধান এইচআরএম, ডব্লিইএসএমএস), রওশন আলী বুলবুল (ইনচার্জ ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), নাহিদ হাসান (কলসেন্টার প্রধান) উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডব্লিউএসএমএসের কর্মকর্তা আইরিন পারভিন হোসেন।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে নজরুল ইসলাম সরকার উদ্ভাবনী শক্তিতে পণ্য আবিষ্কার ও গবেষণার ওপর জোর দেন। শুধু চাকরির দিকে না তাকিয়ে নিজের দক্ষতা আর মেধা দিয়ে কীভাবে নিত‌্য নতুন প্রযুক্তিগত পণ্য উৎপাদন করা যায় সে তাগিদ দেন তিনি।



মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, শিল্প ও প্রযুক্তি ক্রমাগত পরিবর্ত হচ্ছে। সেই পরিবর্তনশীলতার সঙ্গে নিজেকেও পরিবর্তন বা তাল মেলাতে হবে। এজন‌্য চর্চা এবং অনুশীলনের বিকল্প নেই।

ওয়ালটনে ইন্টার্নি করার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত নরসিংদী পলিটেকনিকের মো. ওবায়দুল হক। বইয়ের পাতা থেকে বাস্তবে যন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে ওয়ালটনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

ওবায়দুল হক বলেন, ওয়ালটন থেকে যারা শিখিয়েছেন তারা অনেক আন্তরিক ছিলেন। যা আমি ভাবতেও পারিনি। ভবিষ‌্যতে ওয়ালটন যাতে এভাবে দক্ষ শ্রমিক গড়তে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকে সেই প্রত‌্যাশা করি।

ওয়ালটনে তিন মাসের কারিগরি শিক্ষাজীবন শেষে সার্টিফিকেট নেওয়ার আগে নিজের অভিব‌্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে মুন্সীগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করা শিক্ষার্থী মো তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এতদিন বইয়ের পাতায় যেসব যন্ত্রের কথা শুনেছি, এখানে এসে তা দেখতে পেলাম এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। এই ভালোলাগা এবং কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এখানে তিন মাসের কোর্সে বুঝতে পেরেছি যন্ত্রের খুঁটিনাটি বিষয়।’

আইএসও সনদপ্রাপ্ত ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। উচ্চমানের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বেকার ও অদক্ষরা পরিণত হচ্ছেন দক্ষ মানবসম্পদে। প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের অনেকই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিদেশেও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।



২০০০ সালে ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম যাত্রা শুরু করে। তখন থেকেই ওয়ালটনের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থেকে ২০১৪ সালে ১১০ জন, ২০১৫ সালে ১৯৪ জন, ২০১৬ সালে ৩২০ জন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ইন্টার্নশিপ করেন। ২০১৭ সালে ইন্টার্নশিপের জন্য ১ হাজার প্রকৌশলী আবেদন করেন। তাদের মধ্যে থেকে ৩২৮ জনকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়।

ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ওয়ালটন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এসব প্রশিক্ষণ ও ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেয় শিক্ষার্থীদের। এটি কোম্পানির করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮/রেজা/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়