ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান দিতে বিশ্বব্যাংকের আহ্বান

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৩ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান দিতে বিশ্বব্যাংকের আহ্বান

ছবি : কিসমত খন্দকার

কেএমএ হাসনাত, বালি, ইন্দোনেশিয়া থেকে : মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নির্যাতনে দেশটি থেকে বিতাড়িত ১০ লাখ রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নে দাতা দেশগুলোকে ঋণের পরিবর্তে অনুদান দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

ইতোমধ্যে জার্মানি, সুইডেন, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাতকে অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি। এই চারটি দেশকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানানো হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

শনিবার শনিবার ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন নগরী বালির ওয়েস্টিন হোটেলে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের সঙ্গে বৈঠক এবং অন্যান্য বৈঠকে যোগদান শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এ সময় বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মোশাররফ হোসেন ভূইঞা, ইআরডির জ্যেষ্ঠ সচিব শফিকুল আজম উপস্থিত ছিলেন।

শুক্রবার বালি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (বিআইসিসি) বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো।

প্রেস ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে অনুদান পাওয়া নিয়ে একটু সমস্যা আছে। বিশেষ করে, যুক্তরাজ্য বলছে, কেন সবার কাছ অনুদান চাওয়া হবে? এমন মন্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত। ঢাকায় গিয়ে বিষয়টি তাদের কাছে জানতে চাইব?

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে যেভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে তার জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং অন্যদের ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। তারাও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে দুই বছরে জন্য ১ বিলিয়ন ডলার অনুদান পাওয়া যাবে। এরমধ্যেই ৫০ লাখ ডলার পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বব্যাংক সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে আমরা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির (আইডিএ) অনুদান বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি। কারণ, এরইমধ্যে আমরা আইডিএর বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করে ফেলেছি। নিয়ম হচ্ছে, যেসব দেশ আইডিএর অর্থ ব্যবহার করতে পারে না তাদের অর্থ ফেরত এনে যারা ব্যয় করতে সক্ষম তাদেরকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, আইডিএ ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিন বছরের জন্য বিশ্বব্যাংক আমাদের ৪৫০ কোটি ডলার দিয়েছিল। তা আমরা দুই বছরের মধ্যেই কাজে লাগিয়েছি। তাদের কাছে এক বছরের জন্য অতিরিক্ত ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছি। হয়তো পুরোটা পাওয়া যাবে না। তবে ২০০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে, এটা আমি নিশ্চিত।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক পরিচালনা বোর্ডের নিন্ত্রণাধীন একটি ইন্সপেকশন দল আছে। তারা তাদের চার্টার্ড সম্প্রসারণ করে বিশ্বব্যাংকের বিভিন্ন প্রকল্প পর্যলোচনা করার দাবি করেছে। এ বিষয়টির আমি তীব্র প্রতিবাদ করেছি। বলেছি, এটি বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনার কাজ। ইন্সপেকশন দলের আওতা সম্প্রসারণ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টেরও দ্বিমত রয়েছে। তাদের বলেছি, তারা অন্য যেসব কাজ করছে সেগুলো ভালোভাবে করুক। এখানে যেন তারা নাক না গলায়। 

জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের বৈঠক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় ভূক্তভোগী বাংলাদেশ। অথচ আমাদের কথা শুনতে চায় না। আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশকেই তারা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। অথচ ১৯৯২ সালে আমেরিকায় প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ দিক তুলে ধরে আমিই শুরু করি। দেশে ফিরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) প্রতিষ্ঠা করি।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্ব যে হুমকির মুখোমুখি হয়ে পড়ছে সে বিষয়ে সবার একযোগে কথা বলা উচিত। এজন্য আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ তহবিল সম্প্রসারণের বিষয়ে সবার এগিয়ে আসা উচিত।

দেশে কার্বন ট্যাক্স আরোপের ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক দিন ধরেই এ বিষয়ে চিন্তা করছি। এখনো বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তবে দেশে যারা বেশি কার্বন নিঃসরণ করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। তা সত্যেও কার্বন নির্গমন ট্যাক্স বসানোর চিন্তা চলছে।

এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমেরিকা-চীন দুই পরাশক্তির মধ্যে বর্তমানে আর্থিক যুদ্ধ চলছে, সেটা কোন পর্যন্ত গড়ায় তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তবে এর প্রতিফলন বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়বেই। বিশেষ করে, আমাদের মতো গরিব দেশগুলোর সমস্যা আরো ঘনীভূত হবে। এটা পুরোটা নির্ভর করছে তাদের মধ্যে এ যুদ্ধ কতদিন স্থায়ী হবে, তার ওপর।

এদিকে, জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশনের (জেবিআইসি) সঙ্গে ইআরডি সচিব শফিউল আজমের বৈঠক হয়েছে। এ বিষয়ে ইআরডি সচিব বলেন, জেবিআইসি পলাশ সার কারখানা স্থাপনে ১ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।



রাইজংবিডি/বালি, ইন্দোনেশিয়া/১৩ অক্টোবর ২০১৮/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়