ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহারের আহ্বান ওয়ালটনের

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১২, ৩০ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহারের আহ্বান ওয়ালটনের

নিজস্ব প্রতিবেদক : রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারে নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে দেশের শীর্ষ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। এ বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ওয়ালটনের পক্ষ থেকে তিন দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ওয়ালটনের করপোরেট কার্যালয়ে এ কর্মশালা শুরু হয়। প্রশিক্ষণ কর্মশালার শিরোনাম ছিল- ‘গুড প্র্যাকটিস ইন রেফ্রিগ্রেশন অ্যান্ড এসি সার্ভিস ফর বেটার এনভায়রনমেন্ট’।

প্রশিক্ষণের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে এমন রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহারে সতর্কতা এবং পরিবেশের জন্য উপযোগী রেফ্রিজারেন্টসমূহের সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান।

অনুষ্ঠানে ওয়ালটনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বর্তমানে যেসব রেফ্রিজারেটর এবং এয়ার কন্ডিশনারে আর-১৩৪এ, আর-২২ রেফ্রিজারেন্টসমূহ ব্যবহার করা হচ্ছে তা পরিবেশে অবমুক্ত হওয়ার ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা থাকে। এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো ওজন স্তরের ক্ষয়। ওজন স্তর ক্ষয়ের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকারক রেফ্রিজারেন্ট।

তাই রেফ্রিজারেন্ট পরিবেশে অবমুক্ত হয়ে যাতে ওজন স্তরের ক্ষতি না করতে পারে সে বিষয়ে জ্ঞান দান এবং সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ওয়ালটন এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে।

পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট যেমন: আর-৬০০এ, আর-২৯০ এবং এইচসি বেজড রেফ্রিজারেন্টের নিরাপদ ও সঠিক ব্যবহারের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ওয়ালটন। তারই ধারাবাহিকতায় সারা দেশে সব বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানকারীদের নিয়ে ধাপে ধাপে আয়োজন করা হবে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা।

তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার প্রথম দিনের শুরুতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।

 



প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরো উপস্থিত ছিলেন- ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক (পলিসি, এইচআরএম অ্যান্ড অ্যাডমিন) এস এম জাহিদ হাসান, ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের প্রধান মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম, আরএসি সার্ভিস উন্নয়ন বিভাগের প্রধান আনিসুর রহমান মল্লিক, ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের এইচআর প্রধান মো. শিবলি সাদিক, ট্রেনিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান মো. রওশন আলী বুলবুল।

প্রশিক্ষণের প্রথম ধাপে উপস্থিত ছিলেন রেফ্রিজারেটর এবং এসির বিক্রয়োত্তর সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩০ জন প্রতিনিধি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, আমরা বিশ্বের উষ্ণতা হ্রাস করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে আরএসি সেক্টরে বেশকিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে উৎপাদনের ক্ষেত্রে আর-১৩৪এ, আর-২২ রেফ্রিজারেন্টের পরিবর্তে আর-৬০০এ, আর-২৯০ এ এর ব্যবহার শুরু করা অন্যতম।

তিনি আরো বলেন, ওজন স্তরের সুরক্ষা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ওজন স্তরের জন্য ক্ষতিকারক উপাদান যাতে পরিবেশে অবমুক্ত না হয়, সে লক্ষ্যে বিক্রয়োত্তর সেবায় আমরা আরো বেশি সচেতন। তাই বিক্রয়োত্তর সেবার সাথে জড়িতদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। যাতে তারা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক রেফ্রিজারেন্ট অবমুক্ত না করার পদ্ধতি ও উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন হয়। সাথে সাথে উপযোগী রেফ্রিজারেন্টসমুহের নিরাপদে ব্যবহারের পদ্ধতি এবং উপকারিতা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পায়।

তিনি বলেন, ইউএনডিপির প্রফেশনাল প্রশিক্ষকগণের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে আমরা আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করতে পারি। আমরা আশা করি যে, আমাদের এই পদক্ষেপ পৃথিবীকে সবুজ ও সুন্দর করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে এবং অন্যদের কাছে অনুকরণীয় হবে।

এস এম মাহবুবুল আলম তার বক্তব্যে আরো বলেন, আমরা গ্রাহকদের সেবায় প্রায় ২ হাজার প্রত্যক্ষ কর্মী নিয়োগ করেছি, যা বাংলাদেশের মতো দেশে একটি অনন্য নজির। আমরা প্রশিক্ষণকে এতটাই গুরুত্ব দেই যে, আমাদের সব কর্মী তাদের নিজেদের আইটি সংশ্লিষ্ট কাজ নিজেরাই করতে পারে। সেই সাথে প্রিন্টিংয়ে কাগজের ব্যবহার কমিয়ে আমরা গ্রিন বা সবুজ কর্মস্থল করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া, আমরা আমাদের সকল উৎপাদন কারখানায় গ্রিন বা সবুজ কালচার চালু করতে সক্ষম হয়েছি। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ২০১৮ সালে পরিবেশ পদকে ভূষিত হয়েছি। তাই আমরা কর্মক্ষেত্রের সকল স্থানকে এমনভাবে সাজাতে চেষ্টা করেছি যাতে তা পরিবেশের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়তে না পারে।

এস এম জাহিদ হাসান বলেন, আমরা সব সময়ই চাই প্রশিক্ষণ নিতে এবং দিতে। যেহেতু বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্যে ক্রমশই আঘাত হানছে, তাই আমাদের এখনই এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

 



তিনি বলেন, আরএসি সেক্টরে রেফ্রিজারেন্টের সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহারকে আমরা বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যাব এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এই প্রশিক্ষণের ধারা অব্যাহত রেখে আমরা ওয়ালটনের পণ্য এবং গ্রাহকসেবাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব।

তিনি আরো বলেন, আমরা এমনভাবে রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করব যাতে তা আমাদের নিজেদের কোনো ক্ষতির কারণ না হয়। আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জেনে নেব, কীভাবে কোন রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করলে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।

ওয়ালটন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের প্রধান মোহাম্মদ মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ কেবল গড়ে তুলতে পারে একজন দক্ষ মানবসম্পদ। এই মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে ওয়ালটন সর্বদাই বিশেষ বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে থাকে। আজকের এই পরিবেশ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ আমাদের মানবসম্পদকে আরো বেশি গ্রাহকসেবা প্রদানের পথ সুগম করে দেবে বলে বিশ্বাস করি।

আরএসি সার্ভিস উন্নয়ন বিভাগের প্রধান আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি রোধে আমরা ব্যবহার করছি অনেক উন্নত প্রযুক্তি। যার ফলে আমরা অর্জন করতে পেরেছি কোটি কোটি গ্রাহকের আস্থা। তাই আজ ওয়ালটনে পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা সর্বদাই চেষ্টা করে যাচ্ছি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে অভ্যস্থ হতে। তাই নতুন প্রযুক্তি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদে ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, ওয়ালটন ইউএনডিপি এবং ইউএনইপির সাথে যৌথ উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। যা বাস্তবায়ন করতে পারলে আগামীর দিনগুলোতে বিরূপ প্রভাব থেকে আমাদের তথা বিশ্বকে রক্ষা করবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ অক্টোবর ২০১৮/হাসান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়