ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সশস্ত্র বাহিনী আরও শক্তিশালী হয়েছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সশস্ত্র বাহিনী আরও শক্তিশালী হয়েছে

কেএমএ হাসনাত: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের পর আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তানের কারগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিধ্বস্ত দেশ গঠনের কাজে মনোনিবেশ করেন। অন্যান্য কাজের পাশাপাশি স্বাধীনতার ঊষালগ্নে দেশকে বহি:শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার প্রয়োজনে তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে আরও শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।

স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর আত্মত্যাগ এবং তাদের অবদান চীরস্মরনীয় থাকবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়নে কাজ শুরু করে। বর্তমানে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অনেক বেশি সংগঠিত এবং শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।  

সম্প্রতি সেনাবাহিনীতে ৩টি পদাতিক বিভিশন, নৌবাহিনীতে ২টি সাবমেরিন সংযোগের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী গঠন ও বিমান বাহিনীতে নতুন অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান সংযোজনের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন করা হয়েছে। কালের পরিক্রমায় বর্তমান সরকারের পথ ধরেই সশস্ত্র বাহিনীতে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র যা আধুনিক বাহিনী তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।

বর্তমান সরকারের সামগ্রিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা ও মান উন্নয়নে উল্লেযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। জাতিসংঘ মিশন কার্যক্রমে বাংলাদেশ ট্রুপ কন্ট্রিবিউটিং দেশ হিসেবে ২য় স্থান অর্জন করেছে। ২০১৫-২০১৬ এবং ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জতিসংঘ শান্তি বাহিনী মিশন থেকে যথাক্রমে ১৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০৫ মিলিয়ন ডলার আয় করে। পেশাদারিত্ব ও শৃংখলার সমুজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দেশের গন্ডি পেরিয়ে আজ বিশ্ব দরবারে সমাদৃত ও সুপরিচিত।

দেশের সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি’র দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ভিশন-২০৪১ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে নতুন ১৫ হাজার পদ সৃজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৪টি রিজিয়ন সৃষ্টি করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। ১২৩টি বিওপি এবং ১২৮টি বিএসপি নির্মাণ করা হয়েছে। সুন্দরবন এলাকায় ২টি ভাসমান বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। বিজিপি (সামরিক/অসামরিক) সদস্যদের পারিবারিক রেশন ৬০ শতাংশ থেকে ২০১৩ সালে শতভাগ বৃদ্ধি এবং সদস্যদের দৈনিক রেশন স্কেলের প্রাধিকার বৃদ্ধি করে পুনঃনির্ধারন করা হয়েছে। বিজিবিতে ২০১৬ সালে সীমান্ত ব্যাংক নামে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।
 


কোস্ট গার্ড ফোর্সেস- ২০০৩ এর আলোকে নিজস্ব বহরে বর্ধিত জনবল, নতুন জাহাজ, হোভারক্রাফট, হেলিকপ্টার, ইউভি, মেরিটাইম পেট্রোল এফারক্রাফট সংযোজনের মাধ্যমে বাংলদেশ কোস্ট গার্ডকে একটি দ্বিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫টি মিনারভা ক্লাস করভেটকে অপসোর পেট্রোল ভ্যাসেলে রূপান্তর করে বহরে সংযোজন করা হয়েছে এবং আরও ২টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নিজস্ব ডকইয়ার্ডে দ্রুতগতির পেট্রোল ক্রাফট তৈরির বিষয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোস্টগার্ডের এই উন্নয়ন বিশাল সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের অধিপত্য রক্ষার পাশাপাশি ব্লু ইকোনমি বিকাশের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি পুলিশ সদস্য সংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাড়ানো হয়েছে। ২০০৯ সালের পর পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৩২ হাজার ৩১ টি এবং ২০১৪ সালের পর আরও ৫০ হাজার পদ তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪৪টি পদে ইতোমধ্যে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিআইবি), নৌ পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, ২টি স্পেশাল ও সিকিউরিটি প্রোটেকশন ব্যাটালিয়ন, নারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ বিশেষায়িত ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পুলিশের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

বর্তমান সরকারের সময়ে ২০১৩ সালে র‌্যাবের দুটি ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব-১৩ ও র‌্যাব-১৪) সংযোজনের মাধ্যমে ১৩৬টি পদ সৃজন এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সরঞ্জামাদি সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত হয়। এ সময়ের মধ্যে র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন, র‌্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল এবং র‌্যাব ফোর্সেস ডগ স্কোয়াড, ফায়ারিং রেঞ্জ ইত্যাদির জন্য সর্বমোট প্রায় ১৭১ একর জমি অধিগ্রহন ও হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি তৎপরতা/সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিরোধের লক্ষ্যে র‌্যাবে অত্যাধুনিক স্পর্শকাতর গোয়েন্দা সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে গোয়েন্দা নজরদারির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জ্যামার এবং ইলেক্ট্রনিক ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে অভিযানিক কার্যক্রম এবং তদপরবর্তী ইলেক্ট্রনিক আলামত সামগ্রী বিশ্লেষনের সক্ষমতা সংযোজিত হয়েছে। এ ছাড়াও, আনসারদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ডিসেম্বর ২০১৮/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়