ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

২০০ কোটি টাকা ঋণের রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চায় কর্মসংস্থান ব্যাংক

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
২০০ কোটি টাকা ঋণের রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চায় কর্মসংস্থান ব্যাংক

কেএমএ হাসনাত : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ঋণ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ সুবিধার বিপরীতে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চেয়েছে বাংলাদেশ কর্মসংস্থান ব্যাংক।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ১০ বছরের জন্য এ গ্যারান্টি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে অর্থবিভাগ তিন বছরের জন্য এ গ্যারান্টি দেওয়ার সুপারিশ করেছে। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল সম্মতি দিলেই কর্মসংস্থান ব্যাংকে শর্ত সাপেক্ষে এ গ্যারান্টি দেওয়া হবে। অর্থমন্ত্রীকে এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশপত্র পাঠিয়েছেন অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার।

কর্মসংস্থান ব্যাংক দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি, আধা সরকারি এবং স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেকার যুবক ও যুব মহিলা আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তানুযায়ী আলোচ্য ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহক পর্যায়ে সর্র্বোচ্চ সুদের হার ৯ শতাংশ এবং ক্রমহ্রাসমান পদ্ধতি অনুসরণ করে এ সুদের হিসাব করা হবে।

কর্মসংস্থান ব্যাংকের আইন অনুযায়ী ব্যাংকের তহবিল সংগ্রহের জন্য ঋণ গ্রহীতা ব্যতীত সাধারন জনগণের কাছ থেকে আমানত গ্রহণের কোন বিধান নেই। ফলে পরিশোধিত মূলধন এবং শুধু ঋণ গ্রহীতাদের আমানতের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ব্যাংকের প্রশাসনিক খরচ, রিজার্ভ সংরক্ষণ ইত্যাদি মেটানোর পর অবশিষ্ট অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরন করতে পারে।

ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রস্তাবিত ২০০ কোটি টাকার ঋণ সুবিধা নিতে পারলে তা ঋণ বিতরনের বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জনসহ ব্যাংকের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে। ইতোপূর্বে ব্যাংকটি একই কর্মসূচিতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন ঋণ নিচ্ছে এবং ঋণের সুদ নিয়মিত পরিশোধ করছে বলে অর্থসচিব তার সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন।

জানা গেছে, কর্মসংস্থান ব্যাংক ৩৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় এবং ২৪টি শাখার মাধ্যমে দেশব্যাপী বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ব্যাংকের নিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী ব্যাংকের মোট পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ প্রায় ৪৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর শেষে ব্যাংকের ঋণের স্থিতি ছিল এক হাজার ২৯৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে ব্যাংকের আমানতের তুলনায় ঋণের স্থিতির অনুপাত প্রায় ১:৪; এ অনুপাত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে প্রায় সমান ছিল। এ ছাড়া শ্রেণিবিন্যাসিত ঋণের হার ৬ শতাংশ যা আগে ৭ শতাংশ ছিল। ব্যাংকটির ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে নিট মুনাফা ছিল প্রায় এক কোটি ৭১ লাখ টাকা।

অর্থ বিভাগের সুপারিশে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাদের প্রস্তাবে কর্মসংস্থান ব্যাংকের ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ঋণ সহায়তা কর্মসূচি’র আওতায় ২০০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যে ১০ বছর মেয়াদী রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির নীতিগত সম্মতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। অর্থ বিভাগ থেকে কর্মসংস্থান ব্যাংকের অনুকূলে ইতোপূর্বে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিসমূহ ছিল ৩ বছর মেয়াদী। কর্মসংস্থান ব্যাংকের আর্থিক কর্মকৃতি দেখে প্রতীয়মান হয় যে, দীর্ঘমেয়াদী ঋণের পরিবর্তে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী ঋণ গ্রহণপূর্বক তা বিনিয়োগ করে পরিশোধ করা সম্ভব। তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদী কোন ব্যবসায়িক পরিকল্পনাও তারা গ্রহণ করেনি। এ জন্য তাদেরকে ৩ বছরের জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির নীতিগত সম্মতি দেয়াই সমীচীন মনে করে অর্থ বিভাগ।

গ্যারান্টি পেলে কর্মসংস্থান ব্যাংককে ৫টি বিষয় অনুসরণ করার শর্ত আরোপ করেছে অর্থ বিভাগ। রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি  নীতিগত সম্মতির পর নিয়ম অনুযায়ী গ্যারান্টি গাইডলাইন অনুযায়ী চুড়ান্ত রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির প্রস্তাব অর্থ বিভাগে দিতে হবে। ঋণের প্রতিটি কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে তা অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বকেয়া অর্থের হালনাগাদ তথ্য অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। গ্যারান্টির মেয়াদের মধ্যে ঋণের সমুদয় অর্থ পরিশোধ করবে এবং পরিশোধ সংক্রান্ত কাগজপত্র অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি মেয়াদ ইস্যুর তারিখ থেকে ৩ বছরের জন্য বলবৎ থাকবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়