ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

স্বর্ণালংকার আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপের দাবি স্বর্ণ শিল্পীদের

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৪, ১৪ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বর্ণালংকার আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপের দাবি স্বর্ণ শিল্পীদের

কেএমএ হাসনাত : স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ এর আওতায় স্বর্ণের তৈরি অলংকার আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপের দাবি জানিয়েছে ঢাকা স্বর্ণ শিল্পী শ্রমিক সংঘ। এ বিষয়ে সম্প্রতি তারা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

গত বছর শেষ দিকে সরকার স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮ অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে দেশে স্বর্ণ আমদানির কোন নীতিমালা ছিল না ফলে এ খাতে নানা ধরনের নৈরাজ্য বিরাজ করছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে কিছু স্বর্ণ আমদানি হতো। আর বেশির ভাগ স্বর্ণ ব্যাগেজ রুলের আওতায় এবং চোরাইপথে দেশে ঢুকতো। চোরাইপথে আসা স্বর্ণ আবার পাশ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে যেতো। দেশে স্বর্ণ ব্যবসায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গত বছর স্বর্ণ নীতিমালা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিকে স্বর্ণ নীতিমালার আওতায় তৈরি স্বর্ণালংকার আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ জন্য দেশের স্বর্ণ শিল্পীরা অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

স্বর্ণ নীতিমালাকে স্বাগত জানিয়ে সংগঠনটির সভাপতি মানিক রতন মালাকার রাইজিংবিডিকে বলেন, স্বর্ণ নীতিমালাকে আমরা স্বাগত জানাই। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য যাতে তৈরি স্বর্ণ শিল্প খাতে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেদিকে সরকারের লক্ষ্য রাখতে দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশ এই শিল্পের সঙ্গে কয়েক লাখ স্বর্ণ শিল্পী জড়িত রয়েছেন। এদেশের কারিগরদের হাতে তৈরি অলংকার বিশ্বমানের যার চাহিদা রয়েছে বিশ্বময়। এদেশের কারিগর ও জুয়েলার্সদের সক্ষমতা তৈরির আগেই যদি কোনো কারণে বিদেশ থেকে তৈরি অলংকার আমদানি করা হয় তা হলে আমাদের দেশে তৈরি স্বর্ণ অলংকারের প্রতি আস্থা হারাবে এবং লাখ লাখ স্বর্ণ শিল্পী বেকার হয়ে পড়বে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে পাবে।

তিনি বলেন, আমরা ২০১৮ সালের ১৯ নভেম্বর তৈরি স্বর্ণালংকার  আমদানি যাতে না হয় তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একটি চিঠি দিয়ে ছিলাম। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম যে স্বর্ণ নীতিমালা বাস্তবায়িত হয়েছে। সেই গেজেটের ৩.১ এবং ৩.২ ধারায় তৈরি অলংকার আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যদি শুধুমাত্র স্বর্ণ বার আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়, তা হলে সে স্বর্ণ বার দিযে আমাদের দেশের স্বর্ণ শিল্পীরা অলংকার তৈরি করতে পারবে। কিন্তু যদি তৈরি স্বর্ণালংকার আমদানি করা হয় তবে আমাদের দেশের স্বর্ণ শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়বে। তাই আমাদের দাবি আগের মত ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী শুধুমাত্র একজন যাত্রী ১০০ গ্রাম করে তৈরি স্বর্ণালংকার নিয়ে আসতে পারে সে আইন বলবৎ রাখা হোক।

সংগঠনটির সভাপতি বলেন, ইতিমধ্যে এ শিল্পে নিয়োজিত শত শত স্বর্ণ শিল্পী কাজের অভাবে বেকার জীবনযাপন করছেন। অনেক ভাল ভাল স্বর্ণ শিল্পী এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। এতে এ দেশের স্বর্ণালংকারের বিশ্বমানের ঐতিহ্য বিলুপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

তিনি বলেন, এ শিল্প নিয়োজিত শিল্পীদের মজুরি অত্যন্ত কম। প্রতি ভরিতে মাত্র ২ আনা ওয়েস্টেজ মজুরি হিসেবে দেওয়া হয়। কাজ না থাকলে সেটাও অনেক সময় পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় এ শিল্পকে বাঁচাতে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

স্বর্ণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার সরাসরি স্বর্ণের বার আমদানি করতে পারবেন। তবে ডিলার স্বর্ণের বার ছাড়া কোনো স্বর্ণালংকার বা অন্য কোনো ফর্মে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন না। স্বর্ণের বার আমদানির সময় ডিলার বন্ড সুবিধা নিতে পারবেন। এসব ডিলার স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে স্বর্ণের বার বিক্রি করবেন।

তবে স্বর্ণালঙ্কার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া চাহিদার বিপরীতে স্বর্ণের বার আমদানির আগে সম্ভাব্য কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে, তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়ে ওই ব্যয় পরিশোধের বিষয়ে অনাপত্তি নেবে। বৈদেশিক মুদ্রা বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে অনাপত্তি বিষয়ে অবহিত করবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও স্বর্ণালংকার প্রস্তুতকারীকে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে এবং মূসক (মূল্য সংযোজন কর) নিবন্ধিত হতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণের বার আমদানির সময় বন্ড সুবিধা গ্রহণ করে স্বর্ণ আমদানি করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্বর্ণের বার আমদানি করার নিমিত্ত অনুমোদিত ডিলারকে আবশ্যিকভাবে আমদানি নীতি আদেশ এবং কাস্টমস অ্যাক্টের বিধানাবলী অনুসরণপূর্বক বন্ড লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত বৈধ স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা স্বর্ণালংকার  রপ্তানিকারক সনদ নিতে পারবে। বৈধভাবে স্বর্ণালংকার রপ্তানি উৎসাহিত করতে রপ্তানিকারকদের স্বর্ণালংকার তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে রেয়াতসহ বিভিন্ন প্রকারের প্রণোদনামূলক বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে। স্বর্ণালংকার রপ্তানির উদ্দেশ্যে আমদানি করা স্বর্ণের ক্ষেত্রে ডিউটি ড্র-ব্যাক ও বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়া হবে।

নীতিমালায় পুরনো স্বর্ণ কেনাবেচায় স্বচ্ছতা আনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, গ্রাহকের কাছ থেকে রিসাইকেল্ড (পুরনো) স্বর্ণ ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বিধানের লক্ষ্যে উক্ত গ্রাহক/বিক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্টের কপি এবং পূর্ণাঙ্গ যোগাযোগের ঠিকানা সংরক্ষণ করতে হবে।

নীতিমালায় স্বর্ণের মান নির্ণয়, যাচাই ও নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকার স্বর্ণের জন্য নিজস্ব মান প্রণয়ন করবে। স্বর্ণের মান যাচাই ও বিশুদ্ধ স্বর্ণের পরিমাণ যাচাই নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ল্যাবটেস্ট, ফায়ার টেস্ট বা হলমার্ক টেস্ট সুবিধাসহ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করবে। এই পরীক্ষাগারকে বাংলাদেশের অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাক্রিডিটেশন গ্রহণ করতে হবে। স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারের মান সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হলমার্ক ব্যবস্থা চালু করতে হবে। স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার কেনাবেচার ক্ষেত্রে হলমার্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম অনুযায়ী স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকারে খাদ্যের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে দেশের স্বর্ণ খাত সংশ্লিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে বাৎসরিক চাহিদা, আমদানি, রপ্তানি, ক্রয়-বিক্রয়, দোকান সংখ্যা, রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ, বাজেয়াপ্তকৃত স্বর্ণের পরিমাণ, নিলামে স্বর্ণ বিক্রির পরিসংখ্যান ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ এপ্রিল ২০১৯/হাসনাত/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়