২ লাখ ২৭২১ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আজ ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জন্য ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার ব্যয় সম্বলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ১২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকার ব্যয় সম্বলিত এডিপিও অনুমোদন করেছে এনইসি।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি’র চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বাংলাদেশের উন্নয়ন রূপকল্প-২০২১, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ ও বিদ্যমান বিভিন্ন নীতিমালার আলোকে অগ্রাধিকার খাতসমূহে পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য হ্রাস তথা জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ইত্যাদিসহ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একুশ শতকের উপযোগী একটি উন্নত দেশে উত্তরণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বাষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।
এডিপিতে দারিদ্র বিমোচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আইসিটি’র উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহায়ক প্রকল্প, সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) বাস্তবায়িত নতুন প্রকল্পসমূহকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি’র সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন তথা দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি), পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে (স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়া) ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এডিপি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সে তুলনায় নতুন অর্থবছরের এডিপির আকার বাড়ছে ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। এ ছাড়া মাঝ পথে এ অর্থবছরের বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে ধরা হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপির তুলনায় নতুন এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। নতুন এডিপিতে পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগসহ গুরুত্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় হিসেবে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগে।
আগামী অর্থবছরে জন্য খাত ভিত্তিক বরাদ্দের সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে পরিহন খাতে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় পরিবহন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এ ছাড়া অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১২ শতাংশ।
এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাতের বরাদ্দ হচ্ছে, শিক্ষার প্রসার ও গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষা ও ধর্ম খাতে চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ তথ্য ও প্রযুক্তি প্রসারের লক্ষ্যে বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনা ও অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১৩ হাজার ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধ ও নদীর ব্যবস্থাপনার জন্য পানি সম্পদ খাতে ৫ হাজার ৬৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বা ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ বরাদ্দ ধরা হচ্ছে এবং মানব সম্পদ উন্নয়নসহ দক্ষতা বৃদ্ধিতে গতিশীলতা আনতে জনপ্রশাসন খাতে ৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ ২৬ হাজার ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া পর্যায়ক্রমে বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রথম ১০ নম্বরে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৯ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, সেতু বিভাগ ৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ২৫৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খসড়া বরাদ্দ ধরা হয়েছে।
নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্প সংখ্যা রয়েছে ১ হাজার ৫৬৪টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩৫৮টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১৬টি, জেডিসিএফ প্রকল্প ১টি এবং স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার নিজস্ব প্রকল্প রয়েছে ৮৯টি। অন্যদিকে সমাপ্তর জন্য নির্ধারিত প্রকল্প ধরা হয়েছে ৩৫৫টি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রকল্প ৬২টি। বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ২৪২টি এবং বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৪৫টি। এ ছাড়া বরাদ্দসহ অনুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ৪১টি।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মে ২০১৯/হাসিবুল ইসলাম/ইভা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন