ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাঘ-বিড়ালের লড়াই

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ১৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাঘ-বিড়ালের লড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক : বন বিড়াল ও পোষা বিড়ালের লড়াই হবে। যথারীতি সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। ফলাফল কী হয়। লড়াইয়ের দিন ক্ষণ ঠিক হলো, মঞ্চ তৈরি হলো।

সবাই ধরেই নিলো বন বিড়াল জিতবে। যথারীতি বন বিড়াল জিতে গেলো। হ্যাঁ, সেটা তো হওয়ারই ছিলো-সবাই এক বাক্যে মেনেও নিলো সেটা। কারণ বন বিড়াল জঙ্গলে জীবন-যাপন করে। চলার স্বাধীনতা, খাওয়ার স্বাধীনতা থাকে। শক্তিশালী তো হবেই। সে-ই তো জিতবে, এটাই স্বাভাবিক।

জয়ী হওয়ার পর উপস্থিত সকলে বন বিড়ালকে ঘিরে জানতে চাইলো- কীভাবে জিতলে তুমি? কী তোমার কৌশল।

তখন বন বিড়াল অনেকটা কষ্টের সুরে একজনের কানে কানে বললো- আমি জিতেছি কারণ আমি বাঘ। না খেতে খেতে আমার এমন চেহারা হয়েছে। তাই কেউ বুঝতেই পারেনি আমি বাঘ।

গল্পের এরূপ উদাহরণ দিয়ে তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান পরিস্থিতি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন দেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক।

২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে রোববার আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, সরকার যদি এখনই তাদের দাবিগুলোর প্রতি নজর না দেয় তাহলে দেশের শীর্ষ রপ্তানিকারক শিল্পের অবস্থা বনের ওই বাঘের মতো হয়ে যাবে। যারা দেশের মোট রপ্তানির ৮৩ শতাংশেরই অংশীদার।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়া এসব কথা জানান। সাংবাদিকদের উপস্তিতিতে রুবানা হক ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ও নগদ প্রণাদনা অন্তত তিন শতাংশ দাবি করেন।

সংগঠনটি বলছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পোশাক খাত এখনো দুর্বল, যদিও দেশের অর্থনীতির সিংহভাগই টিকে আছে এই খাতের উপর। বিজিএমইএ’র দাবি করা পাঁচ শতাংশের জায়গায় অন্তত তিন শতাংশ প্রণোদনা দিলে বর্তমান বিরূপ পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাড়াবে পোশাক খাত।

এ ছাড়া ডলারের দাম টাকার বিপরীতে অবমূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলছে, ডলার প্রতি এক টাকা অবমূল্যায়ন করলে পোশাকশিল্প বছরে প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাবে। সেটি হলে পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। পোশাক খাতে আর প্রণোদনার দরকার নেই বলে অর্থনীতিবিদদের করা মন্তব্যেরও এসময় সমালোচনা করেন বিজিএমইএ সভাপতি। এ ছাড়া কৃষির সঙ্গে পোশাক খাতের প্রণোদনার বিষয়টি তুলনা করা ঠিক নয় বলেও জানান বিজিএমইএ সভাপতি।

রুবানা হক বলেন, ‘প্রতিনিয়ত যদি আমাদের শুনতে হয়, আমরা ম্যাচিউরড, এস্টাব্লিশড, আমাদের আর সাহায্য দরকার নেই, তা ঠিক নয়। প্রতিযশা অর্থনীতিবিদরাও তাও বলেন। পোশাকে কিন্তু ডাবল ডিজিটি প্রবৃদ্ধি নেই। গড়ে ৫ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি রয়েছে। গত এক মাসে আমরা ৩০টি ফ্যাক্টরি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি। ঈদের আগে অনেকে মেশিন বিক্রি করে হলেও বেতন দিয়েছে। তাই অনেকেই যারা বলেন, পরিপক্ক ও ম্যাচিউরড ইন্ডাস্ট্রি, প্রণোদনা ও ভর্তুকির দরকার নেই, কিন্তু এটার দরকার আছে৷’

‘পোশাক খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রণোদনা বাড়ানো দরকার। গত কয়েকবছরে আমরা সর্বোচ্চ ৮০০ কোটি টাকার প্রণোদনা উঠিয়েছি। নানা রকম ব্যুরোক্রেটিক ঝামেলার কারণে অনেকেই ইনসেন্টিভ পানও না, নেনও না। নতুন বাজারের ক্ষেত্রে প্রণোদনা বাড়ানো উচিত। পোশাক খাতকে পরাজিত বনের বিড়াল বানাবেন না।’

তিনি বলেন, ‘আশা করছি, ৫ বছর সরকার যদি পাশে থাকে, সকলে উপকৃত হই, একটি আবদার, ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা দেখতে চাই৷ উদ্যোক্তা দেখতে হলে পোশাক খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শ্রমিকদের ব্যাপারে আমাদের মধ্যেও সচ্ছতা থাকতে হবে৷ বড় বিবেচনা না করে ছোট ফ্যাক্টিরিকেও বিবেচনা করতে হবে৷’





রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুন ২০১৯/এম এ রহমান/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়