ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

স্কুলে আগুন : ঘটনা তদন্ত ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্কুলে আগুন : ঘটনা তদন্ত ও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর এই মেরুদণ্ডের ভিত গড়ে দেয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দেশ ও সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। কিন্তু এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই যদি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার দুর্গম চর কুন্দেরপাড়ায় গণ-উন্নয়ন একাডেমি নামের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আগুনে পুড়ে গেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে স্কুলটিতে আগুন লাগে। এতে শ্রেণিকক্ষ, অফিসকক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন, লাইব্রেরি ও আসবাব পুড়ে গেছে। এ ছাড়া এই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পাস করা কয়েক শ শিক্ষার্থীর সনদ ও বিভিন্ন শিক্ষা সরঞ্জাম পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। এবারের অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে স্কুলের ৭৭ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ৭৫ জনের প্রবেশপত্র বিতরণ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। তবে ওই দিন উপস্থিত থাকতে না পারায় দুজনের প্রবেশপত্র রক্ষিত ছিল স্কুলে। অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে তাও পুড়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার সকালে আনন্দঘন পরিবেশে ওই স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় জানানো হয়েছে। অথচ শুক্রবার সকালে সেই আনন্দ পরিণত হয়েছে বিষাদে। আগুনের ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকার মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এলাকাবাসীর ধারণা, আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা। দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবেই স্কুলে আগুন দিয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, সম্প্রতি স্থানীয় কিছু লোক বিদ্যালয়ের কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছিল। এ ছাড়া কিছু লোক আরেকটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছিল। তাদেরই কেউ হয়তো আগুন লাগিয়ে থাকতে পারে- এমন অভিযোগের কথাও এসেছে সংবাদমাধ্যমে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, খুবই ন্যক্কারজনক কাজ করেছে তারা। এ অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য।

কুন্দেরপাড়া গাইবান্ধা সদর উপজেলার অন্তর্গত হলেও  এটি দুর্গম চর এলাকা। আশপাশে কোনো স্কুল নেই। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা এ স্কুলে অবহেলিত এলাকার ছেলেমেয়েরা লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছিল। বর্তমানে স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০০। এই গণ-উন্নয়ন একাডেমির মতো আরো অনেক স্কুল সরকারের শিক্ষা কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে। চরাঞ্চলের একটি স্কুল থেকে ৭৭ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে জেনে মনটা ভালো হয়ে যায়। কিন্তু সেই স্কুলেই যদি আগুন দেওয়া হয় তা হলে তাদের কি মানুষ বলা যায়? সভ্য সমাজে এটি অকল্পনীয়।

প্রত্যন্ত এলাকার এই স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এই স্কুল পুড়িয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে এলাকার মানুষের শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছে। আগুন কীভাবে লেগেছে, তা জানতে সুষ্ঠু তদন্ত করা হোক। যে বা যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে দুষ্কৃতকারীরা আরো বড় ধরনের অপরাধ ঘটাতে পারে।

জাতির শিক্ষার প্রসারে যারা বাধার সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে সমাজের বিকাশ মারাত্মক ব্যাহত হবে। আর স্কুলটি দ্রুত মেরামত করে এলাকার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করার উদ্যোগও নেওয়া প্রয়োজন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৭/আলী নওশের/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়