ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আমাদের নতুন করে পথ দেখায়

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ১ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমাদের নতুন করে পথ দেখায়

১ মার্চ। বাঙালি জাতির কাছে এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ উদ্গীরণকারী ও রক্তঝরা মাস মার্চ। দেশের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় এই মার্চেই। একাত্তরে গোটা মার্চ মাসই ছিল বেশ ঘটনাবহুল। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার অধিকার অর্জন, ’৬৬-এর ছয় দফা এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর দেশ যে স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলনের পথে এগোচ্ছিল তা স্পষ্ট হয় এই মার্চেই।

এই মাসেই বাঙালি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। উত্তাল একাত্তরে মার্চ মাস জুড়ে বাঙালির চোখে ছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। ’৭১ সালে আজকের এই দিনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ৩ মার্চের গণপরিষদের সাধারণ অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। মুহূর্তে গর্জে উঠে পুরো দেশ। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের দাবির মুখে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ ও ৩ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানে সর্বাত্মক হরতাল এবং ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জনসভার ঘোষণা দেন।

রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক ভাষণে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই বঙ্গবন্ধু যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বললেন। তাঁর বজ্রকণ্ঠে শত্রুর মোকাবেলা করার নির্দেশও ঘোষিত হয়।

এই মাসের ২৫ মার্চ কাল রাতে পাক হানাদার বাহিনী বিশ্ব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম গণহত্যা শুরু করে। দীর্ঘদিন পাকিস্তানের শোষণ, নির্যাতন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে জাতি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ হয়ে ছিল। দেশের তরুণ-তরুণী, আবালবৃদ্ধবনিতা ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য যার যার মতো করে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তৎকালীন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে।

এরপর ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে ভারি অস্ত্র, কামান নিয়ে অপারেশন সার্চলাইটের নামে এ দেশের ছাত্র, জনতাসহ নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্মম হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী। রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে নারকীয় তাণ্ডব চালায়। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তার আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে গোটা জাতি। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে অসীম ত্যাগ, অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রম আর ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

অত্যাচার, নিপীড়ন আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্মারক মাস হিসেবে মার্চ প্রতিবারই আমাদের নতুন করে পথ দেখায়। তবে অপ রাজনীতি আর একাত্তরের পরাজিত শত্রুদের পুনরুত্থানের কারণে দেশে আজও সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদের কালো ছায়ার বিস্তার ঘটছে। এই অপশক্তিকে রুখে দিয়ে তাদের বাংলার মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেশকে সত্যিকার সোনার বাংলা হিসেবে এগিয়ে নিতে হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ মার্চ ২০১৭/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়