ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণস্থল সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২০, ৭ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণস্থল সংরক্ষণের উদ্যোগ নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : উচ্চ আদালতের রায়ের পরও তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণর দেয়ার স্থানটি চিহ্নিত করতে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যে স্থানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন, সেই স্থানটি চিহ্নিত করে সংরক্ষিত  করা হয়নি। উদ্যানের ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ ভাষণ দিয়েছিলেন তা নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে অজানা। কারণ, সেই স্থানটি চিহ্নিত করা নেই। অথচ ওই স্থানটিসহ উদ্যানের মোট ৭টি ঐতিহাসিক স্থান চিহ্নিত ও সংরক্ষণ করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত।

স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো সংরক্ষণের নির্দেশনা চেয়ে ২০০৯ সালের ২৫ জুন উচ্চ আদালতে রিট করেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহ ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। ওই বছরের ৮ জুলাই বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ও বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদের সমন্বয়ে গঠিত আদালত এ বিষয়ে রায় দেন এবং ২০১০ সালের জুলাই মাসে লিখিত রায় প্রকাশিত হয়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই ৭টি স্থান হলো ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তনের প্রথম গর্ভনর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দেওয়া ভাষণের স্থান, ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণের স্থান, ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ দল থেকে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদে নির্বাচিত সদস্যগগণের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের স্থান। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের স্থান, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের স্থান, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেয়ার স্থান এবং ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণ দেয়ার স্থান।

উল্লেখিত ঐতিহাসিক স্থানগুলো চিহ্নিত করার জন্য সরকারকে এক বা একাধিক কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়।  রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে অংশে আত্মসমর্পণ করেছে, সেই অংশকে ‘স্বাধীনতা উদ্যান’ বা ‘লিবার্টি স্কয়ার’ নামকরণ করার জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হল।’

এছাড়া, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সকল স্থাপনা অপসারণ এবং চিহ্নিত স্থানগুলোতে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও বিবেচনাপ্রসূত দৃষ্টিনন্দন ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ ও সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়। রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জন্ম এবং একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর সে জাতি জন্মের স্বীকৃতি লাভ করেছে। যে স্থানে এই দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা রচিত হয়েছে, সেই স্থানে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে উপলব্ধি করতে পারে যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এখানে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। যদি কেউ বাঙালি হয়ে থাকে, তাহলে ঐ স্থানে দাঁড়িয়ে তার প্রাণ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠবে। এছাড়া চোখ বন্ধ করে চিন্তা করবে এখানে জেনারেল এ কে নিয়াজী তার বাহিনীসহ বাঙালি জাতির সম্মুখে আত্মসমর্পণ করেছে।

রিটকারী সংগঠনের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘হাইকোর্ট ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকারকে সংরক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য এখন পর্যন্ত কোন কমিটি গঠন করেছে কি না, আমার জানা নেই। সরকার আদালতের রায়ের পরও কেন চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিচ্ছে না; তা বোধগম্য নয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল সরকারে থাকার পরও কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তা আমার কাছে খুবই আশ্চার্য্যজনক লাগে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ কোন সরকার নেয়নি। উল্টো পরিকল্পনাবিহীন গাছপালা লাগিয়ে উদ্যানটিকে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। এর অংশ হিসেবে ১৯৭৯ সালে উদ্যানের ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয় শিশুপার্ক। পরবর্তীকালে পার্কের ভেতরে ঐতিহাসিক স্থান চিহ্নিত থাকার বিষয়টি চাপা পড়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণস্থল, হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ স্থল ও ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণস্থল পড়েছে শিশুপার্কের ভেতরে। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী  আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিভিন্ন সময়ে পার্কের ভেতরে স্থানগুলোকে চিহ্নিত করার উদ্যোগের কথা বলেন। কিন্তু আদৌ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেই।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এটি স্পষ্টতই আদালত অবমাননা। গোটা জাতির জন্যও লজ্জাজনক।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৭/নৃপেন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়