ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া নিয়ে বৈঠক ১৭ এপ্রিল

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকারি কোম্পানির শেয়ার ছাড়া নিয়ে বৈঠক ১৭ এপ্রিল

কেএমএ হাসনাত: রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার সব উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর  এবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন। এ উপলক্ষে ১৭ এপ্রিল তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়ে ২০০৮ সালের এপ্রিলে প্রথম উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সরকারি শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়ে তিন দফা নির্দেশনা দেন। এর মধ্যে ২০১০ সালের জুনে এবং ডিসেম্বরে দুই দফায় এবং পরে ২০১১ সালের মার্চে সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেন তিনি। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি কেম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার নির্দেশনা দেন। কিন্তু প্রতিবারই নানা অজুহাতে কোম্পানিগুলো তাদের শেয়ার বাজারে ছাড়ার বিষয়ে নিরুত্তাপ থাকে।

অর্থমন্ত্রী গত বছর নভেম্বরে এক নির্দেশনায় কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ অবস্থার ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে মার্চ মাসে বড় পরিসরে একটি বৈঠক করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। নানা ব্যস্ততায় নির্দিষ্ট সময়ে বৈঠকটি আর হয়নি। ১৭ এপ্রিল তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসবেন। এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রীয় মালিকনাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়তে বেশ কয়েকবার নির্দেশনাসহ সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলা নানা কারণ দেখিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেয়ার বাজারে ছাড়তে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবার তিনি নিজেই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী মার্চ মাসে এ বিষয়ে একটি বৈঠক আহ্বান করতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

সূত্র জানায়, বুধবারের বৈঠকে দেখা হবে কী কারণে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। এর পেছনে কারা দায়ী তাও এ সভায় চিহ্নিত করা হবে। একই সঙ্গে সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার জন্য একটি চূড়ান্ত সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হবে।

সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিন ঝুলে আছে। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে, অসংখ্যবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এসব কোম্পানির বেশিরভাগই তাদের শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়েনি। এ ক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয়েছে, কোম্পানি লোকসানে আছে, নতুবা সম্পদের মূল্যায়ন বা পুনর্মূল্যায়ন করা যায়নি। আবার কখনো বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার ছাড়ার বিষয়ে অনুমোদন দেয়নি বা এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে ভালো সিকিউরিটিজের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ার অফলোড সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন অগ্রগতির পর্যালোচনার জন্য গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে একটি সভায় হয়েছিল। এই সভার কার্যবিবরণী অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠনো হয়। এতে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিষয় নিয়ে আগামী বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে আমি একটি বৈঠক করতে চাই। সেই উদ্দেশ্যে যেসব কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার কথা (যেগুলো স্থগিত রাখা হয়েছে তা ছাড়া) তাদের সম্পর্কে প্রত্যেকের কী কার্যক্রম সে সম্বন্ধে প্রতিবেদন পাঠাতে বলুন। এই প্রতিবেদন ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে পাঠাতে বলতে হবে।’অর্থমন্ত্রীর সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ এপ্রিল বৈঠকটি হবে।

সূত্র জানায়, বছরের পর বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক কোম্পানির শেয়ার বাজারে এসেছে। অনেকগুলো আবার আনা সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে কর্মরত এক শ্রেণির আমলার ইচ্ছের অভাবকে দায়ী করা যায়। এ বিষয় এখন অর্থমন্ত্রী নিজে তত্ত্বাবধান করবেন বলে মনে হচ্ছে। তার নির্দেশে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, এর আগে এক বৈঠকে সরকারি শেয়ার অফলোড না করার কারণ উল্লেখ করে আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বৈঠকে অবহিত করেন, পুঁজিবাজারে সরাসরি (ডিরেক্টলিস্টিং) তালিকাভুক্তি হলে বিক্রিত শেয়ারের অর্থ কোম্পানির তহবিলে না এসে সরাসরি কোষাগারে জমা হয়, ফলে কোম্পানিগুলো এ পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। অপরদিকে সরকারি বেশিরভাগ কোম্পানিই লোকসানি প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে আইপিওর মাধ্যমেও পুঁজিবাজারে আসতে পারে না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ এপ্রিল ২০১৭/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়