ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বজ্রপাতে প্রাণহানি : প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০২, ২১ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বজ্রপাতে প্রাণহানি : প্রয়োজন ব্যাপক সচেতনতা

বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বজ্রপাত। আগে দুর্যোগ হিসেবে চিন্তার কারণ ছিল ঝড়-বন্যা। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বজ্রপাত। উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এই দুর্যোগ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একযোগে চার সহস্রাধিক বজ্রপাতের ঘটনা রেকর্ড করেছে। এ তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে কী পরিমাণ বেড়েছে বজ্রপাত। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইটনিং সেফটি’ ইনস্টিটিউটের মতে প্রতিবছর সারাবিশ্বে বজ্রপাতে যত মৃত্যু হয় তার এক-চতুর্থাংশ ঘটে বাংলাদেশে।

অবিরাম খরা ও তাপপ্রবাহের কারণে ভ্যাপসা গরম বায়ুমণ্ডলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাগর ও ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি এবং পরিবেশ-প্রতিবেশের অব্যাহত দূষণ বজ্রপাত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মার্কিন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী,  জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আগামী ২০ বছরে বর্তমানের তুলনায় বজ্রপাত বাড়বে ৫০ গুণ। বলা হচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বজ্রপাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। তাপমাত্রা যদি এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ে তাহলে বজ্রপাতের হার বাড়ে ১৫ শতাংশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে একবিংশ শতাব্দীর শেষে পৃথিবীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে। ফলে সে অনুযায়ী বজ্রপাতের হারও বেড়ে যাবে অনেক।

বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছর উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এর সঙ্গে ব্যাপক হারে বজ্রপাত যুক্ত হয়ে ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়ছে। দেশে এবার বৈশাখের শুরুতে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। মাঝে মাঝে ঝড়ও হয়েছে।  কিন্তু অনেকের আতঙ্কের কারণ ছিল বজ্রপাত।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বজ্রপাত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে  বেশি ঘটে মে মাসে। গত বছর মে মাসে মাত্র দুদিনে বজ্রপাতে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী বজ্রপাতে গত বছরে ৩৫০ জনের মৃত্যু হয়। বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে হাওরাঞ্চলের নয় জেলায়। আর এ বছরের ২২ এপ্রিল পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী বজ্রপাতে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

দেশে বজ্রপাতে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই মাঠে কাজ করেন। আগে দেখা গেছে সাধারণত তাল, নারিকেল ইত্যাদি গাছে বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটছে। কিন্তু বর্তমানে এ ধরনের উঁচু গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এ কারণে এখন সরাসরি মানুষের ওপরে বজ্রপাত হচ্ছে এবং প্রাণহানি বাড়ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন, অব্যাহতভাবে বড় বড় বৃক্ষ নিধনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত গাছ লাগানো হচ্ছে না। তাই ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে তাতে এর তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে বৃক্ষনিধন রোধ, উঁচু ভবনে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা, বসতবাড়ির চারপাশে উঁচু গাছ লাগানো, প্রচুর বৃক্ষরোপণ, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে হবে।

সরকার বজ্রপাতে প্রাণহানি ঠেকাতে, বিশেষত হাওরাঞ্চলে, দশ লাখ তালগাছ রোপণের এবং বজ্র-পরিবাহী বিশেষ টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে এর পাশাপাশি ভয়ঙ্কর এই দুর্যোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা এবং মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনতে দরকার সচেতনতা তৈরি। ঝড়-বৃষ্টির সময় খোলা জায়গায় না থাকা, উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার, ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা এবং নদী, পুকুর, ডোবা বা জলাশয় থেকে দূরে থাকতে হবে। সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে তথ্য প্রচার করে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মে ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়