ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিশু খুন, নির্যাতন বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৮, ১৩ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশু খুন, নির্যাতন বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন

দেশে একের পর এক শিশু হত্যার ঘটনা ঘটছে যা খুবই উদ্বেগজনক। বিভিন্ন স্থানে শিশু হত্যার পাশাপাশি অপহরণ, ধর্ষণও নির্যাতনের ঘটনাও বাড়ছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত পাঁচ মাসে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটেছে ১৩০টি। এছাড়া ৪৯টি অপহরণ, ২৪৪ ধর্ষণ, নিখোঁজের পর ৩৪ লাশ উদ্ধার এবং  অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়েছে ১৪টি। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি। কেননা এর বাইরে পত্রিকায় আসেনি কিংবা থানায় নথিবদ্ধ হয়নি এমন ঘটনাও প্রচুর।

ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে অতি আপনজনের হাতেই শিশু খুন ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। খোদ রাজধানীতেই মায়ের হাতে! খুন হয়েছে শিশু সন্তান। বাসাবোতে ছয় ও সাত বছরের দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তাদের মায়ের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত মা এখন বিচারের কাঠগড়ায়। তুরাগ এলাকায় তিন শিশুসন্তানসহ রেহেনা পারভিন নামে এক মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

৮ জুনের ওই ঘটনাটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী আর্থিক টানাপড়েনের কারণে ওইপরিবারে অসন্তোষ ছিল এবং শাশুড়ি-ননদের সঙ্গে রেহেনার সম্পর্ক ভাল ছিল না। তবে তিন সন্তানকে মেরে মা আত্মঘাতী হয়েছেন, নাকি কেউ তাদের পরিকল্পিতভাবে মেরেছে তা জানা যায়নি।

একই দিন ঢাকার বাইরে চুয়াডাঙ্গায় একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। মা নিজেই তার প্রতিবন্ধী সন্তানকে হত্যা করেন ঘুমন্ত অবস্থায়। আর সন্তানসহ নদীতে বা রেললাইনে ঝাঁপ দিয়া আত্মাহুতির ঘটনা তো মাঝেমধ্যেই ঘটিতেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, গর্ভধারিণী মা যেখানে সন্তানের জন্য জীবন উত্সর্গ করতে দ্বিধা করেন না, সেখানে মা-ই কেন নিজ সন্তানের ঘাতক কিংবা সন্তানসহ বেছে নিচ্ছেন আত্মহত্যার পথ? একের পর এক কেন এসব নৃশংস, নির্মম ঘটনা ঘটছে? এসব ঘটনা কি মানবিক অবক্ষয়ের ঘৃণ্য চিত্র নাকি অন্য কোনো বিষয় এখানে কাজ করছে।

যেভাবে আমাদের শিশুরা পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি রাজনৈতিক বিরোধের শিকারে পরিণত হচ্ছে তা খুবই উদ্বেগের। আমাদের শিশুরা যদি অকালেই ঝড়ে যায়, তাদের বিকাশের পথ যদি রুদ্ধ হয়, বেড়ে উঠার সুন্দর পরিবেশ যদি না পায়, তারা যদি বিভিন্নভাবে শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

এক সময়ে যৌথ পরিবার ছিল শিশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয়। বর্তমানে যৌথ পরিবার নেই বললেই চলে। আর এখন শুধু বাইরে নয়, নিজ গৃহেও শিশু নিরাপদ নয়। বাবা-মা ও স্বজনের হাতে নির্যাতিত, নিগৃহীত হচ্ছে তারা। বাবা-মায়ের যে হাতে শিশুদের আদর পাওয়ার কথা, সে হাত কেড়ে নিচ্ছে শিশুর প্রাণ। আবার দেখা গেছে প্রতিবেশিদের মধ্যে বিরোধের কারণে শিশুকে অপহরণ বা হত্যার ঘটনা ঘটছে।

একজন মমতাময়ী মা কেন নিজ সন্তানের ঘাতক হচ্ছেন, কেনই-বা দায়িত্বশীল সমাজ ক্রমেই শিশুদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠছে- আমাদের অবশ্যই এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। শিশু খুন, অপহরণ, নির্যাতনে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করতে হবে। এজন্য কর্তৃপক্ষের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের জন্য সুন্দর পরিবেশ গড়ে তোলা আমাদের সবার দায়িত্ব। শিশুদের মানবিক গুণসম্পন্ন, সুনাগরিক ও দায়িত্বশীল হিসেবে বেড়ে উঠার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে আমাদের।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জুন ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়