যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত
দ্রুত সড়ক-রেলপথ সংস্কার করুন
আর মাত্র কয়েকদিন পরে ঈদুল আজহা। আপনজনের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা ছাড়বেন অনেকে। কিন্তু এবার বন্যার কারণে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। ঘরমুখো মানুষকে বড় ধরনের বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বন্যায় দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা প্লাবিত। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এখন পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এ মাসের শেষ দিকে উজানে বৃষ্টিপাত বাড়লে এবং সেসঙ্গে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতিরি ফের অবনতির শঙ্কা রয়েছে।
চলমান বন্যায় দেশের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। অনেক স্থানেই সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্যায় উত্তরাঞ্চলের মহাসড়ক। বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছে উত্তর, মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল। যোগাযোগব্যবস্থার বেশি ক্ষতি হয়েছে দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, জামালপুর, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায়। বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে বাস অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এছাড়া ঢাকা-দিনাজপুর রুটে ট্রেন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। বন্যার কারণে ঈদের আগে ট্রেন চলাচল শুরু হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ঈদে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে মানুষ। শুধু রাজধানী থেকে নয় দেশের অন্যত্রও ঈদ উপলক্ষে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মানুষের যাতায়াত বাড়ে। আবার উৎসব শেষে সবাইকে স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর সংখ্যক লোক যাতায়াত করেন এ সময়। কিন্তু যাতায়াতের পথ যদি স্বস্তিদায়ক না হয় তা হলে ঈদের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটে।
সাধারণতঃ ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ভিড় সামাল দিতে বাস কম্পানিসমূহ তাদের ট্রিপের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়, চালু হয় বিশেষ সার্ভিস। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের ১৭ জেলায় বাসের ট্রিপ কমানো হয়েছে। অবশ্য এর কারণও রয়েছে। বাস মালিকরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যেতে সময় লাগে ছয় থেকে আট ঘণ্টা। কিন্তু এবার বন্যায় মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর কোনো কোনো জেলায় যেতে এখন ১০/১২ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। পরিবহন মালিকরা বলছেন ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, রাস্তায় গাড়ির চাপও বাড়বে। অবস্থার উন্নতি না হলে ঈদে সড়ক যোগাযোগ স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে না পারলে এবারের ঈদ যাত্রা হবে খুবই নিরানন্দের। দ্রুত রেলপথ ও সড়ক-মহাসড়ক মেরামত করা না গেলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি সচল করার জন্য সংশ্লিষ্টদের অবিলম্বে কাজ শুরু করতে হবে। যাত্রা পথের বিড়ম্বনা যেন মানুষের ঈদের আনন্দ ম্লান করে না দেয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সড়ক মেরামতের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন।
আমাদের প্রত্যাশা দ্রুত এই সংস্কারের কাজ শেষ হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক ও রেলপথ সংস্কার করে মানুষের ঈদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঘরে ফেরা মানুষের ঈদের যাত্রা নিরাপদ করতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ আগস্ট ২০১৭/আলী নওশের
রাইজিংবিডি.কম