ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আইনের আওতায় আনতে হবে মদদদাতাদের

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আইনের আওতায় আনতে হবে মদদদাতাদের

রাজধানীতে আবারো জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলল। এবার আস্তানা পাওয়া গেল মিরপুরের দারুস সালাম রোডে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সোমবার রাতে দারুস সালাম রোডে ছয়তলা একটি বাড়ি ঘিরে ফেলে র‌্যাব। সেখানে জঙ্গি আব্দুল্লাহ ও তার সঙ্গিদের অবস্থানের কথা জানতে পেরে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করবে এমন আভাস দিলে অভিযান স্থগিত রাখে র‌্যাব। কিন্তু মঙ্গলবারর গভীর রাতে ভারী বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে ওই ভবন। বুধবার সেখানে তল্লাশি করে র‌্যাব সাতটি লাশ পাওয়ার কথা জানায়। র‌্যাব মহাপরিচালক জানিয়েছেন লাশগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে তা চেনার উপায় নেই। বিস্ফোরণের ঘটনায় র‌্যাবের চার সদস্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হন বলেও জানা যায়।

মিরপুরে শক্তিশালী রাসায়নিকের বিস্ফোরণ এবং অন্যদিকে টাঙ্গাইলে ড্রোন উদ্ধার হওয়ায় স্পষ্ট যে, জঙ্গিরা দিন দিন মরিয়া হয়ে উঠছে। সোমবার টাঙ্গাইল থেকে 'জেএমবির জঙ্গি' দুই ভাইকে ড্রোন ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সোমবার মধ্যরাতে দারুস সালাম রোডের ওই বাড়িটি ঘিরে এই অভিযান শুরু করে র‌্যাব। ভবনের পঞ্চম তলায় আবদুল্লাহ নামের এক 'দুর্ধর্র্ষ জঙ্গি', তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ মোট সাতজন অবস্থানের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন র‌্যাবের  ডিজি।

আস্তানাটি ছিল জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির। যার নেতৃত্বে ছিলেন আবদুল্লাহ। আস্তানা থেকে শক্তিশালী ইমপ্রোভাইজড অ্যাক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। ফলে জঙ্গিদের হাতে যে মারাত্মক সব অস্ত্র-শস্ত্র রয়েছে এ থেকে তা পরিষ্কার। র‌্যাব আরো জানিয়েছে, জেএমবির একটি অংশের প্রধান সারোয়ার জাহান, তামিম চৌধুরী, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজসহ অনেকেই আবদুল্লাহর এ আস্তানায় রাত কাটিয়েছে। এখানে এসে জঙ্গিরা গোপনে প্রশিক্ষণও নিত।

গুলশানের হলি আর্টিজানের ভয়াবহ ঘটনার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলছে। হলি আর্টিজানের ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীও বেশ তৎপর হয়ে ওঠে। ফলে জঙ্গি দমনে বেশ সাফল্য এসেছে বলা যায়। তবে জঙ্গিরাও যে থেমে নেই, তা দারুস সালাম রোডের ঘটনা থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। যেটি লক্ষণীয় তা হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় জঙ্গিরা ব্যাকফুটে গেলেও তাদের আত্মঘাতী হয়ে ওঠার ঘটনা বাড়ছে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা শিথিল হলে এরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। সুতরাং জঙ্গি দমনে যাতে শৈথিল্য না আসে সে ব্যাপারে আরও সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। এ দেশের নাগরিকরাও শান্তিকামী। আমাদের এই দেশ জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হবে, তা কখনো কাম্য হতে পারে না। আমরা চাই, দেশ থেকে জঙ্গিবাদ চিরতরে নির্মূল হোক। জঙ্গি দমনের পাশাপাশি এদের হাতে কীভাবে অর্থ, অস্ত্র, বোমা, বিস্ফোরক আসছে, কারা রয়েছে এর পেছনে তা উদ্ঘাটন করা জরুরি। এসব উদ্ঘাটন করা গেলে জঙ্গি তৎপরতা বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা মনে করি জঙ্গি আস্তানা খুঁজে বের করার পাশাপাশি আইনের আওতায় আনতে হবে এদের মদদদাতাদেরও। দেশ ও জাতিকে সুরক্ষা দিতে হলে জঙ্গিদের মূলোৎপাটন করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়